গত ১৫ জুলাই থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের ন্যায় রাজশাহীতেও চলছে রেজিস্ট্রেশন ও বৈধ কাগজ বিহীন মোটরসাইকেল আটক অভিযান। প্রায় প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হচ্ছে পুলিশ চেকপোস্ট। মহানগরীর ৪টি থানা, ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ ও মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবলদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে একটি বিশেষ টিম। তারা প্রতিনিয়ত রেজিস্ট্রেশন বিহীন ও বৈধ কাগজ বিহীন মোটরসাইকেল আটক করে এলাকা ভিত্তিক থানা বা ট্রাফিক অফিসে পাঠিয়ে দিচ্ছে। বাদ পড়ছে না আরএমপির ঘনিষ্ট জনসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় কর্মরত ব্যক্তি ও দলীয় পরিচয়ধারী ব্যাক্তিদের মোটরসাইকেল। শুধু তাই নয় এ বিষয়ে কোনো ধরনের তদবির শুনছেন না আরএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম ঠেকাতে আরএমপির পক্ষ থেকে নেয়া হবে আরো শক্তিশালী পদক্ষেপ। এদিকে, রাজশাহী মহানগরী বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের মোটরসাইকেল আটক অভিযান শুরুর পর থেকে শহরে রেজিস্ট্রেশন বিহীন মোটরসাইকেলের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এর সঙ্গে কমে গেছে মোটরসাইকেল নিয়ে সংঘটিত বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম। কারণ ভুয়া নম্বর প্লেট ও রেজিস্ট্রেশন বিহীন মোটরসাইকেলে করে শহরের বিভিন্ন এলাকার মাদকাসক্ত যুবকের ছিনতাই, মারামারি, মাদক ও অস্ত্র বহনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ চালিয়ে আসছিলো। ফলে শহরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছিল। আরএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের পরও কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছিল না অপরাধমূলক কার্যক্রম। কারণ শহরের বিভিন্ন এলাকার ভদ্র পরিবারের যুবকরা মাদকের টাকা যোগান দিতে মাথায় বিভিন্ন রঙয়ের হেলমেট আর দামি মোটরসাইকেল নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছিল অপরাধমূলক কার্যক্রম। অনুসন্ধান ও আরএমপি সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রমের ৮০ ভাগই পরিচালিত হয় ভুয়া নম্বর প্লেট ও রেজিস্ট্রেশন বিহীন মোটরসাইকেল দিয়ে। মোটরসাইকেল অপরাধমূলক কাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ছিনতাই, হামলা ও মাদক বহনের কাজে। আর তাই ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল বা তার চালকের সন্ধান বের করতে পুলিশ সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। ফলে অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা সব সময় থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাঝে মধ্যে শহরের বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা অভিযান চালিয়ে গুটি কয়েক ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও আইনের ফাঁক দিয়ে তারা জামিনে বের হয়ে যায়। ফলে শহরের ছিনতাই, হামলা ও মাদক বহনের কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির হদিস বের করা সম্ভব হয় না। ইতোপূর্বে রাজশাহীতে ঘটে যাওয়া সরকার বিরোধী অন্দোলনে সবকটি হামলা চালানো হয়েছে মোটরসাইকেলে চড়ে। এসময় মোটরসাইকেলে করেই শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ককটেল ও পেট্রলবোমা হামলাগুলো মোটরসাইকেলে চড়েই চালানো হয়েছিল। কিন্তু হামলা পরবর্তী সময়ে মোটরসাইকেলসহ হামলাকারীদের সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। আরএমপির একটি সূত্র জানায়, গত একমাস ধরে চলমান রেজিস্ট্রেশন বিহীন মোটরসাইকেল আটক অভিযানে নগরীর চারটি থানা, গোয়েন্দা শাখা ও ট্রাফিক শাখার যৌথ অভিযানে মোট ৮৩২টি মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে। এগুলোর একটিরও রেজিস্ট্রেশন করা নেই। তাদের দেয়া তথ্যমতে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় আটক রয়েছে ১৭৫টি, রাজপাড়া থানায় আটক রয়েছে ১৩৫টি, মতিহার থানায় আটক রয়েছে ১৫৫টি, শাহমুখদুম থানায় আটক রয়েছে ৭৯টি, গোয়েন্দা শাখায় আটক রয়েছে ৫০টি ও ট্রাফিক বিভাগে আটক রয়েছে ২৩৮টি মোটরসাইকেল। আর আসন্ন ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে মোটরসাইকেল আটক অভিযান ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ চেক পোস্ট বসিয়ে নজরদারি বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। এ ব্যাপারে আরএমপির (মুখপাত্র) ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম জাগো নিউজকে জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গত এক মাস থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে রেজেস্ট্রেশন বিহীন মোটরসাইকেল আটক করা হচ্ছে। পরে মোটরসাইকেলের মালিক রাজশাহী বিআরটিএ অফিসে রেজিস্ট্রেশনের টাকা জমা দিয়ে তার রশিদ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেখালে সেটি তার মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। শাহরিয়ার অনতু/এমজেড/এমএস
Advertisement