বছর ঘুরে ফিরে এলো ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস। ১৯৮১/৮২ সনের পর থেকে প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিপাদ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক এ দিবসটি পালন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে Our action are our Future: Healthy diets for a Zero hunger world.এর বাংলা অর্থ করা হয়েছে, আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ, পুষ্টিকর খাদ্যেই হবে আকাঙ্খিত ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী। প্রতিবারের মতো এবারের প্রতিপাদ্যও আমাদের পৃথিবীর জন্য আমাদের দেশের জন্য যথোপযুক্ত আবশ্যকীয়।
Advertisement
আজকের চলমান ঘটমান কর্ম কৃতিত্ব বিনিয়োগ ভবিষ্যতের জন্য কাঙ্খিত প্রাপ্তি সুনিশ্চিত করে। পুষ্টিকর নিরাপদ খাদ্য আমাদের দেহ মন সবল সুস্থ রাখে। আমার আমাদের যৌক্তিক কর্ম বিনিয়োগ এবং পুষ্টিকর খাদ্য একটি ক্ষুধামুক্ত দেশ ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী সুনিশ্চিত করবে। যে জন্য আমাদের দরকার দীর্ঘ মেয়াদি বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা কর্মসূচি এবং কার্যকর বাস্তবায়ন। তবেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা মাফিক অভিষ্ট লক্ষে উপনীত হতে পারবো।
পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্যের সাথে নিরাপদ খাদ্য বিশেষ বিবেচনায় আনতে হবে। নিরাপদ খাদ্য যোগানে রাসায়নিক দূষণমুক্ত উৎপাদনে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা:- রাসায়নিকের ক্রয় বিক্রয় এবং ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্যাদি সংরক্ষণ করা; সেচের পানি রাসায়নিক ঝুঁকি মূল্যায়ন ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা; সঠিক রাসায়নিক পদার্থ সঠিকভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করা; আবাদি জমিকে পরিবেশগত রাসায়নিক দূষণ হতে সুরক্ষা করা; রাসায়নিক দ্রব্যের সঠিক ব্যবহার বিধি অনুসরণ করা।
জীবনে বাঁচার জন্য আমরা খাবার খাই। খাবারের মধ্যে আছে সস্তা খাবার, বাজে খাবার এবং পুষ্টিসম্মত সুষম খাবার। আবার দামি ও সস্তা খাবারও আছে। সবচেয়ে বেশি ভালো পুষ্টিসম্মত সুষম খাবার। অনেকে মনে করেন পুষ্টিসম্মত সুষম খাবার খেতে হলে খরচ বেশি পড়বে অনেক দামি হবে। কথাটা মোটেই ঠিকনা। বুদ্ধি জ্ঞান দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা দিয়ে বিবেচনা আর ভেবে-চিন্তে তালিকা করলে কম দামেই প্রয়োজনীয় সুষম পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের জোগান দেয়া যায়। খাবারের প্রতি আমাদের যেমন অতি রসনা বিলাস আর আগ্রহ আছে পুষ্টির প্রতি কিন্তু তেমনটি নেই। সে কারণেই পুষ্টি নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় অহরহ। আমাদের দেশে পুষ্টিতে যেমন ভুগছি আবার অতিপুষ্টিতেও ভুগছি কেউ কেউ। পুষ্টি জ্ঞানের অভাবেই এমনটি হয়। একটু বিবেচনা পরিকল্পনা আর মেধা দক্ষতা খাটালে আমরা নিয়মিত পরিমিত পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেয়ে ভালোভাবে সুস্থ সবল হয়ে বেঁচে থাকতে পারি, হাজারো অসুখ-বিসুখ রোগবালাই থেকে নিজেদেরমুক্ত রাখতে পারি। আমাদের প্রয়োজন দৈহিক, মানসিক আর বুদ্ধিবৃত্তির প্রয়োজনে খাদ্য গ্রহণ।
Advertisement
বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও শিশু ও মাতৃপুষ্টি নিশ্চিতকরণ এবং ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্যের সমন্বয়ে পরিপূর্ণ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ এখনও চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে শিশু পুষ্টির জন্য মায়ের দুধ পান ও পরিপূরক খাবার গ্রহণের হার এখনও অপ্রতুল। ব্যক্তির খাবারে খাদ্য উপাদান যথাযথ পরিমাণে না থাকা বা অতিরিক্ত থাকা অপুষ্টি এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ। সুষম খাদ্য নির্বাচন ও গ্রহণের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি রোগগুলো সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী বর্তমানে ২ রকমের অপুষ্টির শিকার। খাদ্যের অভাবজনিত পুষ্টিহীনতা এবং খাদ্য সংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদি অসংক্রামক রোগ। খাদ্যের অভাবজনিত উল্লেখযোগ্য পুষ্টিহীনতার মধ্যে রয়েছে খর্বকায়, নিম্ন ওজন এবং কৃশকায়। খাদ্য সংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদি অসংক্রামক রোগগুলো হলো স্থূলতা, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার ও বেশি বয়সে হাড় নরম হয়ে যাওয়া।
আঞ্চলিক খাদ্যাভাসের সাথে খাদ্য বৈচিত্র্যকে প্রাধান্য দেয়া দরকার। মৌলিক খাদ্যগুলো ভাত, রুটি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল, শাকসবজি ও ফলমূল সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। পুষ্টিসম্মত খাদ্য গ্রহণের লক্ষ্য হলো- বাংলাদেশের জনগণের পুষ্টিগত অবস্থার উন্নয়ন এবং পুষ্টি উপাদনের অভাবজনিত রোগগুলো প্রতিরোধ করা; গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী মায়েদের যথাযথ পুষ্টিগত অবস্থা বজায় রাখা; শিশুদের সঠিকভাবে মায়ের দুধ ও পরিপূরক খাবার খাওয়ানো নিশ্চিত করা; খাদ্যাভ্যাসের সাথে সম্পর্কিত দীর্ঘমেয়াদি রোগগুলো প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ করা; বয়স্কদের সুস্বাস্থ্যের সাথে আয়ুষ্কাল বাড়ানো।
জনগণ কোন খাদ্য কি পরিমাণ গ্রহণ করবে, প্রতিদিন কি পরিমাণ তেল, লবণ, চিনি ও পানি গ্রহণ করবে সে সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক ধারণা পাওয়া যাবে। প্রতিদিন সুষম ও বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্য; পরিমিত পরিমাণে তেল ও চর্বিজাতীয় খাদ্য; প্রতিদিন সীমিত পরিমাণে আয়োডিনযুক্ত লবণ; মিষ্টিজাতীয় খাদ্য সীমিত পরিমাণ গ্রহণ; প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপদ পানি ও পানীয় পান; নিরাপদ খাদ্য ; সুষম খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত শারীরিক শ্রমের মাধ্যমে আদর্শ ওজন বজায় রাখা; সঠিক পদ্ধতিতে রান্না, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং সুস্থ জীবনযাপনে নিজেকে অভ্যস্তকরণ; গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানকালে চাহিদা অনুযায়ী বাড়তি খাদ্য গ্রহণ; শিশুকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ দিন এবং ৬ মাস পর বাড়তি খাদ্য প্রদান এগুলো।
প্রতিদিন চাহিদা অনুযায়ী ভাত, রুটি বা অন্যান্য শস্যজাতীয় খাদ্য; ভাত ও রুটির সাথে ডাল-মাছ-মাংস-ডিমজাতীয় খাবারের সমন্বয়ে তৈরি খাদ্য; চাল অতিমাত্রায় না ধুয়ে বসাভাত রান্না; লাল চাল ও লাল আটা হলো প্রোটিন, আঁশ, তেল, খনিজ লবণ ও ভিটামিনের উৎস সে জন্য পারতপক্ষে এগুলো বেশি করে গ্রহণ। খাদ্য গ্রহণের পর আয়রনের পরিশোষণ বাড়ানোর জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল আমলকী, পেয়ারা, জাম্বুরা, পাকা আম খাওয়া; প্রতিদিন অন্তত ১০০ গ্রাম বা ১ আঁটি শাক এবং ২০০ গ্রাম বা ২ কাপ সবজি গ্রহণ; সুস্থতার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ১ কাপ (১৫০ মিলিলিটার) দুধ বা আধা কাপ দই গ্রহণ; বৃদ্ধকালে ননিতোলা দুধ এবং সয়াদুধ গ্রহণ করুন।
Advertisement
গর্ভাবস্থায় আয়রন সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন মাংস, বুটের ডাল, পাটশাক, কচুশাক, চিড়া; এ সময় মৌসুমি ফল বিশেষ করে খাবারের পর পর খাওয়া; চা, কফি প্রধান দুই খাবারের মধ্যবর্তী সময়ে গ্রহণ; গর্ভাবস্থায় সঠিক ওজন বৃদ্ধি বজায় রাখা; একবারে খেতে না পারলে বারে বারে খাওয়া; খাবার সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার এড়িয়ে চলা; নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও চেকআপ করানো।
শিশু জন্মের পর ১ ঘণ্টার মধ্যে শাল দুধ পান করানো; শিশুর বৃদ্ধির জন্য ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানো; প্রসূতি মায়ের জন্য পারিবারিকভাবে আন্তরিক সহযোগিতা ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করা; শিশুর ৬ মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি যথাযথ পরিপূরক খাবার আলুসিদ্ধ, ডিমসিদ্ধ, পাকাকলা, খিচুড়ি দেয়া এবং ২ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো; ১ বছর বয়স থেকে শিশু নিজে নিজে খাবে, জোর করে খাওয়ানো ঠিক নয়; শিশুকে কোমল ও মিষ্টি পানীয় দেয়া থেকে বিরত রাখা কেননা এগুলো দাঁতের ক্ষয় ঘটায়।
সবজি রান্নার জন্য উচ্চ তাপে ও কম সময়ে রান্নার পদ্ধতি অনুসরণ করা; ভাঁপানো এবং সেঁকা খাবার বেশি পুষ্টিসম্মত; কাটার পরে ফল ও সবজি বাতাসে খোলা অবস্থায় না রাখা; রান্নার সময় ঢাকনা ব্যবহার করা; কম পানিতে কম মশলায় রান্না; ভাজায় ব্যবহৃত তেলে পুনঃব্যবহার এড়িয়ে চলা; রান্নার পর খাদ্যাভ্যাসের জন্য: খাবার সময়মতো গ্রহণ এবং অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ এড়িয়ে চলা; খাবার ভালোমত চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস কার; খাবারের শেষে মৌসুমি ফল খাওয়া; কম বয়সী ও বৃদ্ধদের অতিরিক্ত খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত রাখা।
বাসি, পচা ও দূষিত খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষের মারাত্মক অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাকের আক্রমণ খাদ্য ও পানীয়কে বিষাক্ত করে তোলে। ইঁদুর ও বিষাক্ত পোকামাকড় খাদ্যকে অগ্রহণযোগ্য করে তোলে। খাদ্য তৈরিতে নিয়োজিত ব্যক্তির উন্মুক্ত কাটাস্থান ও ক্ষত এবং ব্যক্তিগত অপরিচ্ছন্নতার কারণে খাদ্য দূষিত হয়। ধুলাবালি, মশামাছিও খাদ্যকে দূষিত করে। অনেক সময় জুস, খোলা সরবত ও কোমল পানীয় তৈরিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মানা হয় না। যার ফলে খাদ্যবাহিত বিভিন্ন রোগ টাইফয়েড, ডায়রিয়া, আমাশয় এসবে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়াও খাদ্যে ভেজাল দ্রব্য মিশ্রণ, অনুমোদনবিহীন ও মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর রঙ ও গন্ধের ব্যবহার করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
টিনজাত ও প্যাকেটজাত খাদ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ টেস্টিং সল্ট, ট্রান্সফ্যাট ছাড়াও অনুমোদনবিহীন ও মাত্রাতিরিক্ত খাদ্য সংযোজন দ্রব্য ব্যবহার করা হয়, যা দেহে স্থূলতা, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। শাকসবজি ফলফলাদি, মাছে ফরমালিনের অপব্যবহার হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। প্রাকৃতিকভাবে পরিপক্ব ফল ও শাকসবজিতেই পুষ্টিগুলো পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায়। খাবার প্রস্তুত ও গ্রহণকালে খাদ্য নির্বাচন, লেবেল, খাদ্য সংরক্ষণ, উৎপাদন ও মেয়াদ, খাদ্য হস্তান্তর এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত জ্ঞান ও ধারণা খাদ্যকে নিরাপদ করে এবং সুস্বাস্থ্য অটুট রাখতে সাহায্য করে।
ভরা মৌসুমে পরিপক্ব শাকসবজি ও ফলমূল ক্রয় পুষ্টিতে পরিপূর্ণ এবং সাশ্রয়ী; খাদ্য গ্রহণের আগ পর্যন্ত পচনশীল খাদ্যকে ফ্রিজে বা ঠাণ্ডা জায়গায় রাখা; দূষিত পানি দ্বারা তৈরি এবং জীবাণুযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা; মাছ, মাংস, শাকসবজি ও ফলমূল ক্রয় করার সময় যথাসম্ভব রঙ, গন্ধ ও আকার যাচাই করা; কাটা, ক্ষতযুক্ত খাদ্যদ্রব্য ও পাখি দ্বারা দূষিত খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা; ঢাকনাবিহীন বা খোলা খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের সাথে শারীরিক কসরতের ও প্রয়োজন আছে অনেক। সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত ও পরিমিত ব্যায়াম করা খুব জরুরি। সেজন্য আমাদের প্রতিদিন- গৃহস্থালির কাজকর্ম করা; যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা; লিফট বা চলন্ত সিঁড়ি ব্যবহারের পরিবর্তে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা। সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং শারীরিক শ্রমের সমন্বয়ে আদর্শ ওজন বজার রাখা; প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০-৪৫ মিনিট বিভিন্ন শারীরিক শ্রম যেমন- হাঁটা, দৌড়ানো ব্যায়াম করা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা এসবে অভ্যস্ত হওয়া: খাদ্য গ্রহণের পরে হালকা শারীরিক শ্রম যেমন হাঁটা অথবা ঘরের কাজকর্ম করা খুব দরকার।
খাদ্য গ্রহণে আমাদের অনেক বদঅভ্যাস যেমন যে খাবারটি আমরা বেশি পছন্দ করি তা বেশি খাই সব সময় খাই। খাবার টেবিলে আমাদের খাদ্যে ডাইভারসিটি কম। কিন্তু জরুরি দরকার বেশি সংখ্যক খাদ্যের সমাহার। প্রতিদিন প্রতি বেলায় কিছু শাকসবজি, ফল, আমিষ এসবের সাথে ভাত থাকতে পারে। আমাদের আরেকটি ত্রুটি হলো আমার ৩ বেলা বেঁধে খাই। সকাল দুপুর রাত। কিন্তু নিয়ম হলো দিনভর সময় সুযোগ পেলে হালকা কিছু খাবার সব সময় খাওয়া। এতে পুষ্টিশক্তি সুষমতা রক্ষা পায় অনায়াসে। সতেজ বিষমুক্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের প্রতি আমাদের যেন বেশি নজর থাকে সে দিকে সতর্কতার সাথে লক্ষ রাখতে হবে। পুষ্টিসম্মত খাবার খেয়ে আমরা পুষ্টিসমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত হব এটাই হোক আমাদের নিত্য এবং আন্তরিক ও কার্যকর অঙ্গীকার।
আমাদের দরকার আমাদের সক্ষমতার মধ্যে পুষ্টিসম্মত নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করা, এর প্রচার সম্প্রচার বিস্তার, কৃষি চেইনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় খাদ্যের জোগান। পৃথিবীতে এখনো দশভাগের একভাগ মানুষ দূষিত খামার খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন। এ কারণে শিশুরা শিখতে পারছেনা, বয়স্করা কাজ করতে পারছেন না, মানবীয় উন্নয়ন সমৃদ্ধি যথাযথভাবে হচ্ছে না। পরিবর্তিত জলবায়ুর কথা মাথার রেখে আমাদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে পুষ্টি এবং প্রয়োজনীয় খাবার এসবের চিন্তা করতে হবে আবশ্যকীয়ভাবে। ধনী গরীব আবাল বৃদ্ধ বণিতা নারী পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী আমরা গড়তে পারবোই। সবচেয়ে বড়কথা আমাদের কৃষক এবং কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই মিলে যখন ভাববো কাজ করবো তখন অবশ্যই আমাদের প্রাণের পৃথিবীকে আমরা ক্ষুধামুক্ত করতে রাখতে পারবোই।
আমাদের বরাদ্দের বিবেচ্য অংশ্য পুষ্টি এবং সুস্থ সবল স্বাস্থ্য গঠনে ব্যয় করতে হবে। আমাদের নীতি কর্মসূচি যদি বাস্তবসম্মত হয় তবেই আমরা এগিয়ে যেতে পারবো সন্মুখপানে। পুষ্টিকর মানে দামি খাবার নয় মলা ঢেলা ছোট মাছ কচুলতা পাতা সহজিয়া খাবারগুলো আমাদের কাঙ্খিত পুষ্টি যোগান নিশ্চিত করে। সেখান থেকেই আমারা নিয়মিত পরিমিত পুষ্টি পেয়ে নিজে পরিবার সমাজ দেশ পৃথিবী ক্ষুধামুক্ত করতে পারবো। সুস্থ সবল থেকে সুন্দরের জয়গান গাইতে পারবো। আমাদের দরকার স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য পরিবেশ উৎপাদন থেকে শুরু করে উত্তোলন পরিষ্কারকরণ প্রক্রিয়াজাতকরণ রান্না খাওয়া সংরক্ষণ সব কিছুইতেই বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি কৌশল সুনিশ্চিত করা এবং এসব করতে হবে সম্মিলিতভাবে প্রয়োজনের সময়। এককভাবে করার কোন সুযোগ নেই কাজেও লাগবে না। খাদ্য বাণিজ্যিকীকরণে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবেশসম্মত উপায়ে খাদ্য উৎপাদন করে যদি একই পদ্ধতি কৌশল অবলম্বন না করা হয় বাণিজ্যিকীকরণে তাহলে আমরা কাঙ্খিত সীমানায় পৌঁছতে পারবো না। মোটকথা খাদ্য পরিবেশ সৃষ্টি করে এগুতে হবে সামনের দিকে। কৃষি উৎপাদনে আমরা পরিবেশবান্ধব জৈবকৃষি অনুসরণ করবো। আইপিএম বা সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা ফেরোমেন ট্র্যাপ ব্যবহার করবো। সময় মতো চাষাবাদ করে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা সুনিশ্চিত করে সোনার ফসল ঘরে তুলবো সুস্থ থাকবো দেশকে ক্ষুধা মুক্ত করবো আমাদের সুকর্ম আমাদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার নিশ্চয়তা দেবে।
লেখক : অতিরিক্ত পরিচালক, হর্টিকালচার উইং, ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা।
এইচআর/পিআর