দেশজুড়ে

আবরার হত্যা : অমিতের মা-বাবা তীর্থে, জানেন না ছেলের খবর

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা শৈশব থেকেই মেধাবী ছিলেন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়ে পড়াশুনা করেছে। এলাকার মানুষ খুব শান্তভদ্র হিসেবেই জানেন। অমিতের বাবা একজন ধানের আড়ৎদার। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ধানের ব্যবসা করেন। থাকেন নেত্রকোনা শহরের আখড়ামোড় এলাকায় নিজস্ব বাসায়।

Advertisement

অমিত জেলা শহরের আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা সদরের ঠাকুরাকোণা বাজারের স্বাস্থ্য ক্লিনিকের পাশে।

অমিতের মা দেবী রাণী সাহা ও বাবা রঞ্জিত সাহা তীর্থ যাত্রার উদ্দেশ্যে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ভারতের যান। এখনো তারা সেখানেই অবস্থান করছেন। ছোট বোন ঐশ্বরিয়া সাহাও মেধাবী। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন।

ঠাকুরাকোণা বাজারের ব্যবসায়ী মো. কামাল মিয়া জানান, অমিতের বাবা খুবই ভালো মানুষ। ছেলে-মেয়েদের খুব কষ্ট করে মানুষ করেছেন। এমন একটা খবরে খুব খারাপ লাগছে। তার বাবা-মায়ের কষ্ট বৃথা যাচ্ছে। এলাকাবাসী হিসেবে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তার মা-বাবা এখন ভারতে তীর্থে আছেন।

Advertisement

ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক জানান, অমিতের বাবা রঞ্জিত সাহা একজন ধানের আড়ৎদার। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ধানের ব্যবসা করেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেটা খুব মেধাবী। অমিতের বাবার রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ঘরাণার পরিবার। ছেলে অমিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে শুনেছি।

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অমিত সাহাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বৃহষ্পতিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রাথমিকভাবে আবরার হত্যাকাণ্ডে অমিত সাহার সম্পৃক্তার প্রমাণ পেয়েছে ডিবি পুলিশ।

বুয়েটের শেরে বাংলা হলের যে ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়; সেটি অমিত সাহার। তার বিরুদ্ধে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও মামলায় তাকে আসামি না করায় এবং তিনি গ্রেফতার না হওয়ায় সমালোচনা চলছিল।

আবরার ফাহাদ হলে আছেন কি না সে বিষয়ে প্রথম খোঁজ নিয়েছিলেন অমিত সাহা। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় অমিত সাহা নিহতের এক বন্ধুকে ইংরেজি অক্ষরে 'আবরার ফাহাদ হলে আছে কি না' মেসেজ দেন।

Advertisement

এর একঘণ্টার মধ্যেই শেরে বাংলা হলের তথাকথিত সিনিয়র ভাইয়েরা অর্থাৎ ছাত্রলীগ নেতারা তাদের সহপাঠীদেরকে আবরার ফাহাদের ১০১১ নম্বর কক্ষে পাঠিয়ে তাকে ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন।

এদিকে অমিত সাহাকে সমর্থন দিয়ে তার বন্ধুরা প্রথমে তার পক্ষে স্ট্যাটাস দিলেও পরে নতুন স্ক্রিনশটটি আসার পর তারাও সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তারা বলেন, অমিত সাহা প্রসঙ্গে... আমি সুপান্থ জয়, নাশিদ সিফাত, মুবতাসিম ফুয়াদ বেগ ফাহিম, আবির সাহা, তৃপ্ত ভট্টাচার্য, অনিন্দ্য আকাশ শুভ্র, ইমতিয়াজ সৈকত, সামিউল জাওয়াদ রবি- আমরা অমিত সাহার ডিপার্টমেন্ট/সেকশনমেট। একই সঙ্গে ক্লাস করে এসেছি। আমরা কেউ তার হলেরও না। ক্লাসের অন্য ১০টা মানুষের মতো তার সঙ্গেও আমাদের বন্ধুত্ব ছিল।

‘আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর অমিত ঘটনার সময় নিজের অনুপস্থিতি ও ঘটনায় ফেঁসে যাওয়ার কথা আমাদের জানায়। তখন সে আবির সাহার বাসায় ছিল, এটা নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা অমিতের পক্ষে গ্রুপে কিছু স্টেটমেন্ট দেই, যা পুলিশের প্রাথমিক তদন্তেও সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে (সে ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত ছিল)।’

তারা বলেন, ঘটনার সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ সম্পৃক্ততা আমাদের পক্ষে বের করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে বের হয়ে আসা তথ্যে (স্ক্রিনশট) আর সবার মতো আমরাও তার সম্পৃক্ততা নিয়ে আর সন্দিহান নই। যার প্রেক্ষিতে এই কেসে তার পক্ষে আমাদের সমর্থন প্রত্যাহার করছি।

সাধারাণ শিক্ষার্থীদের ধারণা, অমিত সাহা যদি ঘটনাস্থলে নাও থাকেন, তিনি আবরার ফাহাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তা হত্যাকারীদের জানিয়েছেন। কারণ ফাহাদ তো বাসায় গিয়েছিল, হলে এসেছে কি না তা সিনিয়ররা জানতেন না। এর আগেও হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে অমিত সাহা অনেক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করেছেন। এমন ঘটনা শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও জানিয়েছেন।

কামাল হোসাইন/এমএমজেড/পিআর