হাদিসের পরিভাষায় আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, জাকাত আদায় করা এবং রমজানের রোজা পালন করা হলো আমলে সালেহ বা নেক কাজ। এ সব কাজ মানুষকে দুনিয়া ও পরকালের যাবতীয় ক্ষতি ও ধ্বংসের হাত থেকে হেফাজত করে। এমনটিই ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি।
Advertisement
ঈমান, নামাজ, রোজা, জাকাত ও হজ ছাড়াও যত ইবাদত-বন্দেগি আছে এগুলোকেই আমরা আমলে সালেহ বা নেক কাজ মনে করি। কিন্তু এমন অনেক (আমলে সালেহ) নেক কাজ আছে যেগুলো পালন করা বা মেনে চলা একেবারেই সহজ কিন্তু মানুষ তা পালন থেকে নিজেদের বিরত রাখে। আবার অনেকে সেগুলোকে আমলে সালেহ বা নেক কাজ মনেই করে না।
শুরুতেই জেনে নেয়া যেতে পারে আমলে সালেহ বা নেক কাজ কী?‘আমলে সালেহ’ আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো ভালো আচরণ, উত্তম কাজ, গ্রহণযোগ্য কাজ। কুরআনুল কারিমের অনেক জায়গায় আমলে সালেহ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সাধারণত যার অনুবাদ দাঁড়ায়- নেক আমল, ভালো কাজ বা সৎকাজ।
তাহলে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ ইবাদত-বন্দেগি ছাড়াও সমাজে কোনো অশান্তিমূলক কাজ বন্ধ করে শান্তি স্থাপন করা, নিজ পরিবার কিংবা অন্যের কল্যাণে যে কোনো কাজ করাই হলো আমলে সালেহ। তা হতে পারে রাস্তা থেকে সামান্য পাথর টুকরা কিংবা কাঁটা অপসরণের মতো ক্ষুদ্র কাজ।
Advertisement
আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে আমলে সালেহ-এর কথাগুলো এভাবে তুলে ধরেছেন-> ‘ঈমান গ্রহণ করার পর যে কোনো নারী-পুরুষ আমলে সালেহ করবে, আমি তাকে দান করবো উত্তম পবিত্র জীবন এবং তাদের সবচেয়ে ভালো কাজগুলোর ভিত্তিতে পুরস্কার দেবো।’ (সুরা আন-নাহল : আয়াত ৯৭)> তবে যে কেউ ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ্ করবে, তার জন্যে থাকবে সর্বোত্তম পুরস্কার এবং তার প্রতি আমার বিষয়গুলো বলবো সহজভাবে।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ৮৮)
আল্লাহ তাআলা মানুষকে আমলে সালেহ তথা নেক কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে পুরস্কারের কথা বলেছেন। কিন্তু কুরআনুল কারিমের শেষ দিকে সময়ের কসম খেয়ে আল্লাহ তাআলা তাআলা বলেছেন, ‘নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।’অতঃপর আল্লাহ তাআলা কিছু সংখ্যক মানুষকে ক্ষতির এ সংবাদ থেকে বাদ রেখেছেন। আর তাদের একাংশ হলো যারা ‘আমলে সালেহ’ বা নেক আমল করে।
কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী মানুষ নেক আমল করলে যেমন পুরস্কার পাবে তেমিন নেক আমল করলে দুনিয়া ও পরকালের ক্ষতি থেকেও বাঁচতে পারবে।
সুতরাং মানুষের উচিত, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে নেক আমলে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। পাশাপাশি সহজে নেক আমল করার উপায়গুলো জেনে নেয়া।
Advertisement
এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো করলে সহজে নেক আমল তথা আমলে সালেহ হয়ে যাবে। আর তাহলো->> ইলম বা জ্ঞানার্জন করা। জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে সমাজের কল্যাণকর কাজ করা।>> সবর বা ধৈর্যধারণ করা। সবর বা ধৈর্যধারণ গোনাহ মাফ এবং সাওয়াব লাভের অন্যতম উপায়।>> নিয়তের বিশুদ্ধতা। যে কোনো কল্যাণকর কাজের নিয়ত করা। করতে পারলে যেমন সাওয়াব আছে। না করতে পারলেও নিয়ত করার সঙ্গে সঙ্গে তা সাওয়াবে পরিণত হয়।>> আন্তরিকতা। যে কোনো কল্যাণকর কাজে আন্তরিকতাসহ যোগদান করা। করতে না পারলে তা সম্পাদনে, সহযোগিতায় বা পরমার্শে আন্তরিক হওয়া।
জ্ঞানার্জন, সবর, নিয়ত ও আন্তরিকাসহ এ জাতীয় কাজগুলোতে কোনো শ্রম ব্যয় করতে হয় না। পেরেশানি হতে হয় না। তাই ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি উল্লেখিত সহজ কাজগুলোর মাধ্যমে আমলে সালেহ-এর সঙ্গে নিজেকে নিয়োজিত রাখা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমলে সালেহ তথা নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। নিজেদের সব ভালো কাজের সঙ্গে নিয়োজিত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস