ফেনীর আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মামলার ১৬ আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তাদের কৌঁসুলিরা। পরে আদালত রোববার রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি খণ্ডনের দিন ধার্য করেন।
Advertisement
আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে জেলা জজ আদালতের পিপি হাফেজ আহাম্মদ বলেন, গত ২৭ জুন থেকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে সাক্ষ্য শুরু হয়েছিল। ১২ কার্যদিবস ধরে রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক চলে। বৃহস্পতিবার আসামি পক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছে। বিচারক রোববার রাষ্ট্রপক্ষকে যুক্তি খণ্ডনের সুযোগ দিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার আদালতে মামলার আসামি সাইফুর রহমান জোবায়ের, কামরুন্নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপি ও মহিউদ্দিন শাকিলের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন তাদের আইনজীবী আহসান কবির বেঙ্গল। তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী রাজীব হাসান ও মাসুদুর রহমান।
এদিন আদালতে তারা বলেন, ৬ এপ্রিল সকালে ঘটনার পর সোনাগাজী মডেল থানার তৎকালীন ওসি-তদন্ত কামাল হোসেন সোনাগাজী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সেখানে নুসরাত আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে কোথাও ওই সাধারণ ডায়েরির কথা উল্লেখ নেই। বিষয়টি পুরোপুরি গোপন করা হয়েছে।
Advertisement
আরেক প্রসঙ্গে আইনজীবীরা বলেন, পুরো মামলাটি সাজানো। এটা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের কোন্দলের ফল। এ মামলায় দলীয় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার একটা প্রচেষ্টা বিদ্যমান। তারা আসামিদের খালাস দাবি করেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ জনের সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
Advertisement
রাশেদুল হাসান/এমবিআর/এমকেএইচ