রান্নায় ব্যবহৃত বহুল সমাদৃত উপাদান হলুদ। এই উপাদানকে চকচকে করতে ব্যবহার করা হচ্ছে রাসায়নিক দ্রব্য ‘সীসা’, যা দীর্ঘদিন খেলে ক্যান্সারসহ হতে পারে নানা ধরনের রোগ। তারপরও বিষাক্ত সীসাযুক্ত হলুদ বিক্রি হচ্ছে রাজধানীতে।
Advertisement
মঙ্গলবার রাজধানীর পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জ শ্যামবাজারে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে ভয়াবহ এ প্রমাণ মিলেছে। এ অপরাধে কুমিল্লা বাণিজ্যালয় এবং ভাই ভাই ট্রেডার্স নামের দুটি প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ টাকা করে মোট আট লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন বিএফএসএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শম্পা কুন্ডু ও এস এম শান্তনু চৌধুরী। অভিযানকালে নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মোহা. কামরুল হাসান ও মীর মাসুম আলী, আইসিডিডিআরবির রিসার্চ অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো. তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম শান্তনু জানান, হলুদ চকচকে করতে রাসায়নিক দ্রব্য সীসা ব্যবহার করা হচ্ছে, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। আজকে ফরাশগঞ্জ শ্যামবাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে কুমিল্লা বাণিজ্যালয়ে ৩৫০ কেজি এবং ভাই ভাই ট্রেডার্সে ৫৫০ কেজি সীসাযুক্ত হলুদ পাওয়া যায়। এ অপরাধে প্রতিষ্ঠান দুটির প্রত্যেককে চার লাখ টাকা করে মোট আট লাখ অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। এ সময় সীসাযুক্ত হলুদ জব্দ করে তা ধংস করা হয়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠান দুটিকে ভবিষ্যতে নিরাপদ খাদ্যবিরোধী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
Advertisement
এদিকে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ আইসিডিডিআরবি ও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা রান্নায় ব্যবহার করা হলুদে ক্ষতিকর মাত্রায় সীসা পেয়েছেন। হলুদকে চকচকে করতে ব্যবহার করা হচ্ছে এই রাসায়নিক। সীসাযুক্ত হলুদ দীর্ঘ সময় খেলে ক্যান্সারসহ নানা রোগ হতে পারে। এমনকি গর্ভের শিশুর মেধা বিকাশ ব্যাহত হওয়াসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন গবেষকরা।
জানা গেছে, ছয় বছর আগে গর্ভবতী মায়েদের রক্তে বেশি মাত্রায় সীসা পান আইসিডিডিআরবির গবেষকরা। সীসার উৎস খুঁজতে মাটি পানিসহ পরীক্ষা করা হয় বিভিন্ন নমুনা। পরে হলুদে সীসার মিশ্রণ খুঁজে পান তারা।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগের গবেষণায় দেখা গেছে, সে দেশে বাস করা বাংলাদেশিদের রক্তেও অতি মাত্রায় সীসা আছে। যার মূল উৎস হলুদ।
গবেষকরা সতর্ক করছেন, দীর্ঘ সময় সীসাযুক্ত হলুদ খেলে ক্যান্সার হতে পারে। গর্ভের সন্তানের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ হয় না। এছাড়া হরমোনজনিত রোগ বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
Advertisement
এসআই/এমএসএইচ/এমএস