বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের মেয়াদ শেষ হলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির। কবে নাগাদ পূরণ হবে সে বিষয়েও জানেন না দলটির নেতাকর্মীরা। এছাড়া স্থায়ী কমিটিতে যারা রয়েছেন কেউ বার্ধক্যজনিত কারণে কেউবা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয়। এভাবেই চলছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির কার্যক্রম।
Advertisement
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ সর্বশেষ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের মার্চে। কাউন্সিলে বেগম খালেদা জিয়া দলটির চেয়ারপারসন, লন্ডন নির্বাসিত তারেক রহমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসচিব নির্বাচিত হন। ওই তিনজনই পদাধিকার বলে স্থায়ী কমিটির সদস্য। এছাড়া ওই কাউন্সিলের মাধ্যমে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার, আ স ম হান্নান শাহ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই পান।
১৯ সদস্যবিশিষ্ট স্থায়ী কমিটি হলেও তখন ঘোষণা হয় ১৭ সদস্যের নাম। এর কিছুদিন পর বার্ধক্যজনিত কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন এম কে আনোয়ার, আ স ম হান্নান শাহ ও তরিকুল ইসলাম। তিনজনই পর্যায়ক্রমে মারা যান।
পরে বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নাম ঘোষণা হয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে। ১৯ সদস্যবিশিষ্ট স্থায়ী কমিটিতে বর্তমানে রয়েছেন ১৬ জন। এর মধ্যে অন্তত নয়জনই রয়েছেন জটিল পরিস্থিতিতে।
Advertisement
দলটির একাধিক সূত্র মতে, বিএনপির স্থায়ী কমিটি অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। কারণ একদিকে কমিটি এখনও পূর্ণাঙ্গতা পায়নি, অন্যদিকে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তথা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হোয়াটসঅ্যাপে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
এছাড়া স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে সালাহউদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে ভারতের শিলংয়ে। যারা দেশে অবস্থান করছেন তাদের মধ্যে লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দীর্ঘদিন অংশ নিচ্ছেন না, বার্ধক্যজনিত কারণে দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় তিনি। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াও বেশ কিছুদিন ধরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আগে প্রেস ক্লাবভিত্তিক মানববন্ধন বা ঘরোয়া সভায় সক্রিয় ছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মেজাজে পরিবর্তন ঘটেছে। নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠক বা দলের অতি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি ছাড়া আগের মতো তাকে আর দেখা যায় না। বার্ধক্যজনিত কারণে তার এ পরিবর্তন।
ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারেরও একই পরিস্থিতি। নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠক ছাড়া অন্য কোনো কর্মসূচিতে তেমন অংশ নেন না। লাঠির সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না বিজ্ঞ এ রাজনীতিক। অন্য সদস্য নজরুল ইসলাম খান দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিলেও অধিকাংশ সময় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। মাঝে মধ্যে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যেতে হয়। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকেও চিকিৎসার জন্য বিদেশ ছুটতে হচ্ছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক সদস্যের দাবি, ‘দলের স্থায়ী কমিটিসহ যেকোনো পর্যায়ের সদস্যপদ শূন্য রাখা বা অন্তর্ভুক্তি- সবকিছুর একক ক্ষমতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। তিনি যখন যা চাইবেন তখন সেটি হবে। এ নিয়ে অন্যরা চিন্তাভাবনা করতে পারেন, ক্ষেত্রবিশেষ মতামত বা অ্যাডভোকেসিও দিতে পারেন কিন্তু সিদ্ধান্তের ক্ষমতা একমাত্র তারেক রহমানের।’
Advertisement
স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণ প্রসঙ্গে কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ভাষ্য, ‘শূন্যপদ পূরণের জন্য দলীয় ফোরামে বা স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কোনো আওয়াজ পাচ্ছি না। তবে এটা তো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ওপর নির্ভর করে। তিনি চাইলে যেকোনো সময় শূন্যপদ পূরণ করতে পারেন, আবার নাও করতে পারেন।’
কেএইচ/জেএইচ/এমএআর/জেআইএম