জাগো জবস

সার্টিফিকেট থাকলেই সফল হওয়া যায় না

নূরে এ. খান মানবিকতা আর মানবসম্পদ গড়ায় নিয়োজিত এক প্রাণ। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন এইচআর ক্লাব বাংলাদেশ লিমিেটেড এবং বাংলাদেশ সোসাইটি ফর অ্যাপারেল এইচআর প্রফেশনালস (বিশার্প)। বর্তমানে বিশার্পের প্রেসিডেন্ট এবং এইচআর ক্লাবের মহাসচিব হিসেবে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পেশাগত জীবনে এনভয় গ্রুপের হেড অব ফ্যাক্টরি হিসেবে কর্মরত আছেন। সম্প্রতি তার উদ্যোগ ও ক্যারিয়ার নিয়ে জাগো নিউজের মুখোমুখি হয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বেনজির আবরার—

Advertisement

প্রথমেই আপনার ক্যারিয়ার সম্পর্কে বলুন— নূরে এ. খান: আমি ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতাম সিএ পড়বো। বড় হয়ে যা হয়ে গেলাম, তা হলো—শিক্ষক, সমাজকর্মী এবং সবচেয়ে বড় ব্যাপারটি হলো ‘মানবসম্পদ পেশাজীবী’। আমি আমার পেশাগত জীবনের সুদীর্ঘ সময়ে বাংলালিংক, সিটি ব্যাংক, বৈশাখী টেলিভিশন, এপোলো হসপিটাল, শান্তা গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, সোনিয়া গ্রুপে কাজ করেছি। এরপর এনভয় গ্রুপে যোগদান করি। এখানেই প্রায় দশ বছর হলো।

আপনার পরিবার সম্পর্কে বলুন— নূরে এ. খান: আমার জন্ম ১৬ ডিসেম্বর, ঢাকার বিক্রমপুরে। বেড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকার ইন্দ্রিরা রোডে। কলেজ জীবন ঢাকা সিটি কলেজে। তারপর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ বিভাগ থেকে বিবিএ শুরু করে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ করি। একইভাবে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শুরু করে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শেষ করি। বিবাহিত জীবনে স্ত্রী ও দুই ছেলের বাবা। বসবাস করছি নিজ বাড়ি উত্তরায়।

বিশার্প প্রতিষ্ঠার গল্প বলুন—নূরে এ. খান: আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশ রুচিশীল এবং সব বিষয়েই অন্যদের থেকে ক্ষাণিকটা আলাদাই বটে। সমসাময়িক কোন সংগঠনই আমাকে আকৃষ্ট করেনি। কিন্তু দেশের একজন সিনিয়র পেশাজীবী হিসেবে মানবসম্পদ বিভাগের নানাবিধ দিক নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। নেতৃত্ব এবং সাংগঠনিক বিষয়বস্তুসমূহের মধ্যে সর্বত্র একইরকম চালচিত্র লক্ষণীয় ছিল এবং মানবকল্যাণমুুখী কোন কিছু আমার চোখে পড়েনি। এমনকি এখনো না। অনেক সংগঠন রয়েছে, সংগঠক রয়েছে বর্তমানে। তাদের বলছি, ভুল মানুষের সাথে কিংবা ভুল পথে একটি মুহূর্তও ব্যয় করবেন না। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর দেখবেন আপনার সংগ্রহে কিছুই নেই। অথচ সময় ব্যয় করেছেন অঢেল। যাই হোক, ২০১০ সাল থেকে চিন্তা করেছিলাম একটি মানবিক, মানববান্ধব সংগঠন প্রতিষ্ঠা করবো। যেমন চিন্তা, তেমন কাজ। শুরুটা হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর দেশসেরা প্রায় ৫০ জন মানবসম্পদ পেশাজীবী নিয়ে। যা এখন ৫০০ এর বেশি মানবসম্পদ পেশাজীবীদের সুসংগঠিত, সুসজ্জিত পরিবার এবং দেশের অন্যতম বৃহৎ পেশাজীবী সংগঠন। আমরা আমাদের সদস্যদের পেশাগত দক্ষতার উন্নয়নে ফ্রি ট্রেনিং, বেস্ট প্র্যাকটিসিং অ্যাওয়ার্ড, জব প্লেসমেন্ট নিয়ে প্রতিষ্ঠালব্ধ থেকে কাজ করছি। সদস্যদের ভালো সময়ে, খারাপ সময়ে পাশে থেকে তাদেরকে মোটিভেট করছি। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি আমাদের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মৃত্যুতে তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। ভবিষ্যতেও আমাদের অনেক পজেটিভ কার্যক্রম থাকবে।

Advertisement

এইচআর ক্লাব আপনার ব্রেইনচাইল্ড। আপনার প্রতিষ্ঠিত প্রথম ক্লাবটি নিয়ে কিছু বলুন— নূরে এ. খান: দেখুন, বাংলাদেশের কালচার এখনো অনেক তরুণ। স্বাধীনতার ৫০ ছুঁই ছুঁই। এখনো আমরা শিখছি, ভাঙছি, গড়ছি এবং এর মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। তারই ধারাবাহিতকতায় বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম এবং একমাত্র এইচআর ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। এই ক্লাব প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্য হলো ক্লাব ফরমেটে এইচআর পেশাজীবীদের একটি রিক্রিয়েশনাল প্লাটফর্ম তৈরি করা, যেখানে একজন পেশাজীবী বিনোদনের মাধ্যমে নিজেকে উজ্জীবিত করতে পারে। তাছাড়া প্রতিনিয়ত দেশের সকল সেক্টরের পেশাজীবীদের সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি ও মেইনটেন করতে পারে। ক্লাব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার নিমিত্তে এরই মধ্যে আমরা নিকুঞ্জে স্থায়ী অফিস নিয়েছি এবং কোম্পানি ফরমেটে রেজিস্ট্রেশনের কাজও সম্পন্ন করেছি।

আপনি শিক্ষকতাও করছেন দীর্ঘদিন। একজন পেশাজীবী হিসেবে বর্তমান মানবসম্পদ পেশাজীবীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন—নূরে এ. খান: যথার্থ বলেছেন। দীর্ঘ ১৩ বছর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবসম্পদ বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছি। আর বর্তমান মানবসম্পদ পেশাজীবীদের উদ্দেশ্যে বলবো, অনুগ্রহপূর্বক নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুনদের জন্য একটি অংশ বরাদ্দ রাখুন এবং এরূপ নিয়োগে পুথিগত শিক্ষায় প্রাপ্ত সার্টিফিকেটের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে কমিউনিকেশন স্কিল, প্রেজেন্টেশন ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দিন। তাছাড়া চাকুরি প্রয়োজন এমন কেউ অথবা শিক্ষানবিশকালীন যাকে বা যাদের খুব পরিশ্রমী দেখবেন, এমন লোকজনকে গড়ে নিন। ফলে আপনি এবং দেশ সমানভাবে উপকৃত হবে। কর্মী তৈরি করার সময় কাজে চাপ প্রয়োগ করুন। কিন্তু মানসিক চাপ দেবেন না। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন কাজে তাদের সম্পৃক্ত রাখবেন। যথাসম্ভব তাদের ফিডব্যাক দেওয়ার চেষ্টা করবেন, যাতে তারা পেশাগত উন্নতির সুযোগ পায়। যে বিষয়গুলোতে গুরুত্বারোপ করবেন সেগুলো হলো- Office Etiquette & Manner, Workplace Motivation, Friendly Environment, Social Awareness এবং Fraternity and Brotherhood। তবে প্রতিটি বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকবে, যাতে প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়।

তরুন পেশাজীবীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন— নূরে এ. খান: তরুন প্রজন্ম মানেই বাংলাদেশ। শুধু শিক্ষা আর সার্টিফিকেট দিয়ে মনোজগৎ সংকীর্ণ করো না। নামিদামি ডিগ্রি এবং সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট গ্রহণ করলেই তুমি পেশাগত জীবনে সফল হবে, সেটা অনিশ্চিত। এই ১৮ কোটি মানুষের দেশে যেখানে সুযোগ খুবই কম, সেখানে নিজেকে মেলে ধরতে না পারলে টিকে থাকা কঠিন। অতএব কাজে আন্তরিকতা বাড়াতে হবে, মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে সুযোগ তেরি করতে হবে। প্রতিটি সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। পজেটিভ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। অর্থের অপচয় করে দেশের বাইরে গিয়ে কিছু করার চেয়ে নিজ দেশে ‘সেল্ফ ড্রিভেন’ হতে হবে!

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন—নূরে এ. খান: আমার একটাই কথা, শিক্ষিত হতে হবে পরিপূর্ণ শিক্ষায়। আমার বেশকিছু পরিকল্পনা আছে। যেহেতু সেক্টরাল এইচআর কমিউনিটির লিড দিচ্ছি, অনেক বেশি ইয়ুথ এম্পাওয়ারমেন্ট প্রতিষ্ঠাই আমার লক্ষ্য। আরও একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। আর তা হলো- আমার দেশের পাসপোর্টটি এমন একটি মানে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সবাইকে নিয়ে এক সাথে কাজ করতে চাই, যাতে সারা পৃথিবীর বিমানবন্দরগুলো আমার পাসপোর্টটিকে সম্মানের চোখে দেখে।

Advertisement

এসইউ/পিআর