জলাবদ্ধতার কারণে রূপগঞ্জের ২ লাখ মানুষ এবার ঈদ-উল-আযহার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে। ২টি পৌর এলাকাসহ ৭ ইউনিয়নের ২৫ গ্রামের মানুষ গত ৩ মাস ধরে পানিবন্দি রয়েছে। এদের জীবনযাত্রা প্রায় বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, জলাবদ্ধতার কারণে এখানকার প্রায় ২ শতাধিক খুদ্র ও কুটির শিল্প কারখানা বন্ধ রয়েছে। অর্থনৈতিক ভাবে এদের অবস্থা এখন খুবই নাজুক। গত সপ্তাহ পর্যন্ত জলাবদ্ধতা কমলেও গত ৩ দিনের বৃষ্টিতে অনেক এলাকা আবার নতুন করে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। তাই এ সকল পরিবারগুলোতে নেই ঈদের আনন্দ। অনেকেই এখন পুঁজি ভেঙে খাচ্ছেন। ছেলে মেয়েদের ঈদে জামা কাপড়তো দূরের কথা তাদের হাতে এখন কোরবানির পশু কেনার মতো টাকা নেই। গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল মতিন জানান, জনেণের দুর্দশার কথা চিন্তা করে আমরা আটকে পড়া পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করছি। আগে কোনদিন এলাকায় জলাবদ্ধতা ছিল না। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানার কারণে এখন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে শিল্প কারখানার মালিকদের অনুরোধ করেছি বাঁধের ভেতরে পানি না ফেলার জন্য। যদি তারা এ ব্যাপারে কথা না শুনে তাহলে আমরা আইনিভাবে অগ্রসর হবো।এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লোকমান হোসেন বলেন, ঈদের পরে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও ভরাট হয়ে যাওয়া ক্যানেল সংস্কার করা হবে। কেবল তারাব পৌরসভার অগ্রণী সেচ প্রকল্পের ভেতরেই ১ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এ ব্যাপারে পৌর মেয়র শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা রাত দিন পানি নিষ্কাশনের চেষ্ট করছি, নতুন করে কয়েকটি পাম্পও বসানো হয়েছে। আবারও টানা বৃষ্টিতে নতুন করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পৌর কাউন্সিলর মতিন ভূঁইয়া জানান, সেচ প্রকল্পের খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধ পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অনেক জনপ্রতিনিধি কারখানার মালিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চুপ থাকেন তাই জলাবদ্ধতা নিরসন হচ্ছে না। এখানে কারখানাগুলো গড়ে উঠায় খেলাধুলা তো দূরের কথা মানুষ পানিবন্ধি হয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অন্যদিকে কারখানার বর্জেও কারণে বিপর্যয় হচ্ছে পরিবেশ।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা ব্লিচিং অ্যান্ড ডাইং, হার্ভেস্ট ও ইউনিয়ন স্টিল টিউবের (বিষাক্ত এসিড পানি) বর্জ্যের পানি পঁচে দুগন্ধ ছড়াচ্ছে সর্বত্র। রেজা গ্রুপের মেসাস পদ্মা ব্লিচিং অ্যান্ড ডাইং ও মেসাস ইউনিয়ন স্টিল টিউব লিমিটেডের বর্জ্য (বিষাক্ত এসিড পানি) এলাকার পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় হচ্ছে। ফলে মানুষের বসবাসের অনুপযোগীসহ এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান দুটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেও তারা এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। জানা যায়, পদ্মা ব্লিচিং অ্যান্ড ডাইং মিলে ইটিপি থাকা সত্বেও তা ব্যবহার করা হচ্ছে না এমন অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। ফলে রংয়ের পানিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বলাইখার কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, এলাকাবাসীর উদ্যােগে কয়েকবার পানি নিষ্কাশনসহ ক্যানেল পরিষ্কার করা হয়েছে। তাতে কোন লাভ হয়নি। আগে এখানে আটকা পড়া বৃষ্টির পানি স্বাভাবিকভাবে বের হতো। এখন বৃষ্টির পানির সঙ্গে রংয়ের পানি, পলিথিন ও কারখানার বর্জ্যের ময়লা একত্রে মিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে মহাসড়কে মানববন্ধন পালন করেছেন এলাকাবাসী। তারপরও জলাবদ্ধতা নিরসনে আজ পর্যন্ত কোনো মহলই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। মীর আব্দুল আলীম/এসএস/পিআর
Advertisement