বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে এমপিরা বাধা দেন। এজন্য অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করা যাচ্ছে না।
Advertisement
সম্প্রতি গাজীপুর জেলায়ও এ ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে তিনি সংসদীয় কমিটিতে জানান। রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সপ্তম বৈঠকে এমন ক্ষোভ প্রকাশ করেন নসরুল হামিদ।
কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকারের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, মো. আলী আজগার, মো. নূরুল ইসলাম তালুকদার, মো. আছলাম হোসেন সওদাগর, মোছা. খালেদা খানম ও বেগম নার্গিস রহমান অংশ নেন।
বৈঠকে উপস্থিত এমপিরা আবারও অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ চিহ্নিত করে তা বিচ্ছিন্নের সুপারিশ করেন।
Advertisement
বৈঠক শেষে কমিটি সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ধরনের একটি অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু কমিটি বলেছে, এমপির পক্ষ থেকেই হোক বা অন্য কোনো রাজনৈতিক চাপেই হোক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে।
বৈঠকের কার্যপত্রে জানা গেছে, সরকারি মালিকানাধীন ছয়টি গ্যাস কোম্পানির মধ্যে চারটি কোম্পানি এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত মোট ৯৭ হাজার ৯৩৫টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। এ সময় ৩০৭ কিলোমিটার গ্যাসলাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়। গ্যাসলাইনের পুরোটাই ছিল আবাসিক খাতের। বিচ্ছিন্ন করা সংযোগেরও প্রায় সিংহভাগই আবাসিক খাতের। আবাসিকের ৯৭ হাজার ৮৩টি চুলা এ সময় বিচ্ছিন্ন করা হয়। বাকিগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক খাতের ২০২টি, শিল্প খাতের ৮৭টি, সিএনজি ২২টি ও ক্যাপটিভ সংযোগ ৪১টি।
বৈঠকে জানানো হয়, ২০২০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৩,০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। ৯৬ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ দেয়া হবে।
বৈঠকে গ্যাসের সিস্টেম লসের পরিমাণ সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনার পাশাপাশি সিস্টেম লসের স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণ করে দেয়ার সুপারিশ করে। বৈঠকে পেট্রোবাংলার গ্যাস বিপণন কোম্পানিসমূহের বিদ্যমান সিস্টেম লস হ্রাসে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে আলোচনা হয় এবং সিস্টেম লস সামগ্রিকভাবে না দেখিয়ে আলাদা আলাদাভাবে দেখানোর জন্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
Advertisement
বৈঠকে অগভীর ও গভীর সমুদ্রসহ দেশে তেল, গ্যাস, কয়লা ও অন্যান্য খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয় এবং এসব সম্পদ সম্পর্কে যথাযথ সমীক্ষা পরিচালনার মাধ্যমে যাতে এগুলো জনকল্যাণে কাজে লাগানো যায় সেজন্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৫,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের চ্যালেঞ্জ উত্তরণে গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় কমিটি দেশের সব স্থানে সমপরিমাণ গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতের পাশাপাশি অপশোর গ্যাস আহরণে আরও বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করে। বৈঠকে সারাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে দেশের গ্যাস ও বিদ্যুৎ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য সংসদীয় কমিটির সদস্যদের গ্যাস ও বিদ্যুতের স্থাপনাসমূহ পরিদর্শনের জন্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমসহ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এইচএস/এমএআর/এমএস