দেশজুড়ে

কিছুই বলতে পারছে না ওরা

হয়তো ওদের বাবা, মা, পরিবার পরিজন সবই আছে। তারাও হয়তো ওদেরকে খুঁজছে। তাদের কাছে এই শিশু চারটির সন্ধান নেই। আর এই শিশু চারটির কাছে তাদের কোনো ঠিকানা নেই। পথহারা হয়ে এখন তারা যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে। এদের কেউ হয়তো নাম বলতে পারে। কিন্তু আর কিছুই জানে না। তাই তাদের আকুতি ভরা দৃষ্টিকে আর বাড়িতে ফেরানো যায়নি, সে দৃষ্টি ঠিকানা যেন অসীম আকাশ পানে!এই চার শিশুর মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছেলেটির বয়স আনুমানিক ১০ বছর। তার নাম ঠিকানা বা বাবা-মার নাম জিজ্ঞেস করলে সে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে। ঠিকানা সম্পর্কে সে কোনো কিছুই বলতে পারে না। গত ২৭ জুলাই সাতক্ষীরা আদালতের মাধ্যমে নিরাপদ হেফাজতি হিসেবে তার আশ্রয় হয়েছে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে। আরেক জনের নাম জসিম উদ্দিন। বয়স ১৪ বছর হবে। নিজের নাম আর বাবা জালাল উদ্দিন, মা করিমন বেগমের কথা সে বলতে পারে। আর বাবা একজন মাছ বিক্রেতা। এই তথ্যটুকুই সম্বল জসিমের। ঠিকানার কথা জিজ্ঞেস করলেই থেমে যায় সে। কিছুই মনে পড়ে না তার। গত ১৪ আগস্ট যশোর আদালত মাধ্যমে নিরাপদ হেফাজতি হিসেবে শিশু জসিমের আশ্রয় মিলেছে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে।এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় নাঈমের বয়স ১৭। বাবা-মার নাম কিংবা ঠিকানা কিছুই বলতে পারে না। এ কারণে তার ছোট্ট জীবনের ৮টি বছরই কেটে গেল যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে। ২০০৭ সালের ১৫ মে যশোর আদালতের মাধ্যমে নিরাপদ হেফাজতি হিসেবে তার ঠিকানা এখানে।একটু চঞ্চল স্বভাবের অন্য শিশুটি বাক প্রতিবন্ধী। বয়স ১৩ অথবা ১৪ হবে। বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করতেই তার চোখেমুখে যেন আঁধার নেমে আসে। বাবা-মার ও ঠিকানা সম্পর্কে সে কোনো কিছুই বলতে পারে না। ২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী আদালতের মাধ্যমে নিরাপদ হেফাজতি হিসেবে তার প্রবেশ ঘটে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে। অবশ্য এই শিশুদের বিষয়ে কথা হলে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেন, শিশুদের নিজ পরিবারে পুনর্বাসন করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু সঠিক ঠিকানার অভাবে সেটা সম্ভব হয়ে উঠছে না। পরিবারের সন্ধান পাওয়া না গেলে প্রতিবন্ধী শিশুদের উপযোগী কোনো প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করা হবে বলে তিনি জানান। এই শিশু চারটি জানে না, সবকিছু থেকেও না থাকার কষ্ট কিম্বা কোনো অপরাধ না করেও উন্নয়ন কেন্দ্রের চার দেয়ালের মধ্যে আটকে থাকার জীবনের অবসান তাদের কবে হবে!এমএএস/আরআইপি

Advertisement