জাতীয়

টক অব দ্য কান্ট্রি ‘ক্যাসিনো সম্রাট’

গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকালটা ছিল বেশ স্বাভাবিক। দিনের শুরুটা ছিল বেশ আলো ঝলমলে। তবে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই বেরিয়ে এলো এক অন্ধকার জগৎ। ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির সঙ্গে পরিচিত বাংলাদেশে নতুন কালিমা লেপন করলো ক্যাসিনো।

Advertisement

সন্ধ্যার আঁধার নামার সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় ইয়ংমেনস ক্লাবে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ জুয়ার ক্যাসিনোসহ ১৪২ নারী-পুরুষকে আটকের খবর।

না, শুধু ইয়ংমেনস ক্লাব নয়, রাত গভীর হওয়ার আগেই বেরিয়ে আসে ক্যাসিনোর আরও স্থান। যে তালিকায় একে একে যুক্ত হয় ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ঢাকা ওয়ান্ডার্স ক্লাবের পাশাপাশি বনানীর আহম্মেদ টাওয়ারে অবস্থিত গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ।

অবৈধ ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগ এবং লাইসেন্সবিহীন অস্ত্র ও মাদকসহ আটক করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে। এরপর বেরিয়ে আসে ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত আরও অনেক রাঘববোয়ালের নাম।

Advertisement

খালেদ মাহমুদ ভূঁয়াকে গ্রেফতারের পরপরই শক্তি জানান দিতে গভীর রাতে হাজারের বেশি নেতাকর্মী নিয়ে কাকরাইলের যুবলীগ কার্যালয়ে অবস্থান নেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। যার ছত্রচ্ছায়ায়ই খালেদ মাহমুদ ক্যাসিনো চালাতো বলে অভিযোগ রয়েছে।

গভীর রাতে সম্রাট শক্তির জানান দিলেও সকাল হতেই পাল্টে যায় চিত্র। আত্মগোপনে চলে যান যুবলীগের প্রভাবশালী এ নেতা। কার্যালয়, বাসা কোথাও খোঁজ মিলছিল না তার। জব্দ করা হয় সম্রাট ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব। সম্রাটের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপর গুঞ্জন শুরু হয় গ্রেফতার হতে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে মতিঝিল, মালিবাগ, রাজারবাগ অঞ্চলে রাজত্ব করা যুবলীগের এই নেতা।

এমন গুঞ্জনের মধ্যেই চলতে থাকে ক্যাসিনোবিরোধী র‌্যাবের অভিযান। বেরিয়ে আসে ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান, আরামবাগ, দিলকুশা ও ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ক্যাসিনো ও জুয়ার তথ্য। এরপর ‘ঢাকার ক্লাবগুলো জুয়ার স্বর্গরাজ্য’ মুখে মুখে চাউর হতে থাকে এমন কথা।

ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো বসানোর অপরাধে গ্রেফতার করা হয় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক (বিসিবি) লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে। বিপুল পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণসহ ধরা খান রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া। তারা দুজন ক্যাসিনোর লাভের টাকা বাসায় রাখতেন বলে জানায় র‌্যাব।

Advertisement

একের পর এক ক্লাবে অভিযান এবং প্রভাবশালীদের ধরা হলেও মিলছিল না সম্রাটের হদিস। ধীরে ধীরে আড়ালে চলে যেতে থাকে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান ও সম্রাট ইস্যু। তবে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজ রোববার (৬ অক্টোবর) ভোরে সম্রাটকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এই নেতাকে গ্রেফতারের পর আবারও সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে ক্যাসিনো ও সম্রাট। অফিস, ফাইভ স্টার হোটেল থেকে শুরু করে রাজধানীর গলির চায়ের দোকানেও আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে সম্রাটের গ্রেফতার খবর।

কারও কারও মতে, সম্রাটের গ্রেফতার অভিনব ঘটনা। রাজধানীতে সম্রাট যেভাবে রাজত্ব করেছেন, তাতে সে গ্রেফতার হতে পারে এমনটা অনেকে কল্পনাও করতে পারেননি। অবশ্য সম্রাটকে গ্রেফতারের পর সবার মুখে মুখে সরকারের প্রশংসাই হচ্ছে বেশি।

বাড্ডার একটি চায়ের দোকানে সম্রাট ও ক্যাসিনো নিয়ে চলা আলোচনায় অংশ নেয়া নিজাম নামের একজন বলেন, “১৯৯৮ সাল থেকে ঢাকায় থাকি। সম্রাটের যে প্রভাব দেখেছি, তাতে মনে হতো সে আসলেই ‘ঢাকার সম্রাট’। সেই সম্রাট গ্রেফতার হয়েছে এটা বিশ্বাসই হচ্ছে না। এ সবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কারণে। প্রধানমন্ত্রী দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার প্রশংসা না করে পারা যায় না। এটা বঙ্গবন্ধুর কন্যার পক্ষেই সম্ভব।”

মতিঝিলের একটি অফিসে চাকরি করা ফিরোজ বলেন, আজ সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কথা মনে পড়ছে। তিনি বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা যারে ধরে তারে ছাড়ে না, এটা বঙ্গবন্ধুর মাইয়া, বাঘে ধরলে ছাড়ে কিন্তু তিনি ধরলে আর ছাড়েন না।’ সম্রাটের গ্রেফতার প্রমাণ করে, যে যতই শক্তিশালী হোক দুর্নীতি করলে তার রক্ষা নেই। আশা করি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর এ পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।

এমএএস/এএইচ/জেআইএম