‘চটকদার প্রকল্পের ঘোষণা করে কাজের কাজ কিছু হবে না। গরিব মানুষের হাতে বেশি বেশি করে টাকা তুলে দিতে হবে। না হলে বাজারে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বাড়বে না। বাড়বে না বিক্রিও।’
Advertisement
অর্থনীতির বেহাল দশা কাটিয়ে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে ভারত, তার উপায় বাতলে দিতে গিয়ে এসব কথা বলেছেন অর্থনীতিতে সদ্য নোবেল পুরস্কারজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পর অভিজিৎ এসেছিলেন ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি)। সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। ইংরেজিতে বলা শুরু করলেও ওই অংশটুকু মাতৃভাষা বাংলায় বলেন অভিজিৎ।
ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি সরকারের দ্বিতীয় জমানায় ভারতের অর্থনীতির অবস্থা কেমন? সাংবাদিকদের প্রশ্নে কোনো রাখঢাক না করেই অভিজিতের জবাব, ‘আমার মতে, (ভারতের) অর্থনীতির হাল এখন খুব খারাপ। সরকারের রাজকোষে ঘাটতি বিপুল পরিমাণ। তবু তারা সকলকে খুশি করার জন্য চেষ্টা করছে। তারপরও ভান করছে, বাজেটে ঘোষিত ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখা যাবে।’
>>গরিবের টাকা নেই, তাই পণ্য কিনতে পারছেন না
Advertisement
অভিজিতের বক্তব্য, এটা করলে কাজের কাজ কিছু হবে না। ভারতের অর্থনীতির গতি খুব দ্রুত শ্লথ হয়ে পড়ছে। সরকার যেভাবে চলছে, তাতে এই সমস্যা থেকে ভারতকে চট করে বের করে আনা যাবে না।
সদ্য নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘চাহিদার অভাবই এখন ভারতের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সমস্যা। দেশের বাজারে পণ্যের অভাব নেই। কিন্তু তা কেনার জন্য গরিব ও মধ্যবিত্তের হাতে টাকা নেই। সাধারণ মানুষ ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। তাই পণ্য প্রচুর হলেও তার চাহিদা বাড়ছে না ভারতের বাজারে। শুধুই বড়লোকদের হাতে টাকা তুলে দিলে হবে না। গরিব ও মধ্যবিত্তদের হাতে টাকা তুলে দেয়ার প্রয়োজনটাই বেশি।’
>>শহর, গ্রামে পণ্যের বিক্রি কমল বহু বছর পর
ভারতের জাতীয় নমুনা পরিসংখ্যান সমীক্ষার সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, শহর ও গ্রামাঞ্চলে গড় বিক্রির হার কমেছে। অভিজিতের মতে, ‘অনেক অনেক বছর পর এমনটা হল। এটা সত্যিই খুব উদ্বেগের চিহ্ন।’
Advertisement
>>সরকারও বুঝতে পারছে, ভুল হচ্ছে...
পরিসংখ্যান নিয়ে টানাপড়েন যে ভারতে নতুন নয়, তার উল্লেখ করে অভিজিৎ বিনায়ক বলেন, ‘অস্বস্তিকর সব পরিসংখ্যানকেই সরকার ভুল বলে থাকে। তা সত্ত্বেও, আমার মনে হয়, কোথাও যে একটা ভুল হচ্ছে, সরকারও সেটা বুঝতে পারছে। অর্থনীতির গতি খুব দ্রুত শ্লথ হচ্ছে। আর সেটা হচ্ছে মূলত ভারতের বাজারে চাহিদার অভাবেই।’
যদিও বেহাল দশা থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসতে পারে ভারতের অর্থনীতি, সেটা তার ‘জানা নেই’ বলেও স্বীকার করেন অর্থনীতিতে সদ্য নোবেলজয়ী এই বাঙালি।
>>রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতে প্রকল্প ঘোষণায় লাভ নেই!
অভিজিত বলেন, ‘শুনতে ভালো লাগে বা রাজনৈতিক ফায়দা রয়েছে, এমন প্রকল্প ঘোষণার প্রবণতা ভারতের দীর্ঘ দিনের। কিন্তু সরকারের উচিত এমন সব প্রকল্প ঘোষণা করা, যা সত্যি সত্যিই কাজে আসবে। গরিব মানুষের কাজে লাগবে। তাদের হাতে টাকা জোগাবে। শুধুই কার্যকর হচ্ছে বলে মনে হওয়াতে আটকে থাকবে না।’ আনন্দবাজার।
এসআইএস/জেআইএম