দেশজুড়ে

আসমা বেগমের ঘরটি বিলীন হয়ে যাবে!

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার জিয়াডাঙ্গা গ্রামের বিধবা আসমা বেগম (৪৫)। নদী ভাঙনের ফলে তার বসত-বাড়ি প্রায় বিলীন হওয়ার যোগাড়। তার পরিবারে আর কোনো লোক না থাকায় বসত ঘরটা সরানোর জন্য অনেকের কাছে গিয়ে ধর্ণা দিয়েছেন। তারপরও কেউ এগিয়ে আসছে না। কারণ, সবাই তাদের নিজের ঘর সরাতেই ব্যস্ত। ঘরটা শেষ পর্যন্ত  রক্ষা করতে পারবেন কি-না এ নিয়ে দুঃচিন্তায় আছেন সহায়সম্বলহীন আসমা বেগম।এ উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকাগুলো থেকে পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। তীব্র স্রোতের সঙ্গে নতুন বিপদ এসে ভর করেছে এ অঞ্চলের মানুষের ঘাড়ে। শুরু হয়েছে ব্যাপক নদী ভাঙন। নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে একের পর এক গ্রাম। ভাঙনের শিকার দিশেহারা অসহায় পরিবারগুলোর অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।এলাকা ঘুরে দেখ গেছে, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে এরেন্ডাবাড়ী, ফজলুপুর, ফুলছড়ি, উড়িয়া, কঞ্চিপাড়া, গজারিয়া ইউনিয়নের বন্যার পানি নেমে গেছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এসব এলাকায় বসবাসকারী লোকজনের দুর্দশা শুরু হয়েছে। পানির তীব্র স্রোতের আঘাতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়ায় দুই সহস্রাধিক পরিবার তাদের আবাদি জমি ও ঘর-বাড়ি হারিয়েছেন।অব্যাহত ভাঙনে গজারিয়া ইউনিয়নের কটকগাছা, জিয়াডাঙ্গা, গজারিয়া, গলনা ও ভাজনডাঙ্গা গ্রামের  অধিকাংশ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব এলাকার সাত শতাধিক পরিবার বসতভিটা ও ঘরবাড়ি হারিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ভাঙন কবলিত মানুষগুলো আশ্রয় নিয়েছে গ্রামের আত্মীয় স্বজনের অক্ষত বাড়ি ঘরগুলোতে। কেউবা পাশের গ্রামগুলোতে।এ বছর নদী ভাঙনে ঘর-বাড়ি হারানো উক্ত গ্রামের আব্দুল কাদের (৫২), ময়নাল হক (৫০), নুর ইসলাম (৪০), ওমর আলী (৫০), আব্দুল বারেক (৫৫), আলী আকবরসহ (৬০) সবার এই পরিস্থিতি। ভাঙন তীব্রতা এতোটাই বেশি যে ঘর-বাড়ি সরানোর সময় পর্যন্ত পাওয়া যায় না। ভাঙনের শিকার অনেকেই ঘর তোলার জায়গা না পেয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন।প্রায় একই কথা জানালেন কটকগাছা গ্রামের সাহাজ উদ্দিন (৫০), খাজা মিয়া (৩০), ছোরমান আলী (৬৫), ছামচুল মণ্ডল (৬৫), কোমর মুন্সি (৭০), আজিম উদ্দিন (৬২), মোজাম্মেল হক (৫৮), ভাজনডাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান (৭০), আহাদ আলী (৫৫), আব্দুল মালেক (৪৭)। ভাঙনের শিকার কটকগাছা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী (৭৫) আশ্রয় নিয়েছেন পাশের গলনা গ্রামে। তিনি বলেন, বন্যা শুরুর আগেও কটকগাছা গ্রামে শতাধিক পরিবারের বসবাস ছিল। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আমার মতো একের পর এক পরিবার বাড়ি-ঘর নিয়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন।স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, এ বছরের বন্যা ও নদী ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে পথে বসলেও তেমন কোনো সরকারি বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা পাওয়া যায়নি। গ্রামের সবাই মিলে দল গঠন করে বাড়ি-ঘর সরানো হচ্ছে।গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনোতোষ রায় মিন্টু জাগো নিউজকে জানান, গত দুই বছরের ভাঙনে কটকগাছা, গলনা, ভাজনডাঙ্গা ও জিয়াডাঙ্গা মৌজার মূল ভূখণ্ড নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আশ্রয়হীন হয়েছে শত শত মানুষ। শুধু এ বছরের ভাঙনেই গজারিয়া ইউনিয়নের আট শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে।এদিকে উপজেলার এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের তিনথোপা, আলগারচর, সন্যাসীর চর, হরিচণ্ডি, ফজলুপুর ইউনিয়নের উজালডাঙ্গা, চিকিরপটল ও কুচখালী, উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর, মধ্য উড়িয়া, কালাসোনা, উত্তর উড়িয়া, কাবিলপুর, কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ছাতারকান্দি, রসুলপুর, হাড়ডাঙ্গা, পূর্ব কঞ্চিপাড়া ও উদাখালী ইউনিয়নের সিংড়িয়া গ্রামেও ব্যাপক আকারে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।ফুলছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র রায় জাগো নিউজকে জানান, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে বন্যা ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিবছর নদী ভাঙনে শত শত পরিবার বাস্তুহারা হচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী ভাঙন রোধে ব্যর্থ। বিশাল একটি জনপদ রক্ষায় এখন সরকার মহা পরিকল্পনা  গ্রহণ না করলে অসংখ্য মানুষের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।অমিত দাশ/এমজেড/বিএ

Advertisement