মতামত

থুউউউ রাজাকার

মাকসুদা আজীজ১৯৯৮ সালে আমরা আমাদের খুব প্রিয় গেন্ডারিয়ার বাড়ি এবং জয়েন্ট ফ্যামিলি রেখে মগবাজার বাস করতে আসি। গেন্ডারিয়া থেকে ভিকারুননিসা স্কুল অনেক বেশি দূরে হয়ে যাচ্ছিল, বিশেষ করে আমার বড় বোনের খুব শরীর খারাপ হয়ে থাকত তাই আমরা চলে আসি।আমরা আসার পরে জানতে পারি মগবাজার কাজীর গলি যে বিখ্যাত এলাকাটি আছে সেটি হচ্ছে রাজাকারকুলের শিরোমণি গোলাম আযমের পৈত্রিক এলাকা। সেখানে সব তাদের। এলাকা পুরা অর্ধেক দৃশ্যমানভাবে তাদের। মসজিদ তাদের এবং যেই কাজীর নামে কাজী অফিস সেও গোলাম আযমের বোনের স্বামী। হুমায়ুন আহমেদ এই তথ্য জানতেন না বলেই আমার বিশ্বাস। উনি যদি এটা জানতেন তাহলে অবশ্যই মগবাজার কাজী অফিস নিয়ে এত দৌড়াঝাপা করতেন না।আমরা সেখানে এক বছর ছিলাম। তাদের শান শওকত দেখতাম। অত্র অঞ্চলে রাজাকারদের অভয় অরণ্য। রাজাকারের সেখানে এত সুখে থাকে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। আমরা যখন যাই তখন গোলাম আযমের ৯ তলার বাড়ি আন্ডার কন্সট্রাকশন। বাড়ি দাঁড়ালো। প্রচুর নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পন্ন বাড়ি। ২৪ ঘন্টার সবগুলো ইলেকট্রনিক ডিভাইস চলে এমন জেনারেটর পুরা বাড়িতে।আমার নানাজান বিরাট তবলীগী ছিলেন। আমার মা-খালা-মামাদের সর্বক্ষণ নানান রকম দোয়া পড়তে দেখা যায়। আমরা ছোটবেলা থেকে নানান রকম দোয়া পড়ে বড় হয়েছি। এমনকি দুধ খাবার পরেও একটা দোয়া পড়তে হয় যেটা আমরা পড়ি। আমি আমার শিক্ষায় দেখলাম ইসলামের সকল জ্ঞানের সাথে তাদের ইসলাম শিখানোর ধরণ এবং জীবন দর্শনে প্রচুর তফাত। যেটা সবচেয়ে বেশি গায়ে লাগত, মসজিদটা একদম আমাদের বাসার সাথে ছিল আমরা ঘরে বসে শুনতাম সেখানে পাকিস্তানের জন্য খুদবা দেয়া হয়। এক বছর তাদের শান শওকত দেখার পরে আব্বু বলল, অনেক হয়েছে রাজাকারের সাথে বসবাস। এবার এই এলাকা ছাড়তে হবে।আমরা কাছেই গেলাম, সেখান থেকেও গোলাম আযমদের মসজিদের আযান শোনা যায়। এখন অবধি আমরা সেখানে আছি। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করি গোলাম আযমের রাজ্যে আযান দেয়া থেকে সব রীতি-নীতি পাকিস্তানে নিয়ম ফলো করা হয়।আমরা সেখানে নানান লোকের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। তাদের একজন ছিলেন ফজল কাকা। ফজল কাকা খুব গর্বের সাথে বলতেন তার বাবা রাজাকার এবং এখন যুদ্ধ হলে উনিও তাই করবেন। এটা নিয়ে আব্বুর সাথে লাগত। ফজল কাকা একদিন গর্ব করে বললেন, রাজাকেরে পেটে সব রাজাকার হয় কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার পেটে মুক্তিযোদ্ধা হয় না, তাহলে সফল কারা আপনারা নাকি আমরা?আমার ফজল কাকার কথা মনে গেঁথে যায়। এবং আমি বিশ্বাস করতে শুরু করেই উনি যেটা বলছেন সেটাই সত্য। আমি যখনকার কথা বলছি এরপরে দেশের অবস্থা খুব খারাপ হয়। রাজাকারদের জীবনমান সর্বোচ্চ উন্নত হয় আমরা অবাক হয়ে দেখি রাজাকারেরা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে ঘুরে বেড়ায় অথচ আমি তাদের পাকিস্তানের জন্য খুদবা পড়তে শুনেছি।২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চ যখন দাঁড়ায় তখন আমি বিশ্বাস করতে সাহস পাই যে ফজল কাকার কথা সব সত্যি না। আমরা এত পরেও অন্যরকম করে ভাবতে পারি। দেশটা যে আদর্শের উপর দাঁড়িয়ে আছে সেটা আমরা লালন করি ধারণ করি এবং এটার জন্যও যুদ্ধ করি।তাই গোলাম আযম বিচার ছাড়া মরে গেছে এটা নিয়ে আমি আফসোস করি না। সকালে বাসা থেকে বের হবার সময় যখন থিক থিক করা পুলিশ দেখলাম রাজাকারের গলির সামনে তখনও আমার খুব ভালো লেগেছে। আমরা খুব সভ্য সত্য মুক্তিযুদ্ধার সন্তান। আমরা ওদের আক্রমন করি নাই, ওদের জ্বালায় দেই নাই। আমরা প্রচলিত আইনে ওদের কপালে সিল মেরে দিসি। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং অবশ্যই আমরা ওদের থেকে উন্নত ও শ্রেষ্ঠ।-ব্লগার

Advertisement