চলচ্চিত্র শিল্পীদের স্বার্থরক্ষায় ১৯৮৪ সালে গঠিত হয়েছিলো বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। প্রথমবার সমিতির সভাপতি হওয়ার গৌরব অর্জন করেন প্রয়াত নায়করাজ রাজ্জাক। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন বরেণ্য অভিনেতা আহমেদ শরীফ।
Advertisement
এরপর ৩৫ বছরের ইতিহাসে ১৫টি মেয়াদে সাতজন অভিনেতা সভাপতির পদ অলংকৃত করেছেন। রাজ্জাকের পর পর্যায়ক্রমে সভাপতি হন খলিল উল্যাহ খান টানা দুবার, আহমেদ শরীফ টানা দুবার, আলমগীর, আহমেদ শরীফ, মাহমুদ কলি টানা দুবার, আহমেদ শরীফ, মিজু আহমেদ টানা দুবার, শাকিব খান টানা দুবার এবং একবার মিশা সওদাগর।
আবারও দোরগোড়ায় শিল্পী সমিতির নির্বাচন। আসছে ২৫ অক্টোবর (শুক্রবার) এফডিসিতেই হবে শিল্পীদের ভোটগ্রহণ। যেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নন্দিত অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন।
নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের আমেজে জমে উঠেছে এফডিসি। এবারও সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন অভিনেতা মিশা সওদাগর। গত মেয়াদে তার কার্যক্রম ভালো-মন্দে বেশ আশা জাগানিয়া।
Advertisement
তবে সমিতির সভাপতি পদে প্রথমবার নারী প্রার্থী হয়ে আলোচনার সবটুকু নিজের করে নিয়েছেন ঢাকাই সিনেমার প্রিয়দর্শিনী মৌসুমী। দেশের কোটি দর্শকের কাছে যেমন শিল্পীদের কাছেও তেমনি তুমুল জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা মৌসুমী। তার প্রমাণ মিলেছে গত কয়েকটি মেয়াদে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে তার জয় পাওয়ায়। সর্বোচ্চ ভোটে জয়ী হওয়ার রেকর্ডও আছে তার দখলে।
এতদিন তিনি নির্বাচন করেছেন কার্যনির্বাহী সদস্য পদে। এই প্রথমবার পোর্টফোলিওতে নাম লেখালেন তিনি। সেটাও সভাপতি হিসেবে। এরই মধ্যে তাকে ঘিরে আগ্রহ লক্ষ করা গেছে শিল্পী সমিতির সদস্যদের মাঝে।
২০১৭-১৯ মেয়াদের নির্বাচনে মিশা সওদাগর বেশ সহজভাবেই তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার তেমনটি হবে না বলেই মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, প্রার্থী হিসেবে নায়িকা মৌসুমী সবসময়ই হেভিওয়েট। তাকে সম্মান করেন শিল্পীরা। সিনিয়র শিল্পীদেরও প্রিয় মৌসুমী।
প্রতিদ্বন্দ্বী মিশা সওদাগরও নায়িকা মৌসুমীর গুণের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নির্বাচন চলাকালীন নানা সময়ে নির্বাচনে আসার জন্য মৌসুমীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি। এমন একজন প্রার্থীর বিপক্ষে জয়ের জন্য মিশাকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে হবে এবার।
Advertisement
তাছাড়া গত মেয়াদে কমিটির কয়েকজন সদস্য শিল্পী সমিতির ফান্ডের হিসাবে গড়মিলের অভিযোগ তোলায় সমালোচনার মুখে রয়েছেন মিশা। পাশাপাশি ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে তার নেতৃত্বের বিপক্ষে। তাই মৌসুমী তো বটেই, এই নেতিবাচক বিষয়গুলোও নির্বাচনে মিশার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
সেদিক থেকে বেশ নির্ভার মৌসুমী। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকেই ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছেন। করছেন নানা রকম প্রচারণা। শিল্পীরাও তাকে আশ্বাস দিচ্ছেন নির্বাচিত করবেন বলে। এ প্রসঙ্গে মৌসুমী বলেন, ‘শিল্পীদের প্রথম নারী সভাপতি হওয়ার যে ইতিহাসের কথা সবাই বলছে সেটা আমি করতে পারবো কী না জানি না; তবে সবার ভালোবাসা ও সমর্থনে আমি মুগ্ধ।
আমার বিশ্বাস ভোটের রায়ে সঠিক নেতৃত্ব বেছে নিতে ভুল করবেন না আমার প্রিয় সহকর্মীরা। নিজের যা কিছু অভিজ্ঞতা একজন চলচ্চিত্র শিল্পী হিসেবে তা কাজে লাগিয়ে চেষ্টা করবো সমিতির জন্য কিছু করার। আমি এখন ২৫ তারিখের অপেক্ষায়।’
মৌসুমীর মতো চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদস্য তথা গোটা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিও ২৫ তারিখের অপেক্ষায়। সবাই নজর রাখবেন সেদিন মৌসুমী নিজের নামটি ইতিহাসে নিয়ে যেতে পারেন কী না তা দেখার জন্য। যে ইতিহাস থেকে একটা নতুন শুরু হবে। নারীশিল্পীদের জন্য হবে প্রেরণার এক দুয়ার উন্মোচনের।
এলএ/এমকেএইচ