একটু সচেতনতাই পারে বড় ধরনে বিপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে করণীয় বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে নিজ উদ্যোগে লিফলেট ও স্টিকার তৈরি করে চালক, পথচারী, যাত্রীসহ শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে থাকেন।
Advertisement
যার কথা বলছিলাম, তিনি বরগুনার সাঈদ রিমন। নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পেশায় একজন বস্ত্র প্রকৌশলী হিসেবে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
জানা যায়, প্রতিদিন খুব সকালে বাসা থেকে বের হয়ে অফিস শুরুর আগে স্টেশনে বা বাসে ক্যাম্পেইন শুরু করেন। আবার অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে ঠিক একই কাজ করেন। চালকদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্টেশনে কর্মশালা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই তিনি এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন।
এ ব্যাপারে সাঈদ রিমন বলেন, ‘মিল্টন নামে এক প্রতিবেশী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। দুঃখজনক হলো, সেই বড় ভাইয়ের মৃত্যুর সময় তার বুকে আমার হাত ছিল। মৃত্যুযন্ত্রণা যে কী, সেটা আমি সেদিন নিজ চোখে দেখেছি। মৃত্যুর সময় তার স্ত্রী তিন মাসের গর্ভবতী ছিলেন। ওই সন্তান পৃথিবীতে এলেও তার বাবার মুখ দেখা হয়নি।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আমার খুব কাছের মানুষ ছগির ভাই কিছুদিন আগে তার দুই সন্তান রেখে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। যা কখনোই মেনে নিতে পারছি না। প্রতিনিয়ত সড়কে এভাবে কারো না কারো প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। কেউ তার বাবা-মাকে হারাচ্ছে, কেউবা তার সন্তানকে হারাচ্ছে।’
তাই তিনি মনে করেন, সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে ব্যক্তিসচেতনতার বিকল্প নেই। প্রতিটি মানুষের উচিত নিয়ম-কানুন মেনে পথ চলা। রিমন বলেন, ‘প্রায়ই দেখবেন মহাসড়কে বাসে মুখোমুখি সংঘর্ষ। এটা এড়ানোর জন্য অবশ্যই সব মহাসড়ক একমুখী বা অনওয়ে করা উচিত।’
চালকদের মাঝে রিমন তার একক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাতে তারা বেপরোয়া গতি থেকে বিরত থাকে, ট্রাফিক আইন মেনে চলে। এছাড়া মোটরসাইকেল আরোহীরা বেপরোয়া গতি এবং হেলমেট ব্যবহার না করার কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। মোট দুর্ঘটনার ৩৩ শতাংশ মানুষ মারা যাচ্ছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণে।
পাশাপাশি পথচারীরা যাতে রাস্তা পারাপারে মোবাইল ফোন বা হেডফোন ব্যবহার না করে। জেব্রাক্রসিং বা ওভারব্রিজ ব্যবহার করে। দেখা যায়, মাঝে মাঝেই মোবাইলে কথা বলা বা হেডফোন ব্যবহারের কারণে ট্রেনে কাটা পড়ছে অনেকেই। তাই এসব বিষয়ে তিনি সচেতন করে যাচ্ছেন।
Advertisement
সাঈদ রিমন মনে করেন, বাংলাদেশে চালকদের মাঝে প্রচুর কর্মশালার প্রয়োজন। এজন্য বাস মালিকপক্ষ অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। একজন মালিকের যদি দশটি বাস থাকে, আর মোট ৪০ জন স্টাফ থাকে। তাদের নিয়ে ওই বাসমালিক সচেতনতামূলক কর্মশালা করতে পারে। এজন্য তাদের সদিচ্ছা এবং ব্যক্তিউদ্যোগ প্রয়োজন। চালক সচেতন থাকলে তার নিজের গাড়িটিও দুর্ঘটনার কবল থেকে রেহাই পাবে।
সড়ক দুর্ঘটনার ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘যে মুখে ডাকি মা সে মুখে মাদককে বলি না’ স্লোগানে মাদকবিরোধী প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া চলার পথে মানুষ প্রতিনিয়ত চুরি, ছিনতাইয়ের শিকার হন। মোবাইল ছিনতাই, মানিব্যাগ চুরি, মলম পার্টির খপ্পর এড়াতে মানুষ যাতে সচেতন থাকে। সেজন্য পাবলিক প্লেস বা বাসে তিনি এসব বিষয়ে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করেন।
তার এমন ক্যাম্পেইনের কারণে মানুষের কাছে তিনি ‘সচেতনার ফেরিওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত। এমনকি তার ফেসবুক পোস্টেও প্রায় ৫০০ সচেতনতামূলক স্থিরচিত্রের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। তার সচেতনতামূলক স্থিরচিত্র দেখতে ভিজিট করতে পারেন (www.facebook.com/rimon.sayeed)।
এসইউ/পিআর