দেশজুড়ে

পার্বত্য চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি

জোরদার হয়ে উঠছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চলমান অসহযোগ আন্দোলন। আন্দোলনকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পার্বত্য জনপদ। ক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। এ নিয়ে জনমনে বিরাজ করছে উদ্বেগ ও চাপা উত্তেজনা। আন্দোলন কর্মসূচি কেন্দ্র করে যেকোনো মুহূর্তে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি উদ্ভব হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এতে পার্বত্য এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়নের দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী পহেলা মে থেকে সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে জনসংহতি সমিতি। এর আগে পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সরকারের কাছে রোডম্যাপ দাবি করেন জনসংহতি সমিতির প্রধান ও পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন ওই সময়ের মধ্যে তাদের দাবির ব্যাপারে সরকার এগিয়ে না আসলে পহেলা মে থেকে জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনে যাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ। কিন্তু সন্তু লারমার আহ্বানে সরকার কোনোই সাড়া দেয়নি। ফলে অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তোলে জনসংহতি সমিতি। পালিত হচ্ছে একের পর এক কর্মসূচি। ইতোমধ্যে অসহযোগ আন্দোলনের অংশে পার্বত্য চট্টগ্রামে জেলা ও উপজেলা সদরে হাটবাজার বয়কট, একাধিক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে। ওইসব কর্মসূচি পাহাড়ি-বাঙালি জনগণের স্বত:স্ফূর্ত সমর্থনে সফল ও সর্বাত্মক হয়েছে বলে দাবি করেন জনসংহতি সমিতির নেতারা।আন্দোলনের অংশে মঙ্গলবার রাঙামাটিতে জেলা ও উপজেলা সদরে পালিত হয়েছে কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ। এসময় আন্দোলন জোরদারের আহ্বানে জনসাধারণের মাঝে একটি প্রচারপত্রও বিলি করা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে একটি স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে। জনসংহতি সমিতির সমর্থনপুষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে রাঙামাটি জেলা ও উপজেলা সদরে এসব কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, চলমান অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবিতে এবং রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে মঙ্গলবার কালো পতাকা মিছিল, সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। সকাল ১০টায় রাঙামাটি জেলা সদরে জনসংহতি সমিতির রাঙামাটি জেলা কার্যালয় হতে কালো পতাকা মিছিল বের করে বনরূপা ঘুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।  সমাবেশ শেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিসহ বিভিন্ন দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো হয়েছে। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও মহিলা সমিতিসহ অন্য সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির রাঙামাটি জেলার সভাপতি সোনারানী চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক কল্পনা চাকমা, সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদ সুপ্রভা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙামাটি জেলার সভাপতি টোয়েন চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক চন্দ্রা ত্রিপুরা। সমাবেশ পরিচালনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক জোনাকি চাকমা ও আশিকা চাকমা। সমাবেশে নেতারা বলেন, আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করছি যে, জনসংহতি সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং জাতীয় নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে রোডম্যাপ চেয়ে সরকারের কাছে বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও এ ব্যাপারে সরকার এখনো এগিয়ে আসেনি। এছাড়া পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের আগে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য দাবি জানানো হলেও তা একতরফাভাবে চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে, আগের মতোই সমানে বেড়েই চলেছে জুম্ম নারীর ওপর সহিংসতার মাত্রা। অথচ দোষীদের বিরুদ্ধে বিচার ও শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থাই নেই।বক্তারা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্দেশ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের ১৮ বছর পার করেছে কিন্তু চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো আজও অবাস্তবায়িত। সুশীল প্রসাদ চাকমা/এমজেড/আরআইপি

Advertisement