শান্তনু কর্মকার
Advertisement
ক’দিন আগেই ঘুরে এলাম মৌসুনী দ্বীপ। ভারতের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার এক কম পরিচিত পর্যটন স্থান। যার তিন দিক ঘেরা বঙ্গোপসাগরে। আর এক দিকে বয়ে চলেছে চেনাই নদী। নির্ভেজাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর আদর্শ সমুদ্র ভ্রমণের সব ধরনের অকৃত্রিম উপকরণ এখানে বিদ্যমান।
আধুনিকীকরণ এবং বহুল জনপ্রিয়তার চাপে সাধের দীঘা এখন জনসমুদ্রের সুনামিতে বিধ্বস্ত। উন্নয়ন আর কৃত্রিমতার মোড়কে আজ সে বড়ই মেকি। তাই সপ্তাহ শেষে বা হঠাৎ দু’দিনের ছুটিতে দীঘা পাড়ি দিতে আর মন সায় দেয় না কিছুতেই। অতএব বিকল্পের সন্ধান শুরু। মুঠোফোন আর অন্তর্জালের বদান্যতায় কসরত করতে হলো না বেশি। ছোট্ট প্ল্যানিং সেরে এক শনিবারের সাতসকালে চার বন্ধু মিলে হয়ে গেলাম দ্বীপান্তরী।
গন্তব্যে পৌঁছে খুব সহজেই মন দিয়ে ফেললাম মৌসুনীকে। সমুদ্রের বর্ণনা নতুন করে দেওয়ার কিছু নেই। শুধু জানিয়ে রাখি, এখানে স্নান করার জন্য জোয়ারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না। ঢেউও মন্দ নয়। উপকূল ঘেঁষেই সারিবদ্ধ ঝাউবন। সেই ঝাউবনের অলিন্দেই সার দিয়ে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট ক্যাম্প। তাবু এবং মাটির ঘরে রাত্রি যাপনের সুবিধা আছে। সবক’টি ক্যাম্পই খুব মৌলিক কিছু উপাদান নিয়ে ভ্রমণপিপাসুদের আতিথেয়তায় অপেক্ষমান।
Advertisement
অপ্রকৃতিস্থ বিলাসবহুলতার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে না এলে প্রকৃতির একাত্মতা অনুভব করা সম্ভব নয়। তাই তারাখচিত হোটেল বা রিসোর্টের সমতুল্য সুযোগ-সুবিধার প্রত্যাশা নিয়ে এখানে না আসাই ভালো। কারণ এ ধরনের প্রত্যাশা মাথাচাড়া দিলেই উন্নয়নের চোরাগোপ্তা আঘাতে ঝাউবন সাফ করে বহুতলীয় হোটেল গড়ে উঠবে।
কনজুমারিজম বড় ভয়ানক জিনিস। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ সম্প্রতি অ্যামাজনের দাবানল। তাই বিলাসিতাপ্রিয় সমুদ্রপ্রেমীদের জন্য না হয় বাকি সমুদ্রসৈকতগুলো রইল। এদিকে খানিক অস্বাচ্ছন্দ্য আর একরাশ নির্ভেজাল, অকৃত্রিম, অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর হয়ে মৌসুনী থাক মৌসুনীতেই।
যেভাবে গেলাম: শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে নামখানা। ভাড়া ৩০ টাকা। নামখানা থেকে টোটো রিজার্ভ করে হাতানিয়া-দোয়ানিয়ার নবনির্মিত সেতু পেরিয়ে হুজ্জুতির ঘাট। ভাড়া ২৫০ টাকা। তারপর খেয়াতে চেনাই নদী পেরিয়ে ওপারে মৌসুনী ঘাট। ভাড়া জনপ্রতি ৩ টাকা। ঘাট থেকে আবার টোটো করে সোজা ক্যাম্পের সামনে। ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা।
যেখানে ছিলাম: মৌসুনী এনজয়মেন্ট পার্ক। যার মালিক হলেন দীপক কুইলা। এখানে জনপ্রতি ৯০০ টাকা খরচে খাওয়া এবং তাবুতে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে।
Advertisement
এসইউ/এমএস