বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে বড় বড় অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ থাকলেও নেই দীর্ঘ দূরত্বের রুট। যে কারণে স্বল্প দূরত্বের রুটেই চালানো হচ্ছে উড়োজাহাজগুলো। ফলে দামি দামি উড়োজাহাজগুলোর সার্ভিসের মেয়াদকাল বসিয়ে বসিয়ে নষ্ট করা হচ্ছে।
Advertisement
সংশ্লিষ্টদের মতে, অনভিজ্ঞতা ও অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের কারণে এমনটি হচ্ছে। সুষ্ঠু ও বাণিজ্যিক দিকনির্দেশনা ছাড়াই দামি দামি উড়োজাহাজগুলো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হচ্ছে। সম্প্রতি চারটি ড্রিমলাইনার যুক্ত হওয়ার পর নিকট ভবিষ্যতে আসছে আরও দুটি নতুন প্রজন্মের ড্রিমলাইনার। অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের কারণে লম্বা দূরত্বের ব্যবহার উপযোগী উড়োজাহাজগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড় রুটগুলোতে ব্যবহার হচ্ছে না বাংলাদেশ বিমানের অত্যাধুনিক উড়োজাহাজগুলো। ২০০৮ সালে লম্বা দূরত্ব পাড়ি দিতে সক্ষম আটটি উড়োজাহাজ কিনতে বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। যার চারটি বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত হয় ২০১১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে। গত মাস পর্যন্ত বাকি চারটি বোয়িং-৭৮৭ ‘ড্রিমলাইনার’ যুক্ত হয়েছে বিমান বহরে। সহসা আরও দুটা আসছে। প্রতিটি উড়োজাহাজই একটানা ১৬ ঘণ্টার বেশি উড়তে সক্ষম। যদিও লম্বা দূরত্ব বলতে কেবলমাত্র ঢাকা-লন্ডন রুটেই সীমাবন্ধ বিমানের ফ্লাইট অপারেশন। লন্ডনের পর যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে আগামী ৪ জানুয়ারি থেকে ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বিমানের বহরে নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ যুক্ত করার প্রধান লক্ষ্য ছিল ইউরোপ-আমেরিকার মতো লম্বা দূরত্বের ফ্লাইট চালু করা। বর্তমানে মাত্র ১৫টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে সংস্থাটি। যদিও বিশ্বের ৫২টি দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের। দীর্ঘ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এখনও চালু করা যায়নি ঢাকা-নিউইয়র্ক, ঢাকা-টরেন্টোর মতো লম্বা দূরত্বের ফ্লাইট।
Advertisement
এ অবস্থায় দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে সক্ষম উড়োজাহাজগুলো নিয়ে একরকম বিপাকে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ দূরত্বে পরিচালনার জন্য আনা এসব উড়োজাহাজ দিয়ে স্বল্প ও মাঝারি দূরত্বের ফ্লাইট পরিচালনায় বিমানের সাইকেল নষ্ট করা হচ্ছে। কমছে আয়ুষ্কাল। তবে বাজার যাচাই করে ইউরোপের কোনো গন্তব্যে ফ্লাইট শুরু করার পক্ষে বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) ইনামুল বারীর।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে আরও একটি নতুন রুট চালু করা হচ্ছে। দীর্ঘ রুটের মধ্যে আমাদের প্রথম লক্ষ্য নিউইয়র্ক ও টরেন্টো। টরেন্টো রুটটি ভায়া আমেরিকা করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ক্যাটাগরির উন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত এ দুটো রুট চালু করা যাচ্ছে না। তবে বহরে থাকা ৭৭৭ উড়োজাহাজগুলো দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের রুট যেমন- রিয়াদ, দাম্মাম, জেদ্দায় ফ্লাইট চালানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ২০০৮ সালে আট হাজার ৭২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে আটটি উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি করে বিমান কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে রয়েছে চারটি বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর ও চারটি বোয়িং-৭৮৭-৮ (ড্রিমলাইনার) উড়োজাহাজ। পরবর্তীতে বোয়িং-৭৩৭-৮০০ মডেলের আরও দুটি উড়োজাহাজের ক্রয়াদেশ দেয় বিমান। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের কারণে আরও দুটি নতুন অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনার বহরে যুক্ত হতে যাচ্ছে নিকট ভবিষ্যতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আধুনিক উড়োজাহাজগুলো বহরে যুক্ত হওয়ার আগে থেকেই নিউইয়র্কের মতো লম্বা দূরত্বে ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেয় বিমান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না বেবিচক দ্বিতীয় ক্যাটাগরির নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায়। বেবিচক থেকে রেজিস্ট্রেশন করা কোনো উড়োজাহাজের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি নেই।
Advertisement
বর্তমানে বিমানের আন্তর্জাতিক রুট কেবল মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সীমাবদ্ধ। মধ্যপ্রাচ্য অর্থাৎ কুয়েত, দাম্মাম, দোহা, রিয়াদ, জেদ্দা, আবুধাবি, দুবাই ও মাস্কাটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুরে ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া স্বল্প দূরত্বে কলকাতা, কাঠমান্ডু ফ্লাইট নিয়মিত চললেও লোকসানের কারণে ২৮ অক্টোবর থেকে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে ইয়াঙ্গুন রুট। তবে একই দিনে চালু হচ্ছে ঢাকা-মদিনা রুট।
আরএম/এমএআর/এমকেএইচ