শিক্ষার ব্যয় বৃদ্ধি রুখো, গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সামিল হোন- প্রতিপাদ্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) ৫ম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
Advertisement
সমাবেশ শেষে আল কাদেরী জয়কে সভাপতি, শ্যামল বর্মণকে সহ-সভাপতি, নাসির উদ্দিন প্রিন্সকে সাধারণ সম্পাদক ও রুখসানা আফরোজ আশাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দেয়া হয়েছে।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় বেলুন উড়িয়ে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ ডা. মিলনের মা সেলিনা আক্তার। এর আগে জাতীয় সংগীত গাওয়ার সাথে সাথে জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উড়ানো হয়। ছাত্রফ্রন্টের এই সম্মেলনে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীবৃন্দ এসে যোগ দেন।
সম্মেলনের উদ্বোধন করে সেলিনা আক্তার সম্প্রতি বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের না থাকার প্রসঙ্গে বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর থেকে শিক্ষাঙ্গনগুলো ক্রমশ নানা কারণে বিতর্কিত হতে থাকে। দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের একাংশ বিদ্যার্জনের পরিবর্তে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি ইত্যাদি অনৈতিক কাজের সাথে জড়িয়ে পরে। আমি বলবো, এটা ছাত্রদের অপরাধ নয়, এটা আমাদের অপরাধ। আমরা কোমলমতি ছাত্রদের রাজনীতির নামে নানাভাবে প্রলুব্ধ করে তাদের নৈতিক অধঃপতনের সুযোগ করে দিয়েছি। বর্তমান অবস্থা আরো শোচনীয়।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, দেশে মাদকের রমরমা ব্যবসার ফলে তরুণ সমাজ আজ মাদকাসক্ত। সব মহলকে মনে রাখতে হবে, এরা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ। এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে। এই মুহূর্ত থেকে আমাদের নিজেদের চরিত্র সংশোধন করতে হবে। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। নতুবা একদিন দেখবেন আপনার একান্ত আপনজনও এই পঙ্কিলতায় ডুবে গেছে।
হতাশা প্রকাশ করে সেলিনা আক্তার বলেন, দুঃখ হয় এই ভেবে যে, মিলন শৃঙ্খলিত গণতন্ত্রকে মুক্তি দিতে প্রাণ দিয়েছিল, কিন্তু আজও সেই গণতন্ত্র শৃঙ্খলিতই রয়ে গেছে। সমাজে ধনী আরও ধনী হয়েছে, গরিব হয়েছে আরো গরিব। অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে একজন শহীদের মা হিসেবে বলতে চাই, আমরা বাঙালিরা বড় অকৃতজ্ঞ জাতি। কারণ যে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি তাদের স্বপ্নের কথা, সেই শহীদদের স্বপ্নের কথা আজ আমরা ভুলে গেছি। তাই দেশটাকে নিয়ে চলছে ক্ষমতার লড়াই আর লুটপাটের প্রতিযোগিতা। স্বাধীনতার সুফল থেকে তাই সাধারণ মানুষ হচ্ছে বঞ্চিত।
বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, আজকে এমন একটা সময় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সম্মেলন হচ্ছে যখন বাংলাদেশের মানুষ এই প্রশ্নটাই করছে যে, ক্ষমতায় থাকলে কি জাদুর মন্ত্র আসে, ক্ষমতায় থাকলে আলমারি খুললেই কোটি টাকা, তোষক তুললেই কোটি টাকা। সাধারণ মানুষের আলমারি খুললে বের হয় তেলাপোকা, সাধারণ মানুষের তোষক তুললে বের হয় ছারপোকা আর এদের আলমারি-তোষক তুললেই কোটি টাকা। এই কোটি টাকার উৎস কী? মানুষ এটা জানতে চায়।
প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল বলেন, আজকে যদি বাংলাদেশকে পথ দেখাতে হয়, এই ছাত্ররা যেভাবে বিগত দিনে পথ দেখিয়েছে আজকেও এই বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোই পথ দেখাবে। এই জন্য একমাত্র উপায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
Advertisement
সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স।
আল-সাদী ভূইয়া/এমএসএইচ/পিআর