ক’দিন আগেও রাজধানীর কমলাপুরের পীরজঙ্গির মাজার রোডে গেলে যে কেউ দেখতে পেতেন অকেজো শত শত বাসের সারি। গাবতলী মাজাররোড, আমিনবাজার এলাকাতেও ছিল একই চিত্র। কিন্তু এখন বদলে গেছে সেসব চিত্র। ঈদ উপলক্ষে বাসগুলোর গায়ে রঙ্গে ঘষা দিয়ে কোনোভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে কয়েক হাজার লক্করঝক্কর বাস। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিত্যক্ত এসব গাড়িতে করেই নিম্ন আয়ের ও শ্রমজীবী মানুষের ঘরে ফেরার শেষ অবলম্বন। আবার অন্য ভালো পরিবহনে যাদের যুদ্ধ করেও টিকিট মেলেনি তারাও এই ঘাটেরই মরা এখন। শুধু তাই নয়, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট পঞ্চগড়ের মত কয়েকশ’ কিলোমিটার রাস্তার পাড়ি দিতে হবে এসব বাসে করেই।সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, লোকাল বাস গুলোর কাউন্টারের সামনে বেশ ভিড় জমেছে।সোমবার দুপুর দেড়টা। হঠাৎ করে হাক ছেড়ে ছোট হ্যান্ড মাইকে একজন বলছেন, ‘আসেন ভাই আসেন। রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম কই যাবেন আসেন। আসলেই পাবেন টিকিট। আর দেরি নাই একটু পরেই ছাড়বে বাস। আসেন তাড়াতাড়ি আসেন।’পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুরভী পরিবহনের সহকারী রুহুল আমিন এভাবে গলা ছেড়ে হাকডাক করছেন। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, আমাদের এখানে রংপুর দিনাজপুর ও কুড়িগ্রাম রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের জন্য ঈদ সেবা চালু করা হয়েছে। লোকাল বাস হলেও ঈদে প্রতিবছরই আমাদের গাড়ি চলে।তিনি বলেন, নিম্ন আয়ের ও শ্রমজীবী মানুষই বেশি চলাচল করেন আমাদের বাসে। বাসের ভাড়া কম হয়। যাত্রীও মেলে পর্যাপ্ত। লোকাল বাসের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হানিফ, শ্যামলী, দেশ ট্রাভেলস এর মতো বড় বাস পরিবহনের টিকিট যতো তাড়াতাড়ি শেষ হয় ব্যবসা ততো জমে উঠে লোকাল বাসগুলোর। রাজধানীর গাবতলী থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করছে দূরপাল্লার লোকাল বাস। হানিফ, শ্যামলী, দেশ ট্রাভেলস এর মতো বাসে টিকিট পান নি তারাও এক রকম বাধ্য হয়েই লোকাল বাসে উঠচ্ছেন।সরেজমিনে গাবতলীর লোকাল বাসগুলোর চিত্র দেখে মনে হচ্ছে, ভাঙারির দোকান থেকে বাস কিনে রাস্তায় টানাটানির পায়তারা। অধিকাংশ লোকাল বাসের পাটাতন ক্ষয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে ওই ভাঙা অংশ দিয়ে রাস্তার ধূলো চলন্ত গাড়ির ভেতর নিমিষে ধূলময় করবে।অনেক বাসের আবার জানালার কাঁচ নেই। কাঁচ থাকলেও জানালা খোলা যায় না। ছাদ পাটাতনও ভাঙা । বৃষ্টি নামলেই চুইয়ে গায়ে এসে পড়বে পানি। ঈদে এইসব লোকাল বাস ও মিনিবাস নিম্ন আয়ের মানুষদের আনন্দকে করে আরও বিলম্বিত। কুড়িগ্রামে যাবেন এমন এক যাত্রী তৈয়বুর রহমান। তিনি জানান, দোজখের অনুভূতি নিয়েই অন্য যাত্রীদের মতো আমিও বাধ্য হয়ে বাসে উঠে পড়েছি। জানি না কপালে কি আছে।দুপুর আড়াইটার দিকে ‘হক পরিবহন’ এর একটি বাস গাবতলী টার্মিনাল থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রার শুরুতেই তিন শ’ গজ যেতে না যেতেই কাশির মতো শব্দে করে থমকে যায়। পড়ে গিয়ে শোনা গেলো সেই বাসের ব্রেক নেই। এক্সিলেটরের চাপ কমিয়ে গাড়ির গতি স্লো করেছেন ড্রাইভার।বাসটি শুরুতেই হোচট খাওয়ায় মধ্য বয়সি ছমির মিয়াকে ভয়ে দোয়া দরুদ পড়তে শোনা গেলো। লা ই লাহা ইন্না আন্তা সোবাহানাকা ...। তিনি আহাজারি করে বলছিলেন, গরীবের কপাল!দিনাজপুরের এক যাত্রী অনেক কষ্ট করে ভালো বাসের টিকিট খুঁজে না পেয়ে বাধ্য হয়ে এসেছেন সাকুরা পরিবহনের কাউন্টারে। টিকিট কাটলেন বিকেলে তিনটার। জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ভাই কি বলবো বলেন, পরীক্ষার কারণে টিকিট কাটার সময় মেলে নি। কিন্তু ঈদে ছোট বোনের বিয়ে। তাইু একটু আগেভাগেই যেতে হচ্ছে বাড়ি। টিকিট না পাওয়ায় অগত্যা সাকুরায় উঠে বসা। এতোক্ষণে তো আপনার বুঝতে বাকি নেই ইহা, ‘এ জার্নি, ফিলিংস্ অব হেল’!জেইউ/এসকেডি/পিআর
Advertisement