‘ফেরারি এই মনটা আমার, মানে না কোনো বাধা, তোমাকে পাবারই আশায়, ফিরে আসে বারেবার।’ আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া সুপাহিট এই গানটি শোনেননি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। শোনা যায় নিজের ভালোবাসার মানুষ চন্দনাকে নিয়ে এই গান গেয়েছিলেন তিনি। সেই চন্দনাকে নিয়েই কাটিয়ে গেছেন একটা জীবন।
Advertisement
গত বছর ১৮ অক্টোবর সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান আইয়ুব বাচ্চু। আজ তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী চন্দনা, মেয়ে ফাইরুজ সাফরা, ছেলে আহনাফ তাজওয়ারকে। আর রেখে গেছেন অসংখ্য গান ও প্রিয় ভক্তবৃন্দ। এই দিনে প্রিয় এই মানুষটিকে নিয়ে জাগো নিউজের কাছে নানা স্মৃতিচারণ করেছেন ব্যান্ড লিজেন্ডের স্ত্রী চন্দনা। তুলে ধরা হলো আলাপের চুম্বক অংশ।
জাগো নিউজ : আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুবার্ষিকীতে পরিবারের পক্ষ থেকে কী আয়োজন হচ্ছে?চন্দনা : কোরআন খতম দেয়া হচ্ছে। উনার স্টুডিওর কাছে মগবাজার মসজিদে বাদ আসর দোয়ার মাহফিল আছে। আর ঢাকার দুইটা এতিমখানার শিশুদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রামে থাকছি ১৮ অক্টোবর। এখানে উনার কবর জিয়ারত করব। মিলাদের আয়োজন করা হচ্ছে।
জাগো নিউজ : স্বামী এবং বাবা হিসেবে কেমন ছিলেন তিনি?চন্দনা : তাকে মূল্যায়ন করার ক্ষমতা আমার নেই। আপনারা নিজেরাই জানেন অনেক ভালো একজন মানুষ ছিলেন তিনি। স্বামী হিসেবেও অন্যরকম ছিলো আর তার মতো বাবা আসলে হয়ই না।
Advertisement
জাগো নিউজ : ছেলে মেয়েদের কী উপদেশ দিতেন সবসময়?চন্দনা : ছেলে-মেয়েদের সবসময় ভালো মানুষ হওয়ার উপদেশ দিত। ছেলেকে বলত, সঙ্গীতজীবনে আসো কিংবা না আসো মানুষের মতো মানুষ হও। নিজের পায়ে শক্তভাবে দাঁড়াও। আমি জীবনে যে কষ্ট করেছি তোমরা সে কষ্ট করতে পারবা না। সবাই দোয়া করবেন তার স্বপ্ন যেন ছেলে-মেয়েরা পূর্ণ করতে পারে। তারা যেন মানুষের মতো মানুষ হয়।
জাগো নিউজ : একবার আহনাফ তাজোয়ারকে নিয়ে টেলিভিশন লাইভেও এসেছিলেন তিনি?চন্দনা : হ্যাঁ। সেই সময়ও বলেছে, ছেলে পড়ালেখা শেষ করে তারপর যেন গানে মন দেয়। আহনাফ ওর বাবার মতোই গানপাগল। ওর ইচ্ছে আছে সঙ্গীত নিয়ে অনেক কিছু করার। এখন পড়ালেখা নিয়ে আছে। আরও তিন বছর লাগবে ওর পড়ালেখা শেষ হতে।
জাগো নিউজ : আইয়ুব বাচ্চু একজনই হন। উনি অনেক গান উপহার দিয়ে গেছেন। তার গানগুলো সংরক্ষণের ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের কি কোনো পরিকল্পনা আছে?চন্দনা : তার গানগুলো হারিয়ে যাবে না। কোটি কোটি মানুষ বুকে ধারণ করে আছে তার গান। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকেও বেশ কিছু পরিকল্পনা আছে। দেখি কী করতে পারি! সময় হলে সবাইকে জানাব, আগে না বলি। এখন সবাই যে যার মতো তার গান ব্যবহার করছে করুক। সবই নীরবে দেখছি। ব্যান্ডটাকে নিয়ে ভাঙা-গড়া চলছে। কারও কাজ কী কেউ নিখুঁতভাবে করতে পারে! তার ছেলেও হয় তো বাবার মতো গাইতে পারবে না।
জাগো নিউজ : মাঝে তো এলআরবি নিয়ে অনেক কিছুই ঘটল। নাম পরিবর্তন হলো। ভোকাল নেয়া হলো। এগুলো কি আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই করা হচ্ছে?চন্দনা : এ বিষয়ে যা বলার আমার ছেলে স্ট্যাটাসেও বলেছিল। আর ব্যান্ড সদস্যদের কাছে আহনাফ বলেছিল, ‘চাচ্চু আপনারা যা করেন আমাদের জানিয়ে করবেন।’ ওরাও বলেছিল, ব্যান্ডের যেকোনো সিদ্ধান্ত আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেই নেবে। কিন্তু ওরা আমাদের না জানিয়েই সবকিছু করেছে। এখনও করে যাচ্ছে। আমাদের সঙ্গে কোনো ধরেনর যোগাযোগ করে না। যদি আপনাদের বলেও থাকে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। তাহলে বলব, সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলেছে। তবে যে যাই করুক আইয়ুব বাচ্চুর প্রপার্টি তো আর কেউ নিয়ে যেতে পারবে না!
Advertisement
জাগো নিউজ : এখনও কি এলআরবির সদস্যদের সঙ্গে আপনাদের কোনো যোগাযোগ নেই?চন্দনা : ওর চলে যাওয়া এক বছর হয়ে গেল এলআরবির সদস্য শামীম, মাসুদ, রোমেল, স্বপন কেউই কখনোই আমাদের কোনো খোঁজ-খবর রাখেনি। আমি আশাও করি না তারা যোগাযোগ করবে। যেই মানুষটার হাতধরে এখন ঢাকা শহর ও পুরো বাংলাদেশের মানুষ ওদের চেনে। সেই মানুষটার পরিবারের সঙ্গে ওদের যোগাযোগ রাখা উচিত।
জাগো নিউজ : আইয়ুব বাচ্চুর সবচেয়ে বড়গুণ কী ছিল?চন্দনা : ও নিজের পরিবারকে খুব ভালোবাসতো। মাকে ভীষণ ভালোবাসতো। পরিবারের পরেই দর্শকদের ভীষণ ভালোবাসতো। আর অসম্ভব পরিশ্রমী মানুষ ছিল। আমার জীবনে এত স্ট্রাগল করা মানুষ আমি কখনই দেখিনি। মিউজিক নিয়েই স্ট্রাগল করেছে সারাজীবন। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা তার ধ্যানজ্ঞান ছিল সঙ্গীতকে ঘিরেই। বাংলাদেশে ব্যান্ডসঙ্গীতে এই রকম মানুষ আর হবেই কিনা আমি জানি না!
জাগো নিউজ : আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম অ্যালবাম ছিল ‘রক্তগোলাপ’। এরপর অনেক গান গেয়েছেন তিনি। সেই সময় ‘ফেরারি এই মনটা আমার’ গানটি সুপারহিট হয়েছিল। গানটি নাকি আপনাকে নিয়েই লেখা?চন্দনা : সেই সময় আমাদের অ্যাফেয়ার চলছিল। তখনকার লেখা গান এটা।
জাগো নিউজ : শোনা যায় তার অনেক গানে আপনার ছায়া পড়েছে?চন্দনা : থাক না ওসব গল্প। আমার কথা আর না বলি। উনাকে মানুষ এখন যেমন ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে, যুগযুগ ধরে সেটা অব্যাহত থাকুক। আমার বিশ্বাস তাকে কেউ কখনো অশ্রদ্ধা করবেন না। একটাই কষ্ট খুব অল্প বয়সেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন তিনি। সবাই দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তাকে ভালো রাখেন।
এমএবি/বিএ