নিজ সংগঠনের প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানে হতভম্ব আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বা যুব জাগরণের অফিসে না গেলেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে কিছুটা সময় লাগবে বলেও জানান যুবলীগ চেয়ারম্যান।
Advertisement
রোববার সন্ধ্যায় জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, ‘একটা মানুষের পক্ষে সব কিছু জানা সম্ভব নয়। আজ যে আটকের ঘটনা ঘটেছে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে করেছে। বিষয়টি আমার জন্যও উপকার হচ্ছে, আমি বিষয়গুলো পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারছি।’
ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আমাকে শিখিয়েছেন, রাজনীতি মানে সমঝোতা। আমি দায়িত্বটা কাকে দেব, সেটা এখন বিবেচনা করে দেখতে হবে। সে কি টাকার জন্য দায়িত্ব পালন করছে না মানবকল্যাণের জন্য?’
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কিছু নেতাকর্মীর আসা-যাওয়া থাকলেও ধানমন্ডিতে যুব জাগরণ কার্যালয়ে তেমন একটা আনাগোনা নেই যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের। যুবলীগের কেন্দ্রীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
Advertisement
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, প্রায় প্রতিদিনই আমরা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসি। গত পরশু কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদসহ আমরা অফিস করেছি। আমি নিজে গতকালও গিয়েছি অফিসে।
তিনি আরও জানান, ধানমন্ডিতে তো যুব জাগরণের অফিস। ওইখানে সাধারণত চেয়ারম্যান বসেন। উনি আসেন না বলেই নেতাকর্মীরাও ওখানে যান না।
যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার দুদিন পর থেকে স্বাভাবিক চলাফেরা বন্ধ করে দিয়েছেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। গণমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলছেন না তিনি। যদিও মতিঝিলের ফকিরাপুল এলাকায় ইয়াংম্যানস ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনোর মালিক ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটকের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ অত্যন্ত সুসংগঠিত একটি ইউনিট। তাদের বিরুদ্ধে এতদিন কোনো অভিযোগ এলো না, হঠাৎ কেন অভিযোগ এলো? অভিযোগ থাকলে এতদিন কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি?’ খালেদের গ্রেফতার দল ও যুবলীগকে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র কি-না, সে প্রশ্নও রাখেন যুবলীগ চেয়ারম্যান।
সংগঠন সূত্রে আরও জানা যায়, তিনি ধানমন্ডির যুব জাগরণের অফিসে কিংবা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের অফিসে আসছেন না। তবে ঠিক কী কারণে আসছেন না সে বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারেননি সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
Advertisement
রোববার (৬ অক্টোবর) ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম থেকে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী ওরফে সম্রাটকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় তার সহযোগী আরমানকেও আটক করা হয়।
এর আগে ক্যাসিনোকাণ্ডে অভিযুক্ত ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
সম্প্রতি মতিঝিলের ইয়ংমেনস, ওয়ান্ডারার্স, মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্র ও বনানীর গোল্ডেন ঢাকা ক্লাবে র্যাব অভিযান চালিয়ে সেগুলো সিলগালা করে দেয়। এ অভিযানের ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্লাব ও জুয়ার আসরে অভিযান চালায় পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় মোহামেডান, আরামবাগ, দিলকুশা, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া ও ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো ছিল। এর মধ্যে ইয়ংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। বাকি পাঁচটি ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন সম্রাটের লোকজন। সম্রাট নিজে ক্যাসিনো দেখাশোনা না করলেও তার ক্যাসিনো চালাতেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদ।
এইউএ/এমএআর/জেআইএম