দেশজুড়ে

লঞ্চ যাত্রীদের ভোগান্তির সঙ্গে গুণতে হবে বেশি ভাড়া

ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা-বরিশাল নৌ-রুটে শুরু হবে সরাসরি লঞ্চের বিশেষ সার্ভিস। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ২০ থেকে ২২টি লঞ্চ ঢাকার সদরঘাট ত্যাগ করবে। একইভাবে কর্মস্থলে ফিরতে ঈদের একদিন পর ২৭ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বরিশাল থেকে লঞ্চের বিশেষ সার্ভিসে ২২টি লঞ্চ চলাচল করবে। এছাড়া সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সরকারি জাহাজের বিশেষ সার্ভিস। চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।এদিকে, বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে চলাচলকারী বিলাসবহুল ১৫টি লঞ্চের প্রায় দেড় হাজার কেবিন। তারপরও কেবিনের টিকিট সংকট থেকেই যাচ্ছে। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব কেবিন বিক্রি হয়ে গেছে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও কেবিনের মূল্য বৃদ্ধি করে তা বিক্রি করেছে লঞ্চ কোম্পানিগুলো। একই পথ অনুসরণ করেছে বিভাগের অপর পাঁচটি জেলা থেকে চলাচলকারী লঞ্চ মালিকরা। চাহিদার তুলনায় কেবিন সংখ্যা কম ও কালোবাজারিদের তৎপরতার কারণে কেবিনের টিকিট পেতে চির চেনা যুদ্ধ করতে হচ্ছে যাত্রীদের।অপরদিকে, ঈদকে সামনে রেখে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ-রুটগুলোতে বাড়ানো হচ্ছে লঞ্চ ভাড়া। উৎসব মৌসুম এলেই প্রতি বছর সরকার নির্ধারিত বেশি ভাড়ার ফাঁদে পড়তে হয় যাত্রীদের। লঞ্চ মালিকদের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সারা বছর রাজধানী থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চগুলোতে ডেকে ২০০, সিঙ্গেল কেবিন ৮৫০ এবং ডাবল ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা ভাড়া নেয়া হয়। ভিআইপি কেবিনের ভাড়া নেয়া হয় প্রকারভেদে তিন থেকে চার হাজার টাকা। কিন্তু সরকারের সর্বশেষ নির্ধারিত লঞ্চ ভাড়া অনুযায়ী ডেকের ভাড়া ২৫৮, সিঙ্গেল কেবিন ১৩৫০ এবং ডাবল কেবিন ২৩৫০ টাকা। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার ক্ষেত্রে ভিআইপি কেবিনের ভাড়া নির্ধারণ করা নেই। সারা বছর লঞ্চ মালিকরা উপরোক্ত ভাড়া নিলেও ঈদুল ফিতর এবং ঈদ উল-আজহার সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অজুহাত তুলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন। ঈদ পূর্ব এবং পরবর্তী ১৫ দিন চলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়।লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার মধ্যেই বাড়তি ভাড়া নেবেন। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে তারা বর্ধিত ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন শুরু করবেন। সরকার নির্ধারিত রেটের মধ্যে থেকেই এবারের ঈদুল আজহায় ডেক ২৫০, সিঙ্গেল (এসি/ননএসি) ১০০০ এবং ডাবল (এসি/ননএসি) ২১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চার হাজার টাকার ভিআইপি কেবিনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। তিনি আরো জানান, সারা বছর লঞ্চ মালিকরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করেন। এতে অনেক রুটে লোকসানও হয়। ঈদের সময় যাত্রী বেশি হওয়ার কারণে ওই লোকসান কাটিয়ে ওঠার সুযোগ আসে। তাছাড়া বিশেষ সার্ভিস দিতে গিয়ে ঈদের আগে ও পরে উভয় প্রান্ত থেকে খালি জাহাজ চালিয়ে যেতে হয়। এ জন্য লঞ্চ মালিকরা জ্বালানি তেলের বাড়তি ব্যয় পুষিয়ে নিতে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার মধ্যেই বাড়তি ভাড়া নিয়ে থাকেন। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, লঞ্চ মালিকরা ঘরমুখো লাখ লাখ মানুষের অসাহয়ত্বকে পুঁজি করে দুটি ঈদ উৎসবে সরকারি রেটের নামে যাত্রীদের শুভংকরের ফাঁদে ফেলেন। আর কোটি কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া হাতিয়ে নেন। বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আবুল বাশার মজুমদার জানান, নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে চলাচলকারী পারাবত কোম্পানির চারটি, সুন্দরবনের দুইটি, কীর্তনখোলার দুইটি, সুরভীর তিনটি, টিপুর দুইটি এবং কালাম খান ও দ্বীপরাজের একটি করে লঞ্চের সঙ্গে দিনের বেলায় গ্রিন লাইনের দুইটি জাহাজ যাত্রী পরিবহন করবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আরো সাতটি লঞ্চ বিশেষ সার্ভিসে যোগ হবে। লঞ্চগুলো ঢাকার সদরঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে। মঙ্গলবার থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ বিশেষ সার্ভিসে দুইটি ভায়া লঞ্চসহ ২৪টি লঞ্চ দক্ষিণাঞ্চলসহ বরিশালের যাত্রী পরিবহন করবে। এছাড়া বিভাগের ঝালকাঠী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা ও পটুয়াখালীর যাত্রীরা ঢাকার সদরঘাট থেকে সিডিউল অনুযায়ী যে সকল লঞ্চ চলাচল করত সেভাবেই করবে। ওই পাঁচটি জেলায় যাত্রীর চাপ না থাকায় লঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়নি।ঈদের দুই দিন পর থেকে কর্মস্থলমুখী মানুষের যাতায়াত সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে বরিশাল থেকে বিশেষ সার্ভিসে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০টি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। ৩০ সেপ্টেম্বরের পর যাত্রীর চাপ না থাকলে বিশেষ সার্ভিস ওই দিন থেকে বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর সিডিউল অনুযায়ী বরিশাল-ঢাকা ও ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটে বিলাসবহুল ১৫টি লঞ্চ এবং দিনের বেলায় বরিশাল ও ঢাকা প্রান্ত থেকে গ্রিন লাইন সার্ভিসের দুইটি জাহাজ চলাচল করবে। নিরাপত্তার ব্যাপারে তিনি জানান, অতিরিক্ত যাত্রীবহন রোধ, প্রয়োজনীয় বয়া এবং প্রশিক্ষিত চালক ও অন্যান্য কর্মচারী যাতে লঞ্চে থাকে সে ব্যাপারে দক্ষিণাঞ্চলের সকল স্টেশনে বার্তা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ পথে ঈদের আগে ও পরে ২০ দিন বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভীক সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হবে।   বিআইডব্লিউটিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম মিশা জানান, সিডিউল অনুযায়ী ঈদের আগে ঘরমুখো যাত্রী পরিবহনে ২১ সেপ্টেম্বর পিএস টার্ন ও এমভি মধুমতি, ২২ সেপ্টেম্বর পিএস মাহসুদ ও এমভি বাঙ্গালি, ২৩ সেপ্টেম্বর পিএস অস্ট্রিচ ও এমভি মধুমতি, ২৪ সেপ্টেম্বর পিএস লেপচা ও এমভি বাঙ্গালি ঢাকা থেকে ছেড়ে পিরোজপুরের হুলারহাট পর্যন্ত যাবে। এ জাহাজগুলো চাঁদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠী স্ট্রেশনে যাত্রাবিরতি করবে। ঈদের পরে কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের জন্য ২৬ সেপ্টেম্বর এমভি বাঙ্গালি ও পিএস লেপচা, ২৭ সেপ্টেম্বর পিএস মাহসুদ ও এমভি বাঙ্গালি, ২৮ সেপ্টেম্বর পিএস অস্ট্রিচ ও এমভি বাঙ্গালি, ২৯ ডিসেম্বর পিএস লেপচা ও এমভি বাঙ্গালি এবং ৩০ সেপ্টেম্বর এমভি মধুমতি ও পিএস টার্ন হুলারহাট থেকে ছেড়ে ঝালকাঠী-বরিশাল-চাঁদপুর হয়ে ঢাকা যাবে। যাত্রী চাহিদা থাকলে এ রুটে ট্রিপ আরো বৃদ্ধি করা হবে বলেও জানান তিনি।সাইফ আমীন/এআরএ/আরআইপি

Advertisement