‘বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ভারত রাডার স্থাপন করতে যাচ্ছে। মালদ্বীপ-শ্রীলঙ্কায় এমন রাডার লাগানো হয়েছে। তার কৌশলগত কারণ আছে। এমন কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশের উপকূলেও যদি রাডার লাগানো হয়, তাহলে চীন ভুল বুঝতে পারে’- বলছিলেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
Advertisement
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্প্রতি ভারত সফর নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এ বিশ্লেষক। বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফর নিয়ে কারও মধ্যে আগ্রহ এবং কারও মধ্যে উচ্ছ্বাস ছিল। বিশেষ করে তিনটি ইস্যু নিয়ে আগে থেকেই আলোচনা হচ্ছিল। রোহিঙ্গা, তিস্তা ও এনআরসি। এ তিন ইস্যুতে বিস্তর কোনো আলোচনা হয়েছে অথবা কোনো ইতিবাচক খবর আছে- তা মিডিয়ায় দেখতে পাইনি।’
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এ নিয়ে হতাশা আছে। অথচ মানবতার কথা বলে আমরাই ভারতকে পানি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলাম।’
বাংলাদেশ-চীনের মধ্যকার সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এ মুহূর্তে চীনকে বাংলাদেশের খুব বেশি দরকার এ কারণে যে, চীন বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং চীনের সঙ্গে এখন বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক বড় হয়ে আসছে। চীন বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্যাপক অর্থের জোগান দিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সমুদ্র অঞ্চলে ভারতের এমন নিরাপত্তা বলয় কার স্বার্থে? এ প্রশ্নের উত্তর কিন্তু সহজে মিলছে না। এসব নিয়ে ইতোমধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। আমি মনে করি, চুক্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে আরও ভালো করে বোঝা উচিত। কারণ, একটি পক্ষকে খুশি করতে গিয়ে আপনি আর দশটি পক্ষকে নাখোশ করবেন না নিশ্চয়ই।’
Advertisement
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফর ব্যর্থ কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কূটনীতিক বিশ্লেষক নই। আমি নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্ব দেই। আমি উপকূলে রাডার স্থাপনের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভারতের ব্যবসায়ী ও অর্থনৈতিক ফোরামে বাংলাদেশকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক ফোরামে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। এটি অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক উপস্থাপন বলে মনে করি।’
‘আর কোনো সফরকেই ব্যর্থ বলা যায় না। এ দেশের মানুষ ভাবছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কটা একতরফা। বড় দেশের সঙ্গে ছোট দেশের সম্পর্ক অসম হতেই পারে, কিন্তু একতরফা হলে অবিশ্বাস বাড়তে থাকে।’
‘ছোট দেশ নিজের স্বার্থের বিষয়টি যদি সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে না পারে, তাহলে বড় দেশ আরও খবরদারি চালাতে পারে। আর নিজেদের মধ্যকার রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণেই বিদেশিরা তাদের স্বার্থ এখানে পোক্ত করতে পারছে’- মনে করেন এ নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে ২২ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে ফিরে ৩ থেকে ৬ অক্টোবর দিল্লি সফর করেন। এ সফরে প্রধানমন্ত্রী ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম আয়োজিত ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটে যোগ দেন। গত শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় এবং তিনটি যৌথ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়।
Advertisement
দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের অন্যতম হলো, উপকূলে নজরদারি বৃদ্ধির জন্য রাডার স্থাপন বিষয়ক চুক্তি। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘কোস্টাল সার্ভিলেন্স রাডার সিস্টেম ইন বাংলাদেশ’। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডেকান হেরাল্ড বলছে, এ নেটওয়ার্ক সমুদ্রপথে যেকোনো সন্ত্রাসী হামলা শনাক্ত করতে ভারতকে সাহায্য করবে। একই সঙ্গে প্রতিবেশীদের নৌ-সীমানায় দৃষ্টি রাখতে পারবে, যেখানে চীনের লিবারেশন আর্মি নেভি (পিএলএএন) গত কয়েক বছর তাদের যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে।
নিউইয়র্ক ও দিল্লি সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এএসএস/এমএআর/জেআইএম