আইন-আদালত

বুকের ব্যথায় কাঠগড়ায় বসে পড়লেন জি কে শামীম

দশ দিনের রিমান্ড শেষে যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে আজ (বুধবার) আদালতে হাজির করা হয়। বুধবার দুপুরে তাকে আদালত চত্বরে নেয়া হয়। বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে কাঠগড়ায় তোলা হয়। ৩টা ৪৫ মিনিটে বুকে ব্যথা অনুভব করলে তিনি বসে পড়েন। এসময় তাকে বুক চেপে ধরতে দেখা যায়।

Advertisement

ওই সময়ে পুলিশ সদস্যদের দেখা যায় তার জন্য একটা ওষুধের বাক্স নিয়ে আসতে। এসময় ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীম জানতে চান, 'কী ওষুধ দিচ্ছেন ওনাকে?'। উত্তরে পুলিশ জানায়, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত, রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে আনার সময় র্যাব ওষুধগুলো নিয়ে এসেছে।

বিচারক তখন ওষুধগুলো দেখতে চান। পুলিশ বিচারককে ওষুধগুলো দেখান।

এসময় জি কে শামীমের আইনজীবীরা বলেন, তিনি (শামীম) অসুস্থ। বিএসএমএমইউতে তার চিকিৎসার জন্য আমরা একটি আবেদন দিলাম।

Advertisement

এদিন আদালতে শামীমের আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান হাওলাদার ও ঢাকা বারের সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান রচি প্রমুখ।

আইনজীবীরা শুনানি দীর্ঘায়িত করতে চাইলে বিচারক বলেন, আসামি নিজেই অসুস্থবোধ করছেন তাই আপনারা শুনানি দীর্ঘ করবেন না।

এরপর উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত মানি লন্ডারিং মামলায় পাঁচদিন ও অস্ত্র মামলায় চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর ফলে যুবলীগ নেতা জি কে শামীমকে ফের ৯ দিনের রিমান্ড হলো।

এর আগে ১০ দিনের রিমান্ডে ছিলেন তিনি। বুধবার গুলশান থানায় দায়ের হওয়া মানি লন্ডারিং মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন।

Advertisement

এরপর মানি লন্ডারিং মামলায় তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন সিআইডি পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু সাঈদ। অন্যদিকে অস্ত্র আইনে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন র‍্যাব-১-এর উপ-পরিদর্শক শেখর চন্দ্র মল্লিক।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মানি লন্ডারিংয়ে জি কে শামীমের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু সাঈদ। আদালত শুনানির জন্য আজ (বুধবার) দিন ধার্য করেন। শুনানি শেষে দুই দফায় মোট ৯ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গতকাল (মঙ্গলবার) এ মামলায় তার সাত দেহরক্ষীর চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তারা হলেন- দেলোয়ার হোসেন, মুরাদ হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, সহিদুল ইসলাম, কামাল হোসেন, সামসাদ হোসেন ও আমিনুল ইসলাম।

এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জি কে শামীমসহ তার সাত দেহরক্ষীকে গুলশান থানায় মানি লন্ডারিং মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী তার সাত দেহরক্ষীকে মানি লন্ডারিং মামলায় গ্রেফতার দেখান। জি কে শামীম অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় তার উপস্থিতিতে গ্রেফতার দেখানোর আবেদনের শুনানি হবে বলে জানান গুলশান থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক রকিবুল হাসান।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবেদনে উল্লেখ করেন, শামীম তার দেহরক্ষীদের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে নিজ নামে লাইসেন্সকৃত অস্ত্র প্রকাশ্য বহন, প্রদর্শন ও ব্যবহার করে লোকজনের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে আসছিলেন।

বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারবাজি, মাদক ও জুয়ার ব্যবসাসহ স্থানীয় টার্মিনাল, গরুর হাট-বাজারে চাঁদাবাজি করে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হওয়ায় গুলশান থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে আসামিদের পুনঃগ্রেফতার দেখানোর জন্য আদালতে আরজি জানান তিনি।

২১ সেপ্টেম্বর অবৈধ অস্ত্র ও মাদক মামলায় আলোচিত যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর মধ্যে অস্ত্র মামলায় পাঁচদিন ও মাদক মামলায় পাঁচদিন। এ ছাড়া সাত দেহরক্ষীকে অস্ত্র মামলায় চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গত ২০ সেপ্টেম্বর যুবলীগ নেতা জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীকে আটক করে র‍্যাব। পরদিন তাদের গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়।

ওই অভিযানে এক কোটি ৮০ লাখ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ১৬৫ কোটি টাকার ওপর এফডিআর (স্থায়ী আমানত) পাওয়া যায়, যার মধ্যে তার মায়ের নামে ১৪০ কোটি ও ২৫ কোটি টাকা শামীমের নামে। একই সঙ্গে পাওয়া যায় মার্কিন ডলার, মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র।

জেএ/এসএইচএস/এমকেএইচ