বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যাসহ নানা বিষয়ে জবাবদিহি করতে বুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামকে দুপুর ২টায় ক্যাম্পাসে হাজির হওয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তা না-হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
Advertisement
বুধবার সকালে বুয়েটের সাধারণ ছাত্রদের পক্ষ থেকে দেয়া একটি বিবৃতিতে এ আল্টিমেটাম দেয়া হয়।
বিবৃতিতে ১০ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আগামী ১৪ তারিখের নির্ধারিত ভর্তি পরীক্ষাও স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।
তাদের ১০ দফা দাবি হলো :
Advertisement
১. আবরার ফাহাদের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সিসিটিভি ফুটেজ ও জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যনুসারে খুনিদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে শনাক্তকৃত সবাইকে আগামী ১১ অক্টোবর বিকেল ৫টার মধ্যে আজীবন বহিষ্কার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. মামলা চলাকালে সব খরচ এবং আবরারের পরিবারের সব ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে। এ মর্মে অফিশিয়াল নোটিশ ১১ তারিখ বিকেল ৫টার মধ্যে দিতে হবে।
৪. দায়ের মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীনে স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি করার জন্য বুয়েট প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বুয়েট প্রশাসনকে সক্রিয় থেকে সব প্রক্রিয়া নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নিয়মিত ছাত্রদের আপডেট জানাতে হবে।
Advertisement
৫. অবিলম্বে চার্জশিটের কপিসহ অফিশিয়াল নোটিশ দিতে হবে।
৬. বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে বুয়েটের হলে হলে ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করে রাখা হয়েছে। জুনিয়র ব্যাচকে সবসময় ভয়-ভীতি দেখিয়ে জোর করে রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে যুক্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে যেকোনো সময় যেকোনো হল থেকে সাধারণ ছাত্রদের বিতাড়িত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে হলে হলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। রাজনৈতিক সংগঠনের এহেন কর্মকাণ্ডে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ক্ষুব্ধ। তাই আগামী সাত দিনের (১৫ অক্টোবর) মধ্যে বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং এগুলোর কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি। তিনি ৩৮ ঘণ্টা পরে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন এবং কোনা প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। তাকে স্বশরীরে ক্যাম্পাসে এসে (আজ) বুধবার দুপুর ২টার মধ্যে জবাবদিহি করতে হবে।
৮. আবাসিক হলগুলোতে র্যাগ এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সব ধরনের শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এবং এ ধরনের সন্ত্রাসে জড়িত সবার ছাত্রত্ব প্রশাসনকে বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে আহসানউল্লা হল এবং সোহরাওয়ার্দী হলের আগের ঘটনাগুলোয় জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে আগামী ১১ অক্টোবর বিকেল ৫টার মধ্যে।
৯ আগে ঘটা এ ধরনের ঘটনা প্রকাশ এবং পরে ঘটা যে কোনো ঘটনা প্রকাশের জন্য একটা কমন প্লাটফর্ম (কোনো সাইট বা ফর্ম) থাকতে হবে এবং নিয়মিত প্রকাশিত ঘটনা রিভিউ করে দ্রুততম সময়ে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। এ প্লাটফর্ম হিসেবে বুয়েটের বিআইআইএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে এবং ১১ অক্টোবর বিকেল ৫টার মধ্যে অগ্রগতি দৃশ্যমান হতে হবে ও পরবর্তী এক মাসের মধ্যে কার্যক্রম পূর্ণরূপে শুরু করতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে সব হলের প্রত্যেক ফ্লোরের সব উইংয়ের দুইপাশে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০ রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্ৰ উৎখাতের ব্যাপারে ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে ১১ অক্টোবর বিকেল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।
রোববার (৬ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফাহাদকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার (৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. মো. সোহেল মাহমুদ বলেন, বাঁশ বা স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানো হয়ে থাকতে পারে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে। এর ফলেই রক্তক্ষরণ বা পেইনের (ব্যথা) কারণে ফাহাদের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বলেন, ফাহাদের হাতে, পায়ে ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। আঘাতের ধরন দেখে মনে হয়েছে ভোঁতা কোনো জিনিস যেমন- বাঁশ বা স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তবে তার মাথায় কোনো আঘাত নেই। কপালে ছোট একটি কাটা চিহ্ন রয়েছে।
এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।
জেপি/এআর/সাদী/জেডএ/জেআইএম