জাতীয়

ঢাকার ‘লাস ভেগাস’ ভিক্টোরিয়া ক্লাব

কোথাও সুন্দরী তরুণী তাস বিছিয়ে দিচ্ছেন। কোথাও টেবিলের ওপর থরে থরে সাজানো ক্যাসিনোর কয়েন, তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন সুন্দরী নারী। কোথাও উল্লাস করছেন ‘চিয়ার্স গার্ল’। এমন অসংখ্য ছবি দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে রাজধানীর ভিক্টোরিয়া ক্লাব। ভেতরে ঢুকে চোখ বোলালেই যেন মনে হবে জুয়ার স্বর্গরাজ্য লাস ভেগাস।

Advertisement

রোববার দুপুরে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে চলা অভিযান শেষে ক্লাবটিতে ঢুকে এমন দৃশ্য দেখা যায়। ক্লাবের দৃশ্য দেখে ডিসি আনোয়ার বলেন, ‘এখানে যে নিয়মিত জুয়া চলত তা সহজেই বোঝা যায়।’

অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর বিরুদ্ধে গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম অভিযানে নামে র‌্যাব। অভিযানে একের পর এক ক্লাবে জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর প্রমাণ বেরিয়ে আসে। র‌্যাব অভিযানে নামার চারদিনের মাথায় রোববার অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করল পুলিশ।

রাজধানীর অফিসপাড়া হিসেবে পরিচিত মতিঝিলের আরামবাগ ক্রীড়াসংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে পুলিশের প্রথম এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে চারটি ক্লাব থেকেই জুয়া ও ক্যাসিনোর সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

তবে ব্যতিক্রম ছিল ভিক্টোরিয়া ক্লাব। অন্য ক্লাবগুলোতে জুয়া ও ক্যাসিনো চললেও ‘লাস ভেগাস’র আদলে সুন্দরী নারীদের ছবি দিয়ে সাজানো থাকার দৃশ্য দেখা যায়নি। কিন্তু ভিক্টোরিয়া ক্লাবের ভেতরের পুরোটাই সুন্দরী নারীদের পাশাপাশি জুয়ার ছবি দিয়ে সাজানো।

ভিক্টোরিয়া ক্লাবের দৃশ্য দেখে এক পুলিশ সদস্য বলেন, লাস ভেগাসে কখনও যাওয়া হয়নি। টেলিভিশনে ক্যাসিনো ও জুয়া খেলার দৃশ্য দেখেছি। এই ক্লাবের ভেতরে ঢুকে টেলিভিশনের দৃশ্য বারবার চোখে ভেসে উঠছে। এ যেন পুরাই লাস ভেগাস। এভাবে জুয়ার ছবি দিয়ে ক্লাবের সর্বত্র সাজানো থাকবে, কল্পনাও করতে পারিনি।

মতিঝিলে বেসরকারি একটি অফিসে চাকরি করা রকিবুল ইসলাম বলেন, উৎসাহের বসে পুলিশের অভিযানের সময় ভিক্টোরিয়া ক্লাবের ভেতর ঢুকে পড়ি। ভেতরের দৃশ্য দেখে তো অবাক হয়েছি। ক্লাবের সর্বত্রই জুয়ার সামগ্রী। এখানে যে জুয়া ছাড়া অন্য কোনো খেলা হয় না, তা যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবে।

ভিক্টোরিয়া ক্লাবের গেট দিয়ে প্রবেশ করে চোখে পড়ে টেবিলের ওপর থরে থরে সাজানো তাস। খোলা তাসের পাশাপাশি রয়েছে প্যাকেট করা তাসের অসংখ্য বান্ডিল। এর মধ্যেই রয়েছে একটি মদের বোতল। তার পাশের একটি টেবিলে রয়েছে ক্যাসিনোর কয়েন। ক্লাবের ভেতরের প্রতিটি ওয়ালে ঝুলছে জুয়ার সামগ্রীর সঙ্গে সুন্দরী নারীদের ছবি। একেবারে পশ্চিম দিকে রয়েছে ক্যাশ কাউন্টার। তার পাশেই রয়েছে একটি বাথরুম। এই বাথরুমটির অ্যাডজাস্ট ফ্যান খুলে ফেলে রাখা রয়েছে।

Advertisement

ক্লাবটিতে অভিযান চালিয়ে ডিসি আনোয়ার বলেন, আমরা অভিযান করে নগদ এক লাখ টাকা, মদের বোতল, ক্যাসিনো ও জুয়া খেলার সরঞ্জাম পেয়েছি। ক্লাবের ভেতরের পরিবেশ দেখে এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এখানে নিয়মিত ক্যাসিনো বসত।

কেউ গ্রেফতার হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরেই যেহেতু অভিযান চলছে; তাই সবাই গাঢাকা দিয়েছে। ফলে কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

ক্লাবের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ক্লাবের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরএম/এমএএস/বিএ/জেআইএম