বাসের ধাক্কায় বাম পা হারিয়েছেন রাজশাহীর দুর্গাপুরের ভ্যানচালক সুলতান মোল্লা (৪০)। কিন্তু দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ নেই তার পা হারানোর বিষয়টি।
Advertisement
১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে নগরীর বিনোদপুর এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন সুলতান। কিন্তু এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯ সেপ্টেম্বর ১টা ৩৫ ঘটিকায় ঘটেছে
নগরীর মতিহার থানায় রেকর্ড মামলাটির বাদী করা হয়েছে দুর্ঘটনার শিকার সুলতান মোল্লাকে। কিন্তু পা হারানো ওই ভ্যানচালক দুর্ঘটনার দিন থেকে ভর্তি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এখনও হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন সুলতান। তার দাবি, সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে পুলিশ নিজেই এজাহার তৈরি করেছে। হাসপাতালে গিয়ে পুলিশ সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে এসেছে। তিনি থানায় যাননি।
Advertisement
সুলতান মোল্লা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার পালি এলাকার ঝড়ু মোল্লার ছেলে। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন সুলতান। তার একমাত্র ছেলে শিহাব মোল্লা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। একমাত্র মেয়ে সুমনা খাতুনের বয়স এখন পাঁচ বছর। পঙ্গু সুলতান সংসার আর ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায়।
সুলতানের স্ত্রী রিনা খাতুন জানান, তার স্বামী দুর্গাপুরের একটি খামার থেকে ডিম নিয়ে রাজশাহী নগরীর আরডিএ মার্কেটে পৌঁছে। সেদিন সকালেও তিনিডিমের ভ্যান নিয়ে রওনা হন। পথে দুর্ঘটনায় পড়ে বাম পা উরু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে তার। সুলতানের চিকিৎসার তদারকি করছেন তার শ্যালক আল আমিন।
তিনি বলেন, অস্ত্রোপচারের সময় চার ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। গত বৃৃস্পতিবার আরও এক ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। ডিম বিক্রি করা ছাড়া সুলতানের আয়ের আর কোনো উৎস নেই। এখন পর্যন্ত কোথাও থেকে তারা কোনো সহযোগিতা পাননি। এমনকি যে গাড়ির ধাক্কায় সুলতানের পা কাটা গেছে সেই গাড়ির লোকজনও কোনো খোঁজ নেননি।
সুলতানের বড় ভাই আবদুল হান্নান জানান, তার ভাইয়ের স্ত্রী রিনা বেগম শুধু নাম স্বাক্ষর করতে পারে। তিনি লেখাপড়া জানেন না। তাকে মামলার বাদী করা হয়েছে। রিনা বেগম তার স্বামীকে নিয়েই হাসপাতালে ব্যস্ত রয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত প্রায় আড়াইটার দিকে নগরের মতিহার থানা পুলিশের এসআই সিদ্দিক হাসপাতালে গিয়ে মামলা করার জন্য রিনা বেগমকে ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে জোর করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নিয়ে আসেন।
Advertisement
তাতে উর্মি পরিবহন নামের একটি বেপরোয়া গতির বাসের ধাক্কায় তার ভাই সুলতান মোল্লার ৫ হাজার ৪০০ ডিম ও ভ্যানগাড়ি ভেঙে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হলেও তার ভাইয়ে বাম পা উরু থেকে কেটে বাদ দিতে হয়েছে সেটি উল্লেখ করা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে বাসের ধাক্কায় সুলতানের পা গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়েছে।
রাজশাহী নগরের মতিহার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনার যে ধারা মামলায় তাই ব্যবহার করা হয়েছে। পা কেটে ফেলে দিলেও যে ধারা গুরুত্বর রক্তাক্ত জখম হলেও সেই ধারা।
তিনি বলেন, দুই পক্ষই এটা মীমাংসার চেষ্টা করছেন। হাসপাতালে গিয়ে পুলিশের সাদা কাগজে সই নিয়ে এসে নিজের মতো এজাহার সাজানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে ওসি কোনো মন্তব্য করেননি।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ফেরদৌস জানান, সুলতানের অবস্থা গুরুতর। তার বাম পা উরু থেকে কেটে বাদ দিতে হয়েছে।
ফেরদৌস/এমএএস/পিআর