নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদী সংলগ্ন বাংলাদেশ কালীগঞ্জ বিজিবি (বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড) ও থানার হাট বিজিবি সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে ভারতীয় গরু আসছে। অন্য বছরের তুলনায় ভারত থেকে গরু কম আসার কারণে গরুর দাম বেশি বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। অপরদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা গরুর দাম কম বলে দাবি করছে। প্রতিটি গরু থেকে কাস্টমস এর মাধ্যমে ৫শ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হচ্ছে। গরুর বৈধ কাগজের জন্য পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িবাড়ী কাস্টমস থেকে কাগজ তৈরি করতে আনতে হয়। এর জন্য গরু ব্যবসায়ীদের গরু কেনার পরও বিকেল ৫টা পর্যন্ত গরুর বৈধ কাগজের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। প্রতিটি গরু ভারত থেকে বাংলাদেশের আসার পর ৪ থেকে ৫ জন ব্যবসায়ীর হাত বদল হচ্ছে। এতে করে ভারতে যে গরুর দাম ২৫ হাজার সেটি ঢাকায় পৌঁছাতে দাম পড়ে যাচ্ছে ৫০ হাজার টাকা।সরেজমিনের মঙ্গলবার সকালে কালীগঞ্জ বিজিবি সংলগ্ন তিস্তার পাড়ের গরুর বিটে দেখা যায়, সেখান ৪৪টি গরু ভারত থেকে এসেছে। গরু আমদানি কম হলে পাইকারি ব্যবসায়ীর সংখ্যায় বেশি। প্রতিটি গরু বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। গরু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ গত কয়েক বছরের তুলনায় গরুর আমদানি কম হলেও গরুর দাম ব্যবসায়ীদের নিকট বেশি নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্তের তিস্তা নদীর অভ্যন্তরে ভারতের পানিয়ালের চর ও বেলতলী চরে ভারতের গরু ব্যবসায়ীরা গরু পৌঁছে দেন। সেখান থেকে বাংলাদেশের রাখাল গিয়ে গরুগুলো বিটে নিয়ে আসে। এর জন্য প্রতিটি গরুর জন্য রাখালদের ৫শ থেকে ৮শত টাকা দেয়া হয়। রাখাল আবুল কালাম (৩৫) বলেন, একজন একই সঙ্গে ৪টি গরু নিয়ে আসতে পারে। তিস্তা নদীটি পার করে দিতে পারলে প্রতিজন রাখাল পায় ২ হাজার টাকা। ভোরে সেখানে শত শত রাখাল ভারতের গরুর জন্য অপেক্ষা করে। স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী আব্দুল (৩২) জানায়, ভারতীয় গরু ব্যবসায়ী অবিজল ইসলামের নিকট ৪ লাখ টাকা জামানত দেয়া হয়। তিনি প্রতিদিন ১০- ১২টি গরু বিক্রির জন্য বাংলাদেশে তার নিকট পাঠায়। গরু বিক্রির সময় মোবাইল ফোনে ভারতীয় ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে দাম নিশ্চিত করার পর তা বিক্রি করা হয়। বিক্রির পর খরচ বাদে যে টাকা লাভ হয় তা ২ভাগে ভাগ করে নেয়া হয়। এতে প্রতিদিন তার লাভ হয় ১০-১২ হাজার টাকা। অপরদিকে বিটের মালিক ও গরু ব্যবসায়ী পূর্ব ছাতনাই ইউপি সদস্য বদিউজ্জামান (৩৮) জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন যে গরু ভারত থেকে আসে সন্ধ্যায় তার টাকা সীমান্তে গিয়ে ভারতের গরু ব্যবসায়ীদের নিকট হাতে হাতে পৌঁছে দেয়া হয়। আরেক গরু ব্যবসায়ী খলিল হোসেন (৫৫) বলেন, ভারতের গরু ব্যবসায় অনেকে সর্বশান্ত হয়েছে। ভারতের গরু ব্যবসায়ীদের অগ্রিম টাকা দেয়ার পর তারা আর ব্যবসা করছে না। ভারত সীমান্তে বিএসএফের পাহারা বৃদ্ধির কারণে এ সীমান্তে গরু কম আসছে। গরু ব্যবসায়ী বিপ্লব (৩০) জানায়, প্রতিটি গরু ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় কিনে ট্রাকে করে টাঙ্গাইলে ভুঞাপুরে পাঠানো হয়। প্রতিটি ট্রাকে ১২টি গরু পাঠালে সেখানকার গরু ব্যবসায়ী কমিশনে তার লাভ প্রদান করেন। থানার হাট বিজিবি ক্যাম্পর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মতুজা আলম জাগো নিউজকে বলেন, গত জুলাই মাসে ৭৭৭টি গরুর জন্য ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৫শ, আগস্ট মাসে ৫১২টি গরুর জন্য ২ লাখ ৫৬ হাজার ও সেপ্টেম্বর মাসে (২২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ৬২৫টি গরুর জন্য ৫শ টাকা করে ৩ লাখ ৫০হাজার টাকা কাস্টমসের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। কালীগঞ্জ বিজিবির ক্যাম্প কমান্ডার মজিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রম করে যাতে ব্যবসায়ীরা ভারত সীমান্তে গিয়ে গরু নিয়ে আসতে না পারে সেদিকে সর্বাত্মক নজর রাখা হয়েছে। প্রতিটি গরু বিক্রির পর বাংলাদেশ কাস্টমসে কাগজপত্র নিশ্চিত করা হয়। জাহেদুল ইসলাম/এসএস/আরআইপি
Advertisement