মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। মেয়াদের শেষের দিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত হল কমিটি হয়নি। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ।
Advertisement
গত বছরের ২৯ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। সম্মেলনের প্রায় আড়াই মাস পূর্ণ হওয়ার পর ওই বছরের ৩১ জুলাই ঢাবি ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক হন সাদ্দাম হোসেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হয় মেয়াদ শেষের মাত্র দুই মাস আগে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনেকেই বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেয়েছেন। কেউ কেউ ছাত্রত্ব শেষে চলেও গেছেন। এতে হলগুলো এখন আর তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ফলে প্রতিটি হলেই তৈরি হয়েছে নতুন নতুন উপদল। তারা জড়িয়ে পড়ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। হলের শীর্ষ পদ প্রত্যাশীরাও পদের আশায় নিজের অবস্থান জানান দিতে এবং ‘আসল ছাত্রলীগ’ প্রকাশ করার জন্য বিরোধী সংগঠনের ওপর হামলার প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রমে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
দলের শীর্ষ দুই নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হলগুলোতে নতুন কমিটি না হওয়ায় মিছিল-মিটিংসহ সাংগঠনিক কার্যক্রমে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি অনেকটা কমে গেছে। হলের পদপ্রত্যাশীরা দীর্ঘদিন থেকে পরিশ্রম ও সময় দিলেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। এ নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। বারবার শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে বলা হলেও তারা সাড়া দিচ্ছেন না।
Advertisement
এদিকে, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। শাখা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার এক মাসের মাথায় তার নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতিকে বেধড়ক মারধর করেন তিনি। সেই ঘটনায় তদন্ত কমিটি হলেও তার তদন্তের কোনো অগ্রগতি গত এক বছরে হয়নি। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়াকে কেন্দ্র করে মুকাভিনেতা মীর লোকমানকেও মারধর করেন তিনি।
গত ১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) বনাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা) প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচে ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরকে ধাক্কা দেন এবং পরে ফেসবুকে তাকে ‘ডলা’ দিয়ে মারার হুমকি দেন। নিজেকে ‘আজরাইল’ বলে দাবি করেন সনজিত।
গত জুলায়ের মাঝামাঝি সময়ে ঢাবি শিক্ষার্থীদের সাত কলেজ বাতিলের দাবিতে মিছিলরত এক শিক্ষার্থীকে চড়-থাপ্পড় দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ব্যাপক সমালোচনাও হয়েছে। এছাড়া বিতর্ক থাকায় গেল ডাকসু নির্বাচনেও মনোনয়ন পাননি তিনি।
গত সোমবার ক্যাম্পাসে সভাপতি সঞ্জিত নিজে তার অনুসারীদের নিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেন। এতে তিন সাংবাদিক ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ মোট ৩০ জন আহত হন। কিন্তু এ হামলার ঘটনা অস্বীকার করেন সনজিত। ঘটনার সময় তিনি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে অবস্থান করছিলেন বলে দাবি করেন।
Advertisement
গত আগস্টে প্রটোকল দেয়াকে কেন্দ্র করে সনজিত চন্দ্র দাস ও তার অনুসারীদের দ্বারা লাঞ্চিত হন সংগঠনটির তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। ওই সময়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। তবে এসব কোনো ঘটনারই সুষ্ঠু সমাধান হয়নি। বহাল তবিয়তেই থেকে গেছেন তিনি।
প্রত্যেকটি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। প্রেস বিজ্ঞাপ্তির মাধ্যমে আমাদের কর্মীদেরকে সাংবাদিকদের সাথে ভাল আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছি। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
হল কমিটি কবে দিচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বছরের মধ্যেই আমরা কমিটি দেব। নেত্রী দেশে ফিরলেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আল-সাদী ভূইয়া/এমএসএইচ/পিআর