দেশজুড়ে

পাহাড়েও থাবা জিকে শামীমের

বান্দরবানের একটি পাঁচ তারকা রিসোর্টেও যুবলীগের আলোচিত কেন্দ্রীয় নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের মালিকানা রয়েছে। রুমা-থানচি সড়কের সাত কিলোমিটারে অবস্থিত বিলাসবহুল রিসোর্টে সিলভান ওয়াই অ্যান্ড স্পাতেও তার ২ শতাংশ শেয়ার আছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন মন্টু।

Advertisement

তিনি জানান, জিকে শামীম সেখানে এ পর্যন্ত প্রায় দুই কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। পাঁচ তারকা এই রিসোর্টটি তৈরিতে ২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।

সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ সভার রেজুলেশন কপির তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিল একটি বোর্ড মিটিং জেলা সদরের ৩১৩ নম্বর রেজিস্টার্ড অফিসে অনুষ্ঠিত হয়। এতে জসিম উদ্দিন মন্টু চেয়ারম্যান, ফজলুল করিম চৌধুরী (স্বপন) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, গোলাম কিবরিয়া শামীম (জিকে শামীম) ও শামিল উদ্দিন শুভ উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এস এইছ এম মহসিন, উম্মে হাবিবা নাসিমা আক্তার, জিয়া উদ্দিন আবির ও জাওয়াদ উদ্দিন আরবাব পরিচালক হিসেবে আছেন।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মন্টুকে বান্দরবান সদরের ৩১৩ মৌজার ৮০৭ নম্বর হোল্ডিংয়ের ০.১৮৩৭ একর (প্রায় সাড়ে ১৮ শতক) তৃতীয় শ্রেণির জমি বিক্রি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদনের ক্ষমতা দেয়া হয়।

Advertisement

এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রিসোর্টের জন্য পরিচালকরা ৪৮ একর জমি অধিগ্রহণের কথা বললেও ১০০ একর জমি দখল করেছেন। আর সেখানে তারা পুলিশের জন্য একটি দ্বিতল ফাঁড়িও বানিয়েছেন।

লাইমি পাড়ার কারবারি বিরেন্দ্র কুমার ত্রিপুরা জানান, এখানে সাইঙ্গা মারমা, সাইঙ্গা ত্রিপুরা নামে দুটি পাড়া ছিল। সিলভান কর্তৃপক্ষ মারমাদের কাছ থেকে তাদের জায়গা কিনে নেয়। এরপর তারা (সিলভান) আমাদের জায়গাও তাদের বলে দখল করে চলাচলের রাস্তা, ঝিরি, ঝর্ণা তারকাঁটা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। ওনারা আসার আগে আমরা অনেক ভালো ছিলাম।

লাইমি পাড়ার বাসিন্দা রবার্ট থামজান বম জানান, রিসোর্ট মালিকদের সঙ্গে কথা ছিল তারা ঝিরিতে হস্তক্ষেপ করবেন না। কিন্তু তারা কার্যক্রম শুরুর পর কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঝিরির ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া ঘাস মারার বোতল ফেলে তারা ঝিরির পানি বিষাক্ত করেছে। জীব বৈচিত্র্যের ক্ষতি করছে। এখন আমরা ঝিরির পানিতে দুর্গন্ধ পাচ্ছি।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে জসিম উদ্দীন জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামে মোট ৪৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এর বাইরে এক ইঞ্চি জায়গাও দখল করা হয়নি। কোনো ব্যক্তির নামে নয়, এটা কোম্পানির নামে নেয়া হয়েছে। এই নামেই আমরা জায়গা কিনেছি।

Advertisement

এদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ব্যাপারে বান্দরবানের পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, ‘আমি আসার বহু আগে থেকেই এই প্রক্রিয়া চলমান। আমি আসার পরে তাদের সঙ্গে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাগজপত্র মিলিয়ে দেখেছি। পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে নাম দেয়া লাগে বিধায় আমার নাম দেয়া হয়েছে। লেখাই আছে পুলিশ সুপারের পক্ষে। সেখানে আমাদের আগেই ফাঁড়ি ছিল। সেটি পুরনো হওয়ায় তারা নতুন বিল্ডিং করে দিয়েছে।

কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে দান নিলে পুলিশ পরবর্তীতে প্রভাবিত হতে পারে কি না এমন প্রশ্নে তিনি জানান, জনস্বার্থে পাবলিকের কাছ থেকে পুলিশের দান বা অনুদান নেয়ার অনেক নজির আছে। পুলিশের ফাঁড়ি, তদন্ত কেন্দ্রের জায়গা অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি দান করেছেন এরকম নজির দেশে অনেক আছে।

তিনি আরও জানান, সুযোগ সুবিধা দেয়ার শর্তে তাদের কাছ থেকে কোনো জায়গা নেয়া হয়নি। ফলে তাদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কিছু নেই। তাদের বিরুদ্ধে এখন কিছু কিছু অভিযোগ আমাদের কাছে আসছে। তবে জায়গাটি নেয়ার সময় কোনো ধরনের অভিযোগ পাইনি। এখন যেসব অভিযোগ আসছে সেগুলো যথাযথভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশ বিভাগকে তারা জায়গা দিয়েছেন বলে আইনের ব্যত্য়য় ঘটালে পার পাবে না।

রিসোর্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট সেখানে রাইড অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ওয়াচ টাওয়ার, ওয়াটার রাইড ও গেম জোন স্থাপনের জায়গা পরিদর্শন করেছেন চীন, ভারত ও বুয়েটের পরামর্শক দল। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডের প্রকৌশলীরা রিসোর্টের ডিজাইন করছেন। মূল কাজের দায়িত্বে আছে বুয়েট।

২টি ভাগে রিসোর্টটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ৫ তারকা বিশিষ্ট রিসোর্টটির নির্মাণ শেষ হলে সেখানে ২৫০ জন পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারবেন। রিসোর্টের ভেতরে ৫ থেকে ৬ টি আধুনিক মানের রেস্টুরেন্ট থাকবে। থাকবে আধুনিক মানের সুইমিং পুল ও জিম ক্লাবসহ ও ৬টি গল্ফ ক্লাব। আগামী ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি রিসোর্টটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

প্রসঙ্গত গত শুক্রবার রাজধানীর নিকেতনের নিজ কার্যালয় থেকে ৬ দেহরক্ষীসহ যুবলীগের কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে শামীমকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, এফডিআর, মদ ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

জি কে শামীমের পূর্ণ নাম এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম। নারায়ণগঞ্জ শাখা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিও তিনি। সৈকত দাশ/এমএমজেড/এমএস