জাতীয়

দেয়ালে দেয়ালে প্রতিবাদের ভাষা, আবরারের পর কে?

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে চলমান আন্দোলন দুদিনের জন্য শিথিল করলও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ থেমে নেই।

Advertisement

আবরারের হত্যার বিচার, আবরারের সহকর্মীদের ওপর নির্যাতন, বুয়েটের উদাসীন প্রশাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্বসহ বুয়েটজুড়ে নানা দেয়াল চিত্র এখন বুয়েটের প্রতিটি দেয়ালে।

শিক্ষার্থীরা জানান, বিচারের দাবি যাতে আড়ালে চলে না যায় সে জন্য ক্যাম্পাসজুড়ে আবরারের উপস্থিতি মনে করিয়ে দিতে এই দেয়াল চিত্র। দেয়াল চিত্রের পাশাপাশি লেখনির মাধ্যমে আবরার হত্যার বিচার এবং হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে।

বুয়েটের শহীদ মিনার গেটের ভেতরের সড়কে সাদা ও লাল রঙ দিয়ে লেখা হয়েছে ‘জাস্টিস ফর আবরার’। ক্যাম্পাসের প্রতিটি দেয়ালে আবরারের চেহার ছাপসহ ‘জাস্টিস ফর আবরার’ লেখা হয়েছে।

Advertisement

বুয়েট শহীদ মিনারের বিপরীতমুখী দেয়ালে বুয়েট প্রশাসনের ব্যঙ্গচিত্র আঁকা হয়েছে। দেয়ালে তিনজনের মাথা আঁকা হয়েছে, যেখানে একজন দুই হাত দিয়ে দু’চোখ বন্ধ করে আছে, বাকি দু’জনের হাত দিয়ে মুখ ও কান বন্ধ।

তিতুমীর হলের প্রথম দেয়ালে একটি কালো হাত মুঠ করে একটি কবুতরকে আটকে চেপে ধরে রাখার চিত্র, দ্বিতীয়টিতে হলে আবরারের পড়ে থাকা নিথর দেহের পায়ের ছবি।

গ্রাফিতিগুলো তৈরি করছেন বুয়েটের আর্কিটেকচার বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

তিতুমীর হলের দেয়ালে আবরারের বাবার একটি চিত্র আঁকা হয়েছে। যেখানে তিনি বলছেন, ‘পারবে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে?’

Advertisement

এরপরের দেয়ালেই লেখা ‘আবরার, ইনসার্ট ইওর নেম’ অর্থাৎ ‘আবরারের পর কে?’

দেশের বিচার ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করে একটি দেয়ালে কচ্ছপের পিঠে ‘বিচার’ শব্দটি লেখা হয়েছে। এছাড়াও অধিকাংশ দেয়ালেই শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন ও নির্যাতন সয়ে মুখ বন্ধ রাখার প্রতীকী চিত্র তৈরি করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেয়াল চিত্র তৈরি করা আর্কিটেকচার বিভাগের এক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, সামনে টার্ম পরীক্ষা, ভর্তিসহ নানা রুটিন রয়েছে। এতে আমরা আবরারকে ভুলে যেতে পারি। আবরারের সহপাঠী, শিক্ষক এমনকি ভিসিকে আবরারের বিষয়ে বার বার মনে করিয়ে দিতেই এই উদ্যোগ।

গত রোববার (৬ অক্টোবর) রাত ৩টার দিকে বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ওই রাতেই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার মরদেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এ ঘটনার পরপরই ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ১০ দফা আন্দোলনে নামে বুয়েট শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাতে ভিসি তাদের দাবিগুলো মেনে নেন এবং শনিবার ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নে নোটিশ প্রদান করায় এদিন দুপুরে দুইদিনের জন্য আন্দোলন শিথিল করে তারা।

এআর/জেএইচ/জেআইএম