ভৈরবে মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রানু বেগম নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে করসন ও লেসিস নামে দুটি ইনজেকশন দেয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে মারা যান ওই প্রসূতি।
Advertisement
চিকিৎসকের ভুলের কারণে প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের। মৃত প্রসূতি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মানিকনগর গ্রামের শাহজাহানের স্ত্রী রানু বেগম। ঘটনার পরপরই হাসপাতালের চিকিৎসকরা পালিয়ে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সকালে অন্তঃসত্ত্বা রানু বেগমকে ভৈরব বাসস্ট্যান্ড এলাকার মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওই দিন রানুর সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার নির্ধারিত দিন ছিল। হাসপাতালে ভর্তির পর ওই দিন দুপুরে সিজারিয়ান অপারেশন করলে তার পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। রানুর সিজারিয়ান অপারেশন করেন হাসপাতালের চিকিৎসক মো. শফিকুল ইসলাম এবং অ্যানেসথেসিয়া দেন চিকিৎসক রাজীব।
Advertisement
রানুর স্বজনরা জানান, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মা ও শিশু সন্তান সুস্থ ছিল। শনিবার সকাল ১০টার দিকে হঠাৎ রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন চিকিৎসক রাজীবের নির্দেশে রানুকে দুটি ইনজেকশন দেন হাসপাতালের নার্স মোমেনা বেগম। করসন ও লেসিস নামে দুটি ইনজেকশন দেয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই মারা যান রানু।
তখন চিকিৎসক রাজীব রানুর স্বজনদের জানান রোগীর অবস্থা ভালো না, রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে হবে। পরে তড়িঘড়ি করে কোনোরকম ছাড়পত্র ছাড়াই অ্যাম্বুলেন্স ডেকে রোগীকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরার নীলকুঠি এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি দাঁড় করান রোগীর স্বজনরা। এ সময় স্বজনরা দেখতে পান রানুর কোনো নড়াচড়া নেই, শরীর ঠান্ডা। মূলত মৃত রোগীকে ঢাকায় পাঠাচ্ছেন চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
পরে অ্যাম্বুলেন্স ঘুরিয়ে রানুর লাশ নিয়ে হাসপাতালে আসেন স্বজনরা। সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের পুরো ঘটনা জানানো হয়। এ সময় রানুর মায়ের বুকফাটা কান্না দেখে উপস্থিত সবার চোখে পানি চলে আসে। পুরো ঘটনা তদন্ত করে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিচার দাবি করেছেন রোগীর স্বজনরা।
কাঁদতে কাঁদতে রানুর মা রিনা বেগম বলেন, আমার সুস্থ মেয়েকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে মেরে ফেলেছে চিকিৎসকরা। হাসপাতালে মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকায় চিকিৎসার জন্য লাশ অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে পালিয়ে গেছেন চিকিৎসকরা। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
Advertisement
পুলিশ জানায়, অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রসূতির মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। মা মারা গেলেও তার ভূমিষ্ঠ শিশু সন্তানটি সুস্থ আছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে পুলিশ।
হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নার্স মোমেনা বেগমের নার্সিং ট্রেনিং সার্টিফিকেট নেই। তিনি রোগীকে যে দুটি ইনজেকশন দিয়েছেন তা সম্পর্কেও কোনো ধারণা নেই। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে তিনি নার্স হয়েছেন।
রানু বেগমের ভাসুর মো. সবুজ বলেন, চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারণে রানুর মৃত্যু হয়েছে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর দুদিন রানু সুস্থ ছিল। সকালে হাসপাতাল থেকে জানানো হয় রোগীর অবস্থা ভালো না, তাকে ঢাকায় পাঠাতে হবে। এ কথা শুনে আমি হাসপাতালের দিকে রওনা দেই। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছার আগেই কোনো কাগজপত্র ছাড়াই রানুরকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। পথিমধ্যে অ্যাম্বুলেন্স দাঁড় করিয়ে দেখি ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে রানুর লাশ। কারণ হাসপাতালেই রানুর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে এসে দেখি চিকিৎসক এবং নার্স কেউ নেই। পরে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়।
ভৈরব থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রাসেল বলেন, স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে মরদেহ থানায় নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানতে চাইলে হাসপাতালের এমডি চিকিৎসক বুলবুল আহমেদ বলেন, শ্বাসকষ্টজনিত রোগে মারা গেছে রোগী। ইনজেকশন বা ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে এ কথা সঠিক নয়।
আসাদুজ্জামান ফারুক/এএম/এমকেএইচ