ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা ও পিরোজপুর নৌ-রুটের অধিকাংশ স্থানে নৌযানের মাস্টার-চালকদের সংকেতের জন্য স্থাপন করা বয়া, বিকন বাতি নেই। অনেক স্থানের দিক-নির্দেশনা স্রোতের টানে ভেসে অন্য স্থানে গিয়ে আটকে আছে। ভুল দিক-নির্দেশনা বহন করায় আসন্ন ঈদ-উল-আযহায় নৌ দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন নৌযান শ্রমিকরা।নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক আবুল বাশার মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, বিআইডব্লিউটিএর চাঁদপুর ও বরিশাল দুইটি অংশের ঠেলাঠেলিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর ঈদ প্রস্তুতি সভায় এ বিষয়ে কঠোরভাবে বলা হয়েছে। ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের যাত্রীবাহী লঞ্চ মাস্টারদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি এলাকায় নাব্যতা সংকট থাকায় ৩০ বছর আগে একটি স্পারিকেল বয়া স্থাপন করা হয়েছিল। এখন সেখানে নাব্যতা সংকট নেই কিন্তু বয়াটি আছে। বয়ার ওপর প্রতিফলন টেপ না থাকায় রাতে লঞ্চের সার্চ আলোয় সেটি দেখা যায় না। যে কোনো সময় বয়ার সঙ্গে ধাক্কা লেগে নৌযানের তলা ফেটে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একই এলাকায় চ্যানেল দিক নির্দেশনাকারী একটি লাইটেড বয়ার লাইট ভেঙে গেলে নদীর মধ্যে এখনো স্ট্যান্ডটি রয়েছে। ওই স্ট্যান্ডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বিকন বাতি নেই চাঁদপুরসংলগ্ন মেঘনার লগিমারা চরের দক্ষিণ প্রান্তে, মাঝিরচরের দক্ষিণ প্রান্তে, শেওড়া মিয়ার চর এবং হিজলা উপজেলা সংলগ্ন চরকাইছমার পশ্চিম প্রান্তে। একইভাবে বয়া নেই লগিমারা চর, হরিণা ফেরিঘাট সংলগ্ন নয়াহাট এলাকায়। অন্যদিকে বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ সংলগ্ন আড়িয়াল খাঁ-কীর্তনখোলা সংযোগ চ্যানেলে অপ্রয়োজনীয় একটি বয়া স্থাপন করে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন করা হচ্ছে। অথচ মেঘনার চরভৈরবী থেকে শেওড়া মিয়ার চর পাড়ি দেয়ার সময় মাঝামাঝি স্থানে একটি বয়ার প্রয়োজন হলেও সেখানে বয়া নেই। এছাড়াও ঝালকাঠির সুগন্ধা, বিষখালী ও গাবখান নদীর মোহনায় কোনো বয়া এবং বিকন বাতি নেই। মোহনায় জেগে ওঠা বিশাল চর জানান দিতে সামান্য কিছু স্থানে বাঁশের খুটি পুতে রাখা হয়েছে। কিন্তু চর আরো অনেক ভিতরে থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তীব্রতর হচ্ছে। পানির স্তর নিচে থাকলে চরটি দেখা যায়। কিন্তু জোয়ারের সময় পানি বৃদ্ধি পেলে পুতে রাখা বাঁশের খুঁটিও ডুবে যায়। এতে করে যাত্রীবাহী নৌযান আটকে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও করেছেন গাবখান নদীর ইজারার টাকা উত্তোলনকারী শ্রমিকরা। আসন্ন ঈদ-উল-আযহার আগে বয়া-বিকন বাতি সংকটের সমাধান না হলে মাঝপথে নৌযান আটকে গিয়ে যাত্রী দুর্ভোগের আশঙ্কা রয়েছে। লঞ্চের মাস্টাররা অভিযোগ করেছেন, ঢাকা-বরিশাল নৌ পথে ১২ থেকে ১৫টি স্পটে বয়া, বিকন, লাইটেড বিকল রয়েছে। তারা ঈদের আগেই এগুলো সচল করতে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানসহ সব দফতরে চিঠি দিয়েছেন। মাস্টাররা জানান, নৌপথ সচল রাখতে প্রচুর অর্থ বরাদ্দ হলেও তার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন বরিশাল জেলা সাধারণ সম্পাদক একিন আলী মাস্টার বলেন, ঈদের আগেই ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের দিক-নির্দেশক ঠিক করা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ প্রসঙ্গে বরিশাল পাইলট বিভাগের পরিদর্শক আ. গনি বলেন, মেঘনার মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে। প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক আ. হাই মালামাল সরবরাহ না দিলে কী করার আছে। তিনি বলেন, তারা মেরামত করলেও জেলেরা ভেঙে ফেলছে। মেরামতের নামে বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলো ভুয়া কথা। যখন যা দরকার তারা মেরামত করছেন। বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক একেএম আবুল বাসার বলেন, কিছু কিছু স্থানে বয়া, বিকন সংযোগ স্থাপনে সমস্যা আছে। প্রধান কার্যালয় থেকে এগুলো মেরামতের জন্য চিঠি এসেছে। তিনি বলেন, তার এরিয়া লাল খারাবাদ পর্যন্ত নৌপথের দিক-নির্দেশক অনেকাংশে ভালো। তবে চাঁদপুর এলাকায় ওই সমস্যা প্রকট। তিনি বলেন, ঈদের আগেই এগুলো ঠিক করা হচ্ছে।এসএস/পিআর
Advertisement