দেশজুড়ে

জি কে শামীমের গ্রামেও আলিশান বাড়ি

গুলশানের নিকেতনের কার্যালয় থেকে বিপুল অস্ত্র-মাদক ও কোটি টাকাসহ আটক হওয়া নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার জি কে শামীম শত শত কোটি টাকার মালিক। অথচ জানেন না প্রতিবেশীসহ তার আত্মীয়-স্বজনরা।

Advertisement

জি কে শামীম ঢাকায় ব্যবসা করে টাকা কামায় সেটা জানলেও তিনি এত টাকার মালিক কীভাবে হলেন সেটা ভেবে কূল পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। কোনো শিল্প কারখানা নেই, বড় ধরনের কোনো কোম্পানি নেই, শুধুমাত্র টেন্ডারবাজি করে শত শত কোটি টাকার মালিক কীভাবে হলেন সেই প্রশ্ন এখন এলাকার মানুষের মুখে মুখে।

রোববার সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের চর বলুয়া এলাকায় যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের বাড়িতে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

ওই ইউনিয়নের চর বলুয়া সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফসার উদ্দিনের তিন ছেলে, চার মেয়ে। এদের মধ্যে বড় মেয়ে লুৎফুনেছা মারা যায়। বাকি তিন মেয়ে বেলি, গোলাপী ও ইমামী সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তিন ছেলে হলো, গোলাম হাফিজ নাসির, জিকে শামীম ও হোসাইন।

Advertisement

এদিকে জিকে শামীমের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাবা মৃত মো. আফসার উদ্দিন উপজেলার হরহরদী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি প্রায় ৪ বছর পূর্বে মারা গেছেন। আর বাবার স্মৃতি ধরে রাখতে পৈতৃক সম্পত্তি ৫/৬ শতাংশ জায়গার উপর করা প্রায় ২/৩ কোটি টাকা ব্যয় করে তিন তলা ভবন করলেও বাড়িতে কেউ থাকে না। তবে বাড়িটিতে দামি দামি আসবাবপত্র রয়েছে। বাড়িতে বিশাল বৈঠকখানা রয়েছে।

বাড়িতে মাঝে মধ্যে এলে অচেনা লোকদের নিয়ে বৈঠক খানায় সময় দিতো। আর এত টাকা খরচ করে তিনতলা বিল্ডিং করলেও বাড়িতে শুধুমাত্র একজন কেয়ারটেকার থেকে বাড়িটি দেখা-শোনা করে। কিন্তু জি কে শামীম ঢাকায় আটক হওয়ার পর টিভিতে সংবাদ দেখে বাড়ির মূলফটকে তালা লাগিয়ে কেয়ারটেকারও আত্মগোপনে চলে গেছে। তবে শামীমের বাড়ির পাশের চায়ের দোকানগুলোতে টেলিভিশনের সংবাদ দেখার জন্য বেশির ভাগ সময় এলাকার লোকজন ভিড় জমায়।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জি কে শামীম ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। প্রাইমারি কেটেছে বাবার স্কুলে। এরপর সোনারগাঁ বারদী আলিয়া মাদরাসা থেকে এসএসসি (দাখিল) পাস করেন। এরপর উপজেলার পঞ্চমীঘাট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। ১৯৮৮ সালে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে সোনারগাঁ ত্যাগ করে ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় গিয়ে প্রথমে একটি মেসে উঠেন শামীম। সেখান থেকে তার বড় ভাই গোলাম হাফিজ নাসিরের মাধ্যমে ঠিকাদারির একটি লাইসেন্স করেন। একপর্যায়ে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। প্রথমে বিএনপির রাজনীতি করতেন। ওই সময় জি কে শামীম ঢাকা থেকে বিএনপির বড় বড় নেতাদের নিয়ে আসতো সোনারগাঁয়ে।

জি কে শামীম শুধুমাত্র ঈদের সময় গ্রামের বাড়িতে আসেন। দিনের বেলা এসে রাতেই ঢাকায় চলে যেতেন। অনেক দামি দামি গাড়ি নিয়ে আসেন যান তিনি। তার সিকিউরিটির জন্য সঙ্গে কয়েকজন গানম্যানও থাকতো। যখন গ্রামের বাড়িতে আসতো তখন জি কে শামীমের সঙ্গে এলাকার নিরীহ লোকজন পিছু ছুটে। জি কে শামীমের চলাফেরায় মনে হয় তিনি একজন নেতা।

Advertisement

শামীমের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়া বিলের উপর দিয়ে সরকারিভাবে একটি নতুন রাস্তা করা হলে সেই রাস্তাটি নিজের বাবার নামে নামকরণ করলে রাস্তাটি পাকা করার প্রস্তাব দিলেও স্থানীয় চেয়ারম্যান তা মেনে নেননি। জি কে শামীমের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের সখ্যতা থাকলেও নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত হননি।

সনমান্দি ইউনিয়নের চর বলুয়া এলাকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চা দোকানদার বলেন, বাবার রেখে যাওয়া ১০ কানি (৩০০ শতাংশ) জমি ছাড়া এখানে আর তাদের কোনো সম্পত্তি নেই। শামীম ঢাকায় ব্যবসা করে সেটা আমরা জানি। কিন্তু কীভাবে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে তা বিশ্বাস হচ্ছে না। এত টাকার মালিক হলেও এলাকার জন্য তেমন কিছুই করেনি। এলাকায় আসলে কিছু গরিব মানুষকে একটু সাহায্য সহযোগিতা করলেও এলাকার কাউকে কোনো ধরনের সুযোগ সুবিধা করে দেয়নি। ব্যবসা করে কীভাবে এত টাকার মালিক হলো বুঝতে পারছি না। আলাদিনের চেরাগ পাইলো নাকি?

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফজলুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা যতটুকু জানতাম শামীম ঢাকায় বসবাস করে ঠিকাদারী ব্যবসা করে। তারা বহু আগেই এলাকা ছেড়ে ঢাকায় বসবাস করে। আর যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সে। কিন্তু টিভিতে যখন দেখি জি কে শামীম কোটি কোটি টাকা নিয়ে আটক হয়েছে। তারপর দেখি শামীমের সব তথ্য বের করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে আমরা যতটুকু উনাকে চিনি উনি ব্যক্তি হিসেবে খারাপ না। এলাকার সবাইকে সম্মান দিতো এবং মুরুব্বীদের সম্মান দিয়ে কথা বলতো।

শাহাদাত হোসেন/এমএএস/পিআর