মতামত

শিল্প-সাহিত্যের চর্চা হোক ঘরে ঘরে

মানুষ মানুষকে ভালোবাসে, মানুষ মানুষকে ঘৃণা করে, মানুষ মানুষকে হত্যা করে। এ চিত্র পৃথিবী জুড়ে চলছে আদিমকাল থেকে। মানুষ নিজেদের প্রয়োজনেই পরিবার, সমাজ, ধর্ম, স্বাধীন দেশ তৈরি করে। স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে, একটি পরিবার বা দেশের ক্ষমতাবান লোকটি বা ক্ষমতাসীন দলটি সেটিকে কুক্ষিগত করে রাখবে। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ কিংবা ‘আমার ধর্মই সেরা ধর্ম, সেটিকেই মানতে হবে’ নীতিকে কার্যকরী করতে গেলে ক্ষমতার ক্ষমতাও যাবে, ধর্মের ধর্মও যাবে। ফলস্বরূপ যা থাকবে তা হলো কোন্দল, অরাজকতা, অধর্ম।

Advertisement

‘রাজার নীতি-রাজনীতি’ কথাটি এমন হয়তো, কিন্তু, সব রাজার নীতিই কি সঠিক বা সুষ্ঠু পথে চলছে- এ প্রশ্ন থেকেই যায়। একটি দেশকে স্বয়ম্ভু হয়ে টিকে থাকতে প্রয়োজন সে দেশের রাজনৈতিক ধারার শালীন, সভ্য রূপ। যেভাবে আমরা সুন্দর আসবাবপত্র দিয়ে ঘর সাজাই তেমনি দরদী, সহিষ্ণু, নীতিবান নেতাকে দেশের আনাচে কানাচে দেখতে চাই। সুবিধাবাদী, ভোগবাদী নেতারা যেকোনো ধরনের অসংলগ্ন কাজ যেকোনো মূহুর্তে করে ফেলতে পারে বা করে।

সম্প্রতি, আবরার হত্যাকাণ্ড তেমনই একটি উদাহরণ। যেকোনো ইস্যুতে যে কাউকে নির্যাতন বা হত্যা করা কখনো সমাধানের পথ হতে পারে না। একটি দেশের একটি স্বনামধন্য বিশ^বিদ্যালয়ের হত্যাকাণ্ডের চিত্র সে দেশের জন্য তো বটেই পুরো বিশে^র জন্য একটি আতঙ্কের বিষয়। এমন হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত থাকে তারা একদিনে তৈরি হয় না। তাদের অসহিষ্ণু মনোভাবের জন্য একা একটি দল বা একটি পরিবারকেও দায়ী করা যায় না। এ দায় আমাদের সবার। এ দায় রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর।

আমাদের শিক্ষা, প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনকে মসৃণ করে দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা থেকে আমাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে অনেক দূরে। ফলে, যে রাষ্ট্রীয় গহ্বর তৈরি হচ্ছে যা ধ্বংসযজ্ঞ রূপে বিশাল আকার ধারণ করতে পারে। লাশের বহর মাড়িয়ে কখনও মানবিক রাষ্ট্র তৈরি করা সম্ভব নয়।

Advertisement

স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু ঘরে ঘরে দুর্গ তৈরি করার কথা বলেছিলেন। ঘরে ঘরে দুর্গ তৈরি হয়েছিলো, দেশও স্বাধীন হয়েছিলো। অনেক সরকারের পরিবর্তন হয়েছে। দেশের উন্নয়নমুখী অবকাঠামোর অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু ঘরে ঘরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুখী ধ্যান-জ্ঞানের বাইরে শিল্প-সাহিত্যের চর্চার পরিবেশ তৈরি করতে না পারলে, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ তৈরি করতে না পারলে এ জাতি দিন দিন মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়বে, এ কথা অস্বীকার করা যায় না।

লেখক : শিক্ষক, কবি ও প্রাবন্ধিক।

এইচআর/এমএস

Advertisement