আন্তর্জাতিক

রাজপরিবারে অসন্তোষ, মুকুট হারাচ্ছেন মোহাম্মদ বিন সালমান?

সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের পর সৌদি রাজতন্ত্রের পরবর্তী উত্তরাধিকারী বিবেচনা করা হয় ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে। রাজপরিবারে বর্তমানে সবচেয়ে ক্ষমতাশীল ব্যক্তি মোহাম্মদ বিন সালমান। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনিই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তার কারণেই কট্টরপন্থি সৌদিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। নারীদের ওপর থেকে বিভিন্ন কঠোর বিধি-নিষেধ তুলে নেয়া হচ্ছে।

Advertisement

তবে বেশ কিছু ঘটনার কারণে সৌদির রাজপরিবারে ক্রাউন প্রিন্সকে নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে গত মাসে সৌদির দু'টি গুরুত্বপূর্ণ তেলক্ষেত্রে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজপরিবারের বেশ কিছু সদস্য এবং ব্যবসায়িক মিত্র ক্রাউন প্রিন্সের নেতৃত্বের প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন।

এর আগে সৌদিতে এতো বড় হামলার ঘটনা ঘটেনি। বিশেষ করে তেলনির্ভর সৌদির অর্থনীতির একটি বড় অংশই তাদের তেলক্ষেত্রের ওপর নির্ভরশীল। ওই হামলার পর সৌদির তেলের যোগান কমে যাওয়ায় বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ বিদেশী কূটনীতিক এবং রাজপরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই হামলার পর বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রফতানিকারক দেশটির নেতৃত্ব ও নিরাপত্তা প্রদানে ক্রাউন প্রিন্স সালমানের সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ পরিবারের সদস্যরা। সৌদির রাজ পরিবারে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার সদস্য রয়েছেন।

Advertisement

একটি সূত্র বলছে, ক্রাউন প্রিন্সের নেতৃত্ব নিয়ে অনেকেই বিরক্ত। কারণ এখনও পর্যন্ত তেলক্ষেত্রে হামলার ঘটনায় দোষীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি এ বিষয়ে কঠোর কোনো অবস্থানও নেয়া সম্ভব হয়নি। অনেকের অভিযোগ, ক্রাউন প্রিন্স ক্ষমতা আকড়ে ধরার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছেন। আবার অন্যদের অভিযোগ, তিনি ইরানের বিরুদ্ধে খুব বেশি কঠোর অবস্থানে চলে গেছেন। এমন গুঞ্জনের মধ্যে সালমানের বড় ভাই প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজকে (৭৭) তার বিকল্প হিসেবে দেখছেন রাজপরিবারের বেশ কিছু সদস্য।

সৌদি পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী বলছেন, রাজপরিবারের অনেক সদস্যই মনে করেন একমাত্র আহমেদ বিন আবদুল আজিজই তাদের এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে পারেন। তবে এ বিষয়ে তার কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

রাজপরিবারের ঘনিষ্ট সূত্র বলছে, ক্রাউন প্রিন্সের প্রতি রাজপরিবারের অনেক সদস্যেরই কোনো আস্থা নেই। তবে ক্রাউন প্রিন্সের প্রতি অনুগত একটি সূত্রের দাবি, সাম্প্রতিক ঘটনা সৌদি যুবরাজ্যের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ তিনিই পরবর্তী উত্তসূরি হতে যাচ্ছেন।

তিনি ওই অঞ্চলে ইরানি আগ্রাসন বন্ধের জন্যই এতো কিছু করছেন। এই বিষয়ের সঙ্গে দেশপ্রেম জড়িত। আর যতক্ষণ তার বাবা বেঁচে আছেন তিনি কোনো বিপদে পড়বেন না। এছাড়া সৌদির তরুণ সমাজে বেশ জনপ্রিয় ৩৪ বছর বয়সী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি কট্টরপন্থী সৌদিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে ভিশন-২০৩০ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এর আওতায় নারীদের ক্ষমতায়নে জোর দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই নারীদের ওপর থেকে গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। শুধু গাড়ি নয়, বিমান চালানোর ক্ষেত্রেও নারীদের ওপর আর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

Advertisement

এমনকি নারীরা এখন মাঠে বসে বিভিন্ন খেলাধুলাও উপভোগ করবে পারবেন। তাদের পোশাকের ওপরও শিথিলতা আনা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রেও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো হচ্ছে। ফলে খুব অল্প সময়েই সৌদির তরুণ-তরুণীদের কাছে একজন প্রিয় নেতা হয়ে উঠেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।

টিটিএন/এমএস