দেশজুড়ে

সিলেটে নিষ্ক্রিয় বিএসটিআই

প্রয়োজনীয় মান পরীক্ষা ছাড়াই সিলেটের বাজারে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে অধিকাংশ খাদ্য সামগ্রীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। এতে ভোক্তারা শুধু ঠকছেই না, ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে স্বাস্থ্যের ওপরও। নিরুপায় হয়ে এসব ব্যবহার করে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

Advertisement

এসব কারণে সিলেটে বরাবরই প্রশ্ন ওঠছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) কার্যক্রম নিয়ে। কেবল রমজান মাস এলেই তাদের কিছু কার্যক্রম চোখে পড়ে। তাছাড়া বছরের অধিকাংশ সময়ই সিলেটে নিষ্ক্রিয় থাকে সরকারের এই সংস্থাটি। ফলে মানহীন পণ্যও চড়া মূল্যে কিনতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ। নানাভাবে অভিযোগ করেও ফল পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা।

তবে জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত তদারকি অভিযান হয় না বলে জানিয়েছেন বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা। এমনকি সংস্থাটির নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় জেলা প্রশাসনের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। ফলে নিয়মিত তদারকিতে অনেকটা নিষ্ক্রিয় তারা।

বাংলাদেশে কোনো পণ্য, সেবা বা প্রক্রিয়ার মান নির্ধারণ করে থাকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এই প্রতিষ্ঠানটির কাজ হলো পণ্য সামগ্রীর মান প্রণয়ন, প্রণীত মানের ভিত্তিতে পণ্যের গুণাগুণ পরীক্ষা, বাধ্যতামূলক মান সনদের আওতাভুক্ত পণ্যগুলো পরীক্ষার পর সনদ দেয়া ও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সার্টিফিকেট দেয়া। এছাড়া ম্যাট্রিক পদ্ধতির প্রচলন, বাস্তবায়নসহ ওজন ও পরিমাপের সঠিকতা তদারকি করে বিএসটিআই। অন্যদিকে মান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিনিধিত্ব করে এ সংস্থাটি।

Advertisement

গেল বছর ও চলতি বছর বিএসটিআইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ১৫৪টি বাধ্যতামূলক পণ্যের সঙ্গে যুক্ত হয় আরও কিছু পণ্য। এর ফলে বর্তমানে তাদের বাধ্যতামূলক পণ্য হচ্ছে ১৯১টি। শিশুদের জন্য তৈরি নানা আইটেমসহ মুড়িও এই তালিকায় আনা হয়। এই পণ্যগুলো উৎপাদন ও বাজারজাত করতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মান সনদ গ্রহণ করতে হবে। সঙ্গে পণ্যের মোড়কে বিএসটিআইয়ের লোগো থাকতে হবে। এ সংক্রান্ত আইনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলা হলেও কার্যকর হচ্ছে না কোনো কিছুই। অনিশ্চয়তার মধ্যেই এসব মানহীন পণ্য ক্রয় করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

এদিকে সিলেট নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বিএসটিআইয়ের তালিকার বাইরে আরও অসংখ্য প্রক্রিয়াজাতকৃত ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য কোনো ধরনের মান যাচাই ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে। প্রায় সব দোকানেই বিএসটিআইয়ের সিল ছাড়াও পণ্য রয়েছে। আবার বিএসটিআইয়ের আওতাভুক্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিএসটিআইয়ের মান যাচাই ছাড়াই বাজারে বিক্রি হচ্ছে। গ্রামগঞ্জের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।

শুধুমাত্র রমজান মাস এলেই কিছুটা সক্রিয় হয় সংস্থাটি। মাসব্যাপী অভিযান চালিয়ে সারা বছরের দায় সেরে নেন কর্তারা।

জানা গেছে, এ বছর বিএসটিআই যতটা অভিযান পরিচালনা করেছে তার বেশিরভাগ শহর কেন্দ্রিক। শহরের বাইরে যে কয়েকটি অভিযান হয় তাও আবার উপজেলা সদরে। এর বাইরে বিএসটিআই কর্মকর্তাদের পা পড়ে না। তবে পণ্যের গুণগত মান প্রণয়ণের দায়িত্ব না থাকলেও ভেজালবিরোধী ও বিভিন্ন বিষয়ে তদারকি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সিলেটের কর্মকর্তারা। রমজান মাস ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তাদের কার্যক্রম চোখে পড়ার মত।

Advertisement

গত সেপ্টেম্বর মাসে সিলেট জেলা ভোক্তা অধিকার অফিস ১৪ তদারকি অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব অভিযানে ৪০টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্নভাবে শাস্তি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে আরও ২১টি। এর মধ্যে ৮টি প্রমাণিত হয়েছে ও বাকিগুলোর মধ্যে কয়েকটি খারিজ হয়েছে ও কয়েকটি প্রমাণিত হয়নি। একইভাবে ভোক্তা অধিকারের সিলেট মেট্রোর পক্ষ থেকেও গত মাসে ১২টি অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে ৫০টির মত প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সিলেটের সভাপতি জামিল চৌধুরী বলেন, বিএসটিআই সনদ দেয়ার পর এখতিয়ারভুক্ত পণ্যগুলোর যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে কি-না তাও নিবিড়ভাবে তদারকি করে না সংস্থাটি। ফলে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ মানহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ ও দুষিত খাবার খাচ্ছে। অথচ বিএসটিআইসহ নিয়ন্ত্রণকারী সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

তিনি বলেন, পণ্যের মান সঠিকভাবে প্রণয়ন ও অব্যাহত রাখতে বিএসটিআইয়ে জনবল বাড়াতে হবে। সিলেটে বিভাগীয় পর্যায়ে মাত্র কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছে। তাদের পক্ষে পুরো সিলেটকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। তাই হাতেগোনা কয়েকটি অভিযান চালিয়ে পণ্যের মান যাচাই করা সম্ভব না।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সিলেট জেলার সহকারী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের কাজই হচ্ছে তদারকি করা। আমরা প্রতি মাসেই অভিযান পরিচালনা করে থাকি। জেল-জরিমানা করেও মানুষকে সচেতন করা যায় না। গত মাসেও ১৪টি অভিযান চালিয়ে ৪০টি প্রতিষ্ঠান থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ মাসেও হয়েছে। আমাদের অবস্থান থেকে চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি।

এ ব্যাপারে বিএসটিআই সিলেটের সহকারী পরিচালক (পদার্থ) প্রকৌশলী মো. শাহাদৎ হোসেন জানান, বর্তমানে আমাদের বাধ্যতামূলক পণ্য হচ্ছে ১৯১টি। পণ্যের মান যাচাইয়ে আমরা বিভিন্নভাবে কাজ করে থাকি। তবে আমাদের জনবল কম থাকায় সবসময় অভিযান পরিচালনা করা যায় না। তাছাড়া আমাদের সংস্থার ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় জেলা প্রশাসনের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। তারাও অনেক সময় ব্যস্ত থাকেন। ফলে অনেক সময় অভিযান কম হয়।

তিনি বলেন, শুধু মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেই মান ভালো রাখা যায় না। আমরা মানুষকে বিভিন্নভাবে ‘মোটিভেশন’ করার কাজ করি। মানুষকে সচেতন করতে পারলে আর অভিযানের প্রয়োজন হয় না। তাই অভিযান ছাড়াও আমরা সচেতনতামূলক কাজ করে থাকি।

ছামির মাহমুদ/আরএআর/পিআর