কৃষি ও প্রকৃতি

আত্মহত্যার জন্য ‘বিখ্যাত’ যে বন

জীবনে হতাশা বা ব্যর্থতা থেকেই মানুষের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা রয়েছে। তা সব দেশেই বিরাজমান। তবে জাপানের একটি বনে এ প্রবণতার হার খুবই বেশি। তাই সে বনকে আত্মহত্যার জন্য বিখ্যাত বন হিসেবে গণ্য করা হয়। যা পৃথিবীর দ্বিতীয় আত্মহত্যার বন হিসেবে পরিচিত।

Advertisement

বনটির নাম ‘অওকিগাহারা’। এটি জাপানের ফুজি পর্বতমালার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত একটি বন। যার আয়তন ৩৫ বর্গ কিলোমিটার। বনটি ‘সি অব ট্রিজ’ বা ‘গাছের সমুদ্র’ নামেও পরিচিত। কিছু অদ্ভুত পাথর এবং কোন প্রাণের অস্তিত্ব না থাকায় সবসময় নীরব থাকে বনটি।

জাপানি পুরাণ মতে, এ বনে প্রেতাত্মারা ঘুরে বেড়ায়। এটি আত্মহত্যা করার উপযুক্ত জায়গা হিসেবে বিবেচিত। এ বন থেকে প্রতি বছর একশ’র বেশি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বনটি জাপানিদের কাছে আত্মহত্যার সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা। আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর ‘গোল্ডেন ব্রিজ’র পর এর অবস্থান।

দেশটির হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর এখানে গড়ে ১০০ মানুষ আত্মহত্যা করে। ১৯৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫শ’র বেশি জাপানি এখানে আত্মহত্যা করেছেন। এখানে ১৯৯৮ সালে ৭৪ জন, ২০০২ সালে ৭৮ জন, ২০০৩ সালে ১০০ জন, ২০০৪ সালে ১০৮ জন আত্মহত্যা করেন।

Advertisement

তবে ২০১০ সালে ২৪৭ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। যার মধ্যে ৫৪ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে জাপান সরকার আত্মহত্যার হার প্রকাশ করা বন্ধ করে দেয়। এ বনে মার্চের সময় আত্মহত্যার হার বেড়ে যায়। ২০১১ সালে যারা আত্মহত্যা করেছে; তাদের অধিকাংশ ফাঁসি বা অতিরিক্ত মাদক নিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

জানা যায়, ১৯৭০ সালে পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক ও সাংবাদিকদের নিয়ে একটি দল গঠন করা হয়। যাদের কাজ ছিল মৃতদেহগুলো খুঁজে বের করা এবং মানুষকে আত্মহত্যায় অনুৎসাহিত করা। এখনো সে চেষ্টা অব্যাহত আছে। তবে আত্মহত্যার হার প্রকাশ না করায় বোঝা যাচ্ছে না বর্তমান অবস্থা।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৬০ সালে সাইকো মাটসুমোটো নামে এক জাপানি লেখকের ‘টাওয়ার অব ওয়েবস’ উপন্যাস লেখেন। বইটি প্রকাশের পর থেকেই এ বনে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। উপন্যাসের দুটি চরিত্র এ বনে এসে আত্মহত্যা করেছিলেন।

এরপর থেকেই জাপানিরা এ বনে এসে আত্মহত্যা করে। যেন তাদের সন্তানরা পরবর্তীতে ভালোভাবে চলতে পারে। এটা তাদের এক ধরনের অন্ধ বিশ্বাস। বিশ্বের ইতিহাসে যা অবাক করার মতো বিষয়। তাই দেশটির সরকার জনসাধারণকে এ বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

Advertisement

এসইউ/জেআইএম