রাজনীতি

অনেকে গাঢাকা দিয়েছে, অনেকে নজরদারিতে : কাদের

চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও জুয়ার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের পর অনেকে গাঢাকা দিয়েছেন, আবার অনেকে নজরদারিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

Advertisement

সোমবার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কথা জানান।

চাঁদাবাজির সঙ্গে যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতাদের নাম এলেও তারা গ্রেফতার হচ্ছেন না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বলেন, ‘অ্যাকশনটা শুরু হলো এক সপ্তাহ হলো না, এক সপ্তাহের মধ্যে সব ব্যবস্থা হবে? সবকিছু যাচাই-বাছাই করে হবে। যারা অ্যারেস্ট হয়েছেন তারা কি কম অপরাধী? কাজেই এখানে কেউ পার পাবে না, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। শুরু হয়েছে কিছু কিছু বিষয় আছে, সরকার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দেখছে, খোঁজ-খবর নিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘অনেকে তো গাঢাকাও দিয়েছে, কাজেই এদের খুঁজে বের করতে হবে। অনেককে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। হয়তো অনেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে, খোঁজা হচ্ছে ছাড় দেয়া হবে না।’

Advertisement

সম্রাট গাঢাকা দিয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সেটা জানি না, কে গাঢাকা দিয়েছে। পুলিশের কর্তৃপক্ষ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তারা অনেককে খুঁজছেন, যারা গাঢাকা দিয়েছেন, ধরা পড়বেই, কোথায় যাবে, অপরাধ করে তারা কোথায় যাবেন?’

মন্ত্রী বলেন, ‘এসব বিষয় এতদিন অন্ধকারে ছিল, পুলিশ কেন দেখেনি, নেতারা কেন দেখেনি। নেতাদের দেখানোর জন্য তো সাংবাদিকরা আছেন। আপনারা ক্যাসিনো সাম্র্রাজ্যের অনুসন্ধানী রিপোর্ট তো কেউ করেননি। আমাদের তো দেখিয়ে দেবেন আপনারা, সাংবাদিকরাই চোখ খুলে দেবেন। আপনাদের রিপোর্ট দেখে আমরা অনেক ব্যবস্থা নিয়েছি, মিডিয়াকে স্বীকার করতে হবে আপনাদেরও এটা কাজ, বেটার লেট দ্যান নেভার।’

‘আমরা কাজটি সিরিয়াসলি শুরু করেছি এবং আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, বিদেশে যাওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বিমানবন্দরে কথা হয়েছে। সবার সামনে তিনি বলেছেন, অপরাধী যত বড়ই হোন, যারা মাদক, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত তাদের পরিচয় নেই, তারা সরকারি দলের হলেও কাউকে ছাড় দেয়া হবে না, এ ব্যাপারে যেন কোনো আপস না হয়। আমি (প্রধানমন্ত্রী) অনুপস্থিত থাকলেও যেন যা শুরু করেছি তা কনটিনিউ হয়।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অপরাধ, অপকর্মের বিরুদ্ধে দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতির চক্র ভেঙে দিতে হবে। এটা প্রধামন্ত্রীর স্পষ্ট উচ্চারণ।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘এখানে কারো সঙ্গে কোন আপস বা ছাড় দেয়ার প্রশ্ন নেই, শুরু হয়েছে দেখুন- ওয়েট অ্যান্ড সি, কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। মফস্বলে অনেকে অ্যারেস্ট হচ্ছে, জেলা পর্যায়েও অনেকে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে, যারা এসব অপকর্মের সাথে জড়িত। এখানে মুখের কথা নয় আমরা মিন করছি, শেখ হাসিনা মিন করছেন, তাই ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। এ অভিযান চলবে যতদিন না দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি ও মাদকের চক্রকে ভেঙে দিতে না পারবো।’

অভিযানের বিষয়ে সামনে কোনো বড় ধরনের চমক রয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি চমক বলতে চাই না। ক্রিমিনাল অফেন্স যারাই করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এটাকে দেখতে চাই অপরাধ, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে।’

যুবলীগের চেয়ারম্যানের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কে কী বলল সেটা বিষয় নয়, বিষয়টি হচ্ছে দুর্বৃত্তায়ন-দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অপারেশন শুরু হয়েছে, এটা অব্যাহত থাকবে। আগে পরে কেউ অপরাধ করে পার পাবে না।’

তৃণমূল পর্যায়ে দল পাল্টে আওয়ামী লীগে এসে নেতা হয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অনেকের আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে- এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি এ কথা কখনোই বলবো না যে অমুকের ব্যাকগ্রাউন্ড অমুক দল, তমুক দল। এখন তারা অপরাধী, দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী হিসেবে ধরা পড়ছে আওয়ামী লীগ বা এর কোনো সহযোগী সংগঠনের পরিচয়ে। আমরা এটাকেই দেখব, সে আরেক দল করে আরেক দলের লোককে আমি নিলাম কেন? এখন যখন আমাদের দলের পরিচয়ে অপরাধ করছে আমার দলের লোক হিসেবে তাকে শাস্তি দিচ্ছি।’

বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিযানের জন্য জনগণের কাছে সরকারের ইমেজ অনেক বেড়ে গেছে জানিয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোনো অবস্থায়ই আমাদের উন্নয়ন অর্জনকে খারাপ লোকের খারাপ আচরণের কাছে জিম্মি হতে দেব না, ম্লান হতে দেব না। এটা হচ্ছে সরকারের দৃঢ় মনোভাব।’

দুর্নীতি, জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য বিএনপির উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো। সেটা না করে তারা উল্টো সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের।

আরএমএম/এনএফ/এমকেএইচ