‘‘গবেষণালব্ধ জ্ঞানে বলা হয়, যে কোন নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে তিন সপ্তাহ সময় নেয়।’’ এইটুকু হেডলাইন পড়ে খুব উদ্দীপ্ত হয়ে ঝাঁপিয়ে বসে আর্টিকেলটা পড়তে লেগে যাবেন। জানতে চাইবেন, কি উপায়? তো জানার শুরুতে খুব খুব আশ্বাস দিয়ে আগ্রহের চূড়ান্তে পৌঁছে যখন দেখবেন আশংকা মত কোনো সাইট সাবস্ক্রাইব করতে বা কার্ড নম্বর দিতে বলছে না, সত্যি সত্যিই দেবে ১০ টা টিপস, আরো ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা সহকারে টিপসগুলো খুলবেন। পড়তে পড়তে দেখবেন প্রতি টিপসেই আসছে এমন, “ টিপস ৩, খাবার নির্বাচন বেছে নিন অমুক অ্যাপস । এতে পাবেন হাই ক্যালরির চিজ কেক খেতে চাইছে মন, তখন এর বদল কম ক্যালরির মজার খাবারের সাজেশন। রেস্তোরাঁয় বসে আছেন, লোকেশন দিন বা এই অ্যাপস এ খাবার তালিকা স্ক্যান করে নিন। সবচেয়ে কম ক্যালরির খাবার বেছে দেবে।’’ এভাবে ১০টা টিপস এ ১০টা অব্যর্থ অ্যাপস !
Advertisement
হাতের মুঠোফোন এখন এমনিতেই সবকিছু গিলে বসে আছে। অ্যাপস এ আরও ভর্তি করতে গিয়ে মোবাইল বলবে স্পেস নাই, স্পেস খালি করো। কি করে খালি করা যায়? কিনুন নতুন ফোন , আরো আরো স্পেসসমৃদ্ধ। মোবাইল কোম্পানির ম্যানুয়াল মোতাবেকই ২ বছর পর স্পিড কমে আসবে ফোনের। এবং... চলবে নাইট্রোজেন চক্রের মত চক্র। এবং এই নির্ভরতা বা আসক্তি কাটাতে কি করবেন জানতে হলে আরেক অ্যাপস ধরিয়ে দেবে। অথবা নেমে আসবে টেড টকের কোনো স্পিচ। তাতে সাজেশন আসবে , " ...জানতে চাইলে পড়তে হবে এই বই "। সাজেস্ট করা হবে অতি জ্ঞানী কোন মোটিভেশনাল স্পিকার বা আচরণ বিজ্ঞানীর ( বিহেভিয়ার সাইন্টিস্ট) বই । এখন এই সবে যেটা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তা হলো বিশ্বাসের ক্ষতি। কাকে বিশ্বাস করবেন, কাউকেই কি বিশ্বাস করা যাবে? ধান্দাহীন নিঃস্বার্থ উপদেশ কি কেউ দেবে- এই ভেবে চূড়ান্ত হতাশ বিষণ্ণ একাকীত্বে ডুবে যাবেন। অনেক মরণঘাতি অ্যাপস ইতিমধ্যেই বাতিল হয়েছে। তবু থেমে নেই অন্যকিছু। যেমন সঙ্গীর উপর নজরদারির অ্যাপস। স্রেফ ফোন নম্বর দিয়ে বলে দেবে আপনার সঙ্গী কোথায় আছে। ভাবতে পারেন, কি করে?
কেন নয়? গুগল ম্যাপ ব্যবহার করতে আপনার লোকেশন জানার অনুমতি দিতেই হয়। ব্যাস, এই দিয়েই ব্যবসা। কি অসুস্থ ও প্রাইভেসির অনধিকারপ্রবেশকারী এক বেসিক অ্যাপস আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করছি । এখন ভাবতে পারেন আমার সঙ্গী জানুক, সমস্যা নেই। বা ভাবতে পারেন আমার সঙ্গীরটা আমি জানতে চাইতেই পারি। এখন ট্র্যাক করে দেখলেন সে অমুক দোকানে গেছে। বাসায় ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় গিয়েছিল। সে হয়তো এন্টাসিড কিনতে সেই শপিং মল লাগোয়া ডিস্প্যান্সারিতে গেছে। আপনি ভাবলেন শপিং মলে লুকিয়ে কারো জন্য গিফট কিনতে গেছে। আর সেও ভাবলো এন্টাসিড কেনা বলার কি আছে। বা বললেও আপনি বিশ্বাস করবেন না। ভাববেন আজ ধরে ফেলেছি, জিজ্ঞেস করেছি বলে এই জবাব পেলাম। না হলে না জানি আর কই কই যায়।
এবং এই সন্দেহের কোনো সীমানা নেই। অচিরেই আপনি দেখবেন একজন সাইকোপ্যাথ বা স্কিজোফ্রেনিয়ার রুগীর মত আচরণ করছেন। আর কেউই শতকরা নিষ্পাপ, নির্ভুল না। কাজেই গোয়েন্দাদের মত খুঁজলে হাতে কিছু প্রমাণ হয়তো পাবেনই, যা আমলে আনার মত কিছুই না। কিন্তু, বিবেচ্য হচ্ছে , কি প্রয়োজন? আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকেন যে সঙ্গী অবিশ্বস্ত এবং প্রমাণ হাতে পেলেই সম্পর্কের ইতি টানবেন, শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই এই ঝুঁকি নিতে পারেন। অন্যথায় এই " সব জানা চাই" নজরদারি যেমন যে কারো আবশ্যিক ব্যক্তি স্বাধীনতা ব্যাহত করবে তেমনি তার চেয়েও ক্ষতি করবে আপনাকেই, মানসিক ও দৈহিকভাবে। এবং পারিবারিক অশান্তি তো বলাই বাহুল্য। অযথা অশান্তি টানবেন না। নিজের দিকে ফোকাস ঘুরিয়ে নিন, নিজের উন্নয়ন ঘটান। যেন নিজেকে ছোট করার মত কাজে সময় নষ্ট করার সময়ই যেন না হয়।
Advertisement
এবং এই প্রতারণার সংকটকালে চিকিৎসা পেশা, সবচেয়ে স্পর্শ কাতর আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেশা, এখন সবচেয়ে বড় ব্যবসা। গবেষণায় উঠে আসছে গত শতাব্দীর মাঝামাঝি ১৯৪০ এ প্রতি ষোল জনে একজন, ১৯৭০ এ দশজনের একজনের ক্যান্সার আক্রান্তের ঝুঁকি পাওয়া যেত। সেখানে এখন ২ জন পুরুষে একজনের আর তিনজন নারীর একজনের ক্যান্সার সনাক্ত হচ্ছে। চমকে উঠতে পারেন, আমাদের দেশে এই অনুপাত আছে কিনা । আরো বেশিই আছে।মুশকিল হলো আমাদের দেশে বাৎসরিক শারীরিক পরীক্ষার প্রচলন একদম নেই। অসুস্থ না হলে বা চাকরির বা ভর্তি পরীক্ষায় আবশ্যিক না হলে আমরা কোনো পরীক্ষা করাই না। তাই ধরা পড়ে না। পড়লেও শেষ সময়ে।
এবং এই রুগীর সংখ্যা এত বেড়ে গেলেও এতসময়ে ক্যান্সারের এত এত ইন্সটিটিউট থাকা সত্বেও বলা হচ্ছে চিকিৎসার অগ্রসর হয়েছে অনুল্লেখযোগ্য। যে যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয় চিকিৎসা খাতে সবচেয়ে কপট এবং জন অহিতৈষী তারা আজ বলছে গাঁজায় ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমে। এই তারাই আগে এটা স্বীকার করেনি। হয়তো আবার দুদিন পরই আবার অস্বীকার করবে, যতদিনে কেনেবিজের ব্যবসায় বৈধ উপায়েই কতজনের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হবে। সবটাই শুধু ব্যবসার খেল। তাদের দ্বারাই আজ সব নিয়ন্ত্রিত। কোন ইন্ডাস্ট্রি কখন ব্যবসা করার টেন্ডার পাবে তার রিলে রেইস চলছে।
২০১৩ তে ক্যান্সারের মৃত্যুবরণ করেছিলেন ধনকুবের সিঙ্গাপুরীয়ান ডাক্তার তিও । মৃদু মাত্রার ধূমপায়ী নিয়মিত জিমে যাওয়া ডা. তিও মারা গেলেন ফুসফুস ক্যান্সারে, মাত্রা ৪০ বছর বয়সে। ক্যান্সার সনাক্তের পর তাঁর সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল ৬ মাস মাত্র। শেষ সময়ে দেয়া সাক্ষাৎকারে সে বলেছিল , “ আর দশজনের মতোই আমি এই সমাজেরই ফসল যারা জানে সুখী হবার সূত্র সফল হওয়া, ধনবান হওয়া। ডাক্তার হিসেবে আমি দেখেছি মানুষ বাৎসরিক চেকআপে ২০ ডলার ব্যয় করতে চায় না। কিন্তু চর্বি কাটানোর জন্য লিপোসাকশন এ ১০,০০০ ডলার কিংবা ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট এ ১৫০০০ ডলার অবলীলায় ব্যয় করে ফেলে। আর তাই আমি রোগ নিরাময় করবার চেয়ে বিউটিফিকেশনকেই বেছে নিলাম দ্রুত ধনী হবার সিঁড়ি হিসেবে এবং ত্রিশেই আমি মিলিয়েনিয়ার হবার সুখ আস্বাদন করলাম। আমার কাছে রুগী ছিল শুধুই টাকা উৎপাদনের মাধ্যম এবং আমি তাদের নিঙড়ে শেষ কড়িটাও বের করার চেষ্টাই করেছি।
আজ নিজের মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ক্যান্সার গ্রুপে গিয়ে আমি দেখছি রুগীর চিকিৎসার এক একটা পয়সা তার গোটা পরিবারের সর্বোচ্চ ভাবনা ও উদ্বেগ। একেকবার চিকিৎসা ও ওষুধের তালিকা ধরিয়ে দেবার পর পরিবারের সঞ্চয় বা অপরিহার্য খরচ থেকে এর পাই পাই বের করতে কি নিদারুণ হিসাব নিকাশের যুদ্ধ চলে। আমি বলছি না পেশাদার হওয়া ভুল, কিন্তু মানবিক না হওয়া, বিবেকবর্জিত পেশাদারি অবশ্যই অপরাধ। আজ আবার জীবন ফিরে পেলে আমি এক নতুন ডাক্তার হতাম। আফসোস, প্রায়শই, মানুষকে যখন মৃত্যুকে চিনতে হয়, তখনই সে জানতে পারে কি করে বাঁচতে হয়।”
Advertisement
সুত্রঃ www.naturalnews.comwww.asiaone.com
এইচআর/পিআর