দুনিয়াতে বাবা-মা দুজনই প্রতিটি ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের জন্য বাবা-মা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। দুনিয়া দেখার একমাত্র উপলক্ষও তারা।
Advertisement
সন্তানের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার সার্বিক বিষয়ে নিবেদিত প্রাণ ও যত্নশীল মা-বাবা। তারা সন্তানের জন্য এতটাই নিঃস্বার্থ যে সবকিছুর ওপর কোনো কাজেই বাবা-মা সন্তানের কাছে কখনো কোনো বিনিময় চান না।
এ কারণেই ইসলাম বাবা-মার সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান নিশ্চিত করেছে। পরিবারেও বাবা-মার মর্যাদা ও সম্মান সবার ওপর। আল্লাহ তাআলা সুরা বনি ইসরাইলে ঘোষণা করেন-
‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা তিনি (আল্লাহ) ছাড়া কারো উপাসনা করো না এবং বাবা-মার প্রতি উত্তম আচরণ করো। তাদের একজন কিংবা উভয় যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের উফ্ বলো না এবং তাদের ভর্ৎসনা করো না বরং তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক নম্র ভাষায় কথা বলো। অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থাকো। আর বলো- ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩-২৪)
Advertisement
বাবা-মাকে অধিক ভালোবাস, তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে যেসব উপায় অবলম্বন করা যায় তার কিছু সহজ নমুনা তুলে ধরা হলো-
সন্তান তার বাবা-মাকে ভালোবাসে, এ কথা বাবা-মাকে বলা। বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালোবাসা উদযাপন করা। বাবা-মার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, আলাপচারিতা ও কাজে সদয় অনুভূতি প্রকাশ করা। সন্তানের সঙ্গে বাবা-মার শৈশবের স্মৃতিচারণ করে তাদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা জানানো।
>> বাবা-মার জন্য নিয়মিত দোয়া করা
Advertisement
সব সময় বাবা-মার জন্য প্রার্থনা করা। নিয়মিত আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে দোয়া করা। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি এ দোয়া পড়া-رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًاউচ্চারণ : ‘রাব্বিরহামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’অর্থ : ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছে।’
>> তাদের সময় দেয়া
বামা-মার সঙ্গে সময় ব্যয় করুন। বাবা-মাকে সময় দিন। ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা কর্ম ব্যস্ততা যত বেশিই হোক না কেন, এ ব্যস্ততার মাঝেই বাবা-মাকে সময় দিন। বাবা-মার সঙ্গে আলাপচারিতার সময় তাদের খুশি রাখতে পর্যাপ্ত সময় দিন।
>> পরামর্শ গ্রহণ করা
ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা কর্মব্যস্ত জীবনের প্রতি বিষয়েই বাবা-মার পরামর্শ বা উপদেশ গ্রহণ করুন। কেননা বাবা-মার কাছে এসব বিষয়ের উত্তম উপদেশ থাকতে পারে, যা সন্তানের জীবনকে আলোকিত করে দিতে পারে। বাবা-মার কাছে পরামর্শ চাইলে তারা খুশি হন এবং অন্তর থেকে সন্তানের জন্য দোয়া চলে আসে।
>> বার্ধক্যে তাদের প্রতি ধৈর্যধারণ করা
বাবা-মা যখন বার্ধক্যে পৌঁছবে, তখন তাদের প্রতি ধৈর্যশীল আচরণ করা। কারণ সন্তান যখন শিশু ছিল, তখন যা দেখত তা সম্পর্কেই বাবা-মাকে জিজ্ঞাসা করতো। সে সময় বাবা-মা সন্তানের জিজ্ঞাসায় বিরক্ত না হয়ে ধৈর্যের সঙ্গে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করতো। কিশোর বয়সে সন্তান যখন কোনো বিষয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতো তখনও বাবা-মা সন্তানের ক্ষিপ্ততায় রেগে না গিয়ে ধৈর্য ধারণ করতো। সুতরাং সন্তানের উচিত বাবা-মা বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের সঙ্গে ধৈর্যধারণ করা। এটি সন্তানের কাছে বাবা-মার প্রাপ্য।
>> বাবা-মার সঙ্গে জীবন-যাপন করা
বাবা-মার সঙ্গে বসবাস করার মাধ্যমে তাদেরকে নতুন নতুন জিনিস উপহার দেয়া। তাদের সঙ্গে হাসি-খুশি সময় কাটানোর মাধ্যমে তাদের প্রফুল্ল রাখা। তাদের যাবতীয় সেবা করে তাদের মুখে হাসি ফোটানো সন্তানের একান্ত কর্তব্য। আর তা যথাযথ করতে পারলেই বাবা-মার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা ও সম্মান প্রকাশ পাবে।
>> নিয়মিত কথা বলা
বাবা-মা যদি কাছে না থাকে তবে প্রতিদিন তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলা। এতে তারা প্রফুল্লবোধ করে, সন্তানের সঙ্গে কথা বলে তারা প্রশান্তি অনুভব করে।
>> তাদের প্রতি মনোযোগ দেয়া
বাবা-মা যখন কাছে থাকবে, তখন তাদের বেশি বেশি খোঁজখবর নেয়া। তাদের প্রতি গভীর মনোযোগ দেয়া। তাদের সঙ্গে কাজের বিষয়, আনন্দের বিষয়, খেলাধুলা, ইবাদত-বন্দেগি ইত্যাদি বিষয়ে পারস্পরিক সুসম্পর্কে মনোযোগ দেয়া।
>> বাবা-মার জন্য সাদকা করা
বাবা-মার জন্য গরিব-অসহায়দের মাঝে অর্থ সাদকা করা। সেবামূলক সংগঠনেও অর্থ দান করা যেতে পারে। যাতে বাবা-মা পরকালে সাদকার বিনিময় লাভ করতে পারে।
সব সন্তানের উচিত, বাবা-মার প্রতি উপরোল্লেখিত দায়িত্বগুলো যথাযথ পালন করা। আল্লাহর কাছে তাদের জন্য বেশি বেশি প্রার্থনা ও দোয়া করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বাবা-মার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। তাদের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা জানানোর তাওফিক দান করুন। তাদের জন্য দোয়া ও সাদকা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর