পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে কাজিরবাজার ব্যতীত অন্য কোথায়ও পশুর হাট বসানোর ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও মহানগরের ৯টি স্থানে অবৈধ পশুর হাট বাসানো হয়েছে। নগরের মেন্দিবাগ মোড় এলাকায় আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমেপ্লক্স এর প্রবেশপথসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় অবৈধভাবে গরু ক্রয়-বিক্রয় শুরু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বাইরের ব্যবসায়ীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ওই সকল অবৈধ হাটে গরু নিয়ে ব্যবসা করতে বাধ্য করছে ওই চক্রটি। স্থানীয় কিছু আওয়মী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা এই অবৈধ পশুর হাট ‘মিলেমিশে’ বসাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।সিসিক এবং এসএমপি অবৈধ পশুর হাটের ব্যাপারে জিরো টলারেন্সের কথা জানালেও এসব অবৈধ পশুর হাটের ব্যাপারে একে অপরের উপর দায়িত্ব দিয়ে নিজের দায় এড়াচ্ছেন। সিসিক বলছে, জেলা প্রশাসন ও মহানগর পুলিশকে অবৈধ পশুর হাট বসলে ব্যবস্থা নেয়ার চিঠি দেয়া আছে। আর জেলা প্রশাসক বলছেন, উপজেলা নির্বাহীকে বলে উচ্ছেদ করা হবে। এদিকে, মহানগর পুলিশ বলছে, সিসিক পুলিশের সহযোগিতা চাইলে এসএমপি সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো ধরনের চিঠি দিয়ে কোনটা বৈধ আর কোনটা অবৈধ এ ব্যাপারে কিছুই বলেনি সিটি কর্পোরেশন কতৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এমন দায় এড়ানোর সুযোগে এ সকল অবৈধ পশুর হাটের মালিকরা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কাজ। কেউ কেউ রাস্তা থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পশুর ট্রাক ধরে নিচ্ছেন নিজ বাজারে। ধর্মীয় নেতারা বলছেন, কোরবানি আল্লাহর নির্দেশ। হালাল টাকা দিয়ে মুসলিম উম্মাহ কোরবানির পশু কিনে তা সম্পন্ন করেন। কিন্তু সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হাট থেকে পশু ক্রয় করে তা দিয়ে কোরবানি দিলে তা সন্দেহমুক্ত হতে পারে না। ফলে নগরবাসীর মনে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, সিসিক, জেলা প্রশাসন ও মহানগর পুলিশ জিরো টলারেন্সে থাকার পরও কার মদদে নগরীতে অবৈধ পশুর হাটর বসানো হচ্ছে? তবে এবার প্রশাসনের এই জিরো টলারেন্স ভূমিকার কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে নগরবাসীর। তারা বলছেন, প্রতি বছরই এ ধরনের হাক-ডাক শোনা যায়। কিন্তু আদতে কোনো পশুর হাটই উচ্ছেদ হয় না। গত বছর দুটো অবৈধ হাট উচ্ছেদ করা হলেও তারা পরবর্তীতে ঠিকই হাট পরিচালনা করেছেন। একইভাবে এবারও অবৈধ পশুর হাট বসতে কোনো ব্যতিক্রম হবে না।সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রর্দশন করে এসব অবৈধ পশুর হাট বসায়। যার জন্য দেশে নোংরা রাজনৈতিক ব্যবস্থা দায়ী বলেও আমরা মনে করি। সোমবার সরেজমিনে সিলেট নগরের ঘুরে দেখা যায়, মেন্দিবাগ মোড়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সের প্রবেশ পথ ও পেছনে কয়েদি মাঠে পশুর হাট বসানো হয়েছে। এমন কি কয়েদি মাঠের প্রবেশ পথে প্রকাশ্যে ‘বিরাট গরু-ছাগলের হাট’ লিখে গেইটও লাগানো হয়েছে। মিরাবাজারস্থ দাদাপীড়ের মোকামের পাশে, সোনাপাড়া আনন্দ মাঠে, আরামবাগ-বালুচর (এমসি কলেজের পাশে), শাহী ঈদগাহ টিভি গেইট স্কলার্সহোম মাঠে, মাছিমপুরস্থ জালালাবাদ গ্যাস অফিসের প্রবেশ পথে, রিকাবীবাজারে ও দক্ষিণ সুরমাস্থ ঝালুপাড়ায় বসানো হচ্ছে অবৈধ পশুর হাট। এ সকল স্থানের কোনটিতে ইতোমধ্যেই কেনা-বেচা শুরু হয়ে গেছে।জানা গেছে, প্রতি বছরই সিসিক এলাকায় বিপুল সংখ্যক অবৈধ পশুর হাট বসানো হয়। এ কারণে সরকার প্রতি বছর বড় অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হয়। গত বছরের মতো এবারো সিলেট সিটি কর্পোরেশন নগরীতে কোনো পশুর হাট ইজারা দেয়নি। সিলেট সদর উপজেলা থেকে ৪টি হাট ইজারা দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো শাহপরান গেইট, এভারগ্রিন মাঠ, মিরাপাড়া ও লাক্কাতুরা পশুর হাট। এ ৪ হাট ইজারায় সরকার প্রায় ২০ লাখ টাকার রাজস্ব আয় করে। গত বছর সিলেট নগরের অন্তত ১০টি স্থানে অবৈধ পশুর হাট বসানো হয়। এ বছরও একইভাবে প্রস্তুতি চলছে অবৈধ পশুর হাট বসানোর। নগরের শাহী ঈদগাহ সদর উপজেলা খেলার মাঠে পশুর হাট বসিয়ে মাইকিং শুরু করা হয়েছে। গত ৪ বছর ধরে এ স্থানে সরকার দলের নাম ভাঙিয়ে পশুর হাট পরিচালনা করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ,বিএনপি ও ছাত্রদল নেতা কর্মীরা।সিলেট সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নগরীতে কোনো পশুর হাটের অনুমতি দেয়া হয়নি। কেউ কোনো হাট পরিচালনা করলে তার অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। কোনো অবৈধ হাট বসলে তা উচ্ছেদের দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের।সিলেট জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলে এসব অবৈধ পশুর হাট উচ্ছেদ করা হবে।মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. রহমত উল্লাহ বলেন, সিসিক সহযোগিতা করার কথা বলছে তাই পুলিশ প্রস্তুত আছে। বৈধ অবৈধ তো পুলিশ জানে না এবং সিসিকও এখনো কোনটি বৈধ আর কোনটি অবৈধ জানিয়ে চিঠি বা উচ্ছেদের অনুমতি দেয় নি।ছামির মাহমুদ/এসএস/পিআর
Advertisement