অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ হওয়ার দুটি পরিভাষার নাম ‘মুজিজা’ ও ‘কারামাত’। তবে সব অলৌকিক ঘটনাই আবার মুজিজা বা কারামাত নয়। কেননা মুজিজা বা কারামাত কোনো ব্যক্তির ইচ্ছা শক্তিতে সংঘটিত হয় না। আর মুজিজা ও কারামাত এক ব্যক্তি থেকেও প্রকাশ পায় না।
Advertisement
চাইলেও কেউ এ মুজিজা বা কারামত প্রকাশে সামর্থ নয়। তাহলে প্রশ্ন হলো- অলৌকিক কোনো ঘটনা দেখলেই কি তা বিশ্বাস করতে হবে? ‘না’, অলৌকিক কোনো ঘটনা ঘটতে দেখলেই তা বিশ্বাস করা যাবে না। কারণ অলৌকিক ঘটনার সঙ্গে কুরআন-সুন্নাহর গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
অলৌকিকতা সাধারণ নবি-রাসুল থেকেই প্রকাশিত হয়েছে। আবার যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা তাদের থেকেও অনেক সময় কিছু অলৌকিক বিষয় প্রকাশিত হয়। তবে এ নিয়ে রয়েছে নানা মতপার্থক্য।
মত পার্থক্য বা মতবিরোধ যাই থাক না কেন? নবি-রাসুলদের থেকে প্রকাশিত অলৌকিক বিষয়গুলোকে বলা হয় মুজিজা। আর আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের থেকে প্রকাশিত কোনো বিশেষ ঘটনাকে বলা হয় কারামাত। আর ইসলামের দৃষ্টিতে দু’টোই সত্য।
Advertisement
তবে নবি-রাসুল কিংবা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের দ্বারা সংগঠিত কোনো বিষয়ই তাদের নিজেদের ক্ষমতা নয়। বরং প্রয়োজনের কারণে মহান আল্লাহ তাআলা তা দান করেন।
অলৌকিকতা প্রকাশে কারণ
চাইলেই নবি-রাসুল কিংবা আল্লাহর প্রিয় বান্দারা অলৌকিক কোনো ঘটনা ঘটিয়ে দেন না। বরং আল্লাহ তাআলা তার একক সত্ত্বাকে মানুষের সামনে প্রমাণ করতে অকাট্য দলিল বা প্রমাণ স্বরূপ তার শ্রেষ্ঠত্বের নির্দশন মানুষের সামনে নবির-রাসুল কিংবা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের মাধ্যমে জানান দেন।
যেহেতু নবুয়ত ও রেসালাতের দরজা বন্ধ। অর্থাৎ খাতামুন নাবিয়্যিন হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর কেয়ামতের আগে আর কোনো নবি-রাসুলের আগমণ ঘটবে না, তাই মুজিজা নামে কোনো অলৌকিকতাও প্রকাশ পাবে না।
Advertisement
তবে যুগে যুগে কেয়ামত পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় বান্দাদের পৃথিবীতে পাঠাবেন। যারা আল্লাহর জমিনে তার দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেদের নিয়োজিত রাখবেন। তাদের দ্বারা বিশেষ অলৌকিকতা প্রকাশ পেতে পারে। যদি তা প্রকাশ পায় তবে তা কারামাত হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
কারামত প্রকাশে যেহেতু মানুষের ইচ্ছা শক্তির কোনো মূল্য নেই, তাই এ কথা সব সময় বিশ্বাস রাখতে হবে যে, কারামাত শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাধীন। তিনি যখন চাইবেন তখন তা ক্ষেত্র বিশেষ প্রকাশ পাবে। হতে পারে-> আল্লাহ তাআলা তার একক সত্ত্বাকে প্রমাণস্বরূপ তার কোনো বান্দার প্রতি কারামাত দান করবেন।> আল্লাহ তাআলা চাইলে তার দ্বীনের কার্যকারিতা প্রকাশে ও কঠিন পরিস্থিতি থেকে তার প্রিয় বান্দাদের প্রতি ইহসান করতেই কারামাত দান করতে পারেন।> মানুষকে গোমরাহি থেকে মুক্ত করতে কিংবা শয়তানের গভীর প্ররোচনা থেকে বিরত রাখতে ইলম-আমল, স্বচ্ছ ঈমান ও তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তির মাধ্যমে কারামাত দান করতে পারেন।
দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মুজিজা হলো- ‘পবিত্র কুরআনুল কারিম।’এ কুরআনুল কারিমকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো উপায়ে কারামাত খোঁজার উপায় নেই। যদি কুরআন-সুন্নাহর পথ বাদ দিয়ে কোনো ব্যক্তি কারামাত হাসিল করেছেন কিংবা কারামাত পেয়েছেন বলে প্রচার করে থাকেন তবে ধরে নিতে হবে, তা চরম মিথ্যাচার।
উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে-
কুরআন-সুন্নাহর আমল বাদ দিয়ে যদি কোনো ব্যক্তি পানির ওপর দিয়ে হেটে বেড়ায়। তবুও তাকে বিশ্বাস করা যাবে না। এ সম্পর্কে ইমাম শাফেয়ী যর্থার্থই মন্তব্য করেছেন।হজরত ইউনুস ইবনে আব্দুল আলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি একবার ইমাম শাফেঈ রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে বলেন, হে ইমাম শাফেঈ! আমাদের বন্ধু লাইস ইবনে সাদ কী বলেছে, তুমি কি তা জান? সে বলেছে, ‘যদি তুমি কোনো ব্যক্তিকে দেখ যে, সে পানির উপরিভাগ দিয়ে নিজের ইচ্ছা মতো হেঁটে চলে যাচ্ছে, তবু তাকে বিশ্বাস করো না।ইমাম শাফেঈ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, লাইস এ বিষয় সম্পর্কে উত্তম জ্ঞান অর্জন করেছেন। অতঃপর ইমাম শাফেঈ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘যদি তুমি কাউকে কোনো অবলম্বন ব্যতিত ইচ্ছা মতো আকাশে উড়তে দেখ, তবুও ওই ব্যক্তিকে বিশ্বাস কর না।’
সুতরাং কুরআন-সুন্নাহ ব্যতিত কোনো ব্যক্তির বিশেষ কোনো ক্ষমতা বা অলৌকিক ঘটনাকে বিশ্বাস করে তার প্রতি আনুগত্য করা কোনো মুমিন মুসলমানের কাজ নয়। ওই ব্যক্তির আনুগত্য করাও উচিত হবে না।
কেননা মুমিন মুসলমানের জ্ঞান কুরআন-সুন্নাহর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এমন কোনো জ্ঞান নেই যা পবিত্র কুরআনুল কারিম কিংবা বিশ্বনবির হাদিসে নেই।
মনে রাখতে হবেমানুষকে দেখানোর জন্য কোনো যুগেই মুজিজা বা কারামত প্রকাশ পায়নি। বরং মানুষের ঈমানকে মজবুত করতে, আল্লাহ ও তার প্রিয় রাসুলের সঙ্গে সুসম্পর্ক গভীর করতেই মুজিজা বা কারামাত প্রকাশিত হয়।
সাহাবায়ে কেরামের কোনো কারামাত প্রকাশ না পাওয়াই তার অন্যতম প্রমাণ। কারণ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি সাহাবায়ে কেরামের বিশ্বাস, ভালোবাসা ও একনিষ্ঠতা এত বেশি ছিল যে, তাদের কারামাত প্রকাশিত হওয়ার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। এমনিতেই তাদের ঈমানের একনিষ্ঠতা ছিল অনেক বেশি।
পরিশেষে…আল্লাহর যে সব প্রিয় বান্দারা ইখলাসের দিক থেকে বেশি এগিয়ে, আল্লাহ তাআলা প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে তাদের মাধ্যমে কারামাত প্রকাশ করে থাকেন। এ কারণে সাধারণ আবেদদের তুলনায় আলেমদের মাঝে আল্লাহর কারামাত বেশি প্রকাশ করেছেন।এটা নিয়ে কারামাত প্রকাশ হওয়া ব্যক্তির প্রতি আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। এতে ওই ব্যক্তিরও কোনো বিশেষত্ব নেই। কারণ কারামত প্রকাশ হওয়ার প্রধান কারণই হলো তাওহিদ ও রেসালাতের শ্রেষ্ঠত্ব ও সত্যতা প্রমাণ করা।
এ কথা সুস্পষ্ট যে-মুজিজা নবুয়তের দলিল বহন করে। তাই মিথ্যা নুবয়তের দাবিদার কোনো ব্যক্তির দ্বারা মুজিজা প্রকাশ হয়নি আর কখনো তা সম্ভবও নয়।আবার কখনো কখনো অলৌকিকতাকে মানুষ জাদু মনে করে। কিন্তু কারামাতকে এ থেকে আলাদা করার উপায় হলো- ‘আল্লাহ তার যে বান্দাকে কারামাত দান করেন তিনি আল্লাহর কুরআন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিপূর্ণ সুন্নাতের অনুসারী।’আর জাদুকরের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহর কোনো আমলের বাস্তবায়ন থাকে না।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মুজিজা ও কারামাতের অলৌকিকতা সম্পর্কে বুঝার ক্ষমতা দান কারুন। কুরআন-সুন্নাহর সম্পর্কহীন কোনো ব্যক্তি বিশেষের অলৌকিকতা থেকে নিজেদের হেফাজত করে ঈমানের ওপর অটল ও অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর