দেশজুড়ে

জয়পুরহাট সীমান্তে বিএসএফের হামলায় জনমনে আতঙ্ক

জয়পুরহাট সদর উপজেলার পশ্চিম রামকৃষ্ণপুর সীমান্তে গত শুক্রবার দুপুরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের এলোপাতারি গুলি বর্ষণের ঘটনায় একজন নিহত ও চার বাংলাদেশি গ্রামবাসী আহতের ঘটনায় ওই এলাকাজুড়ে এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। জনজীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসলেও আতঙ্ক কাটেনি এখনো।সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, পশ্চিম রামকৃষ্ণপুর গ্রামের কয়েকজন দরিদ্র মানুষ শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশ-ভারতের দো-সীমানার মধ্যে অবস্থিত পশ্চিম রামকৃষ্ণপুর গ্রামের পাশ্ববর্তী দূগড় নামক এলাকার খালে মাছ ধরতে যান। এ অবস্থায় বিএসএফ ও মাছ ধরতে যাওয়া কয়েকজন গ্রামবাসীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।এই ঘটনার জের ধরে ২৫/৩০ জনের বিএসএফের একটি দল বাংলাদেশ সীমানার ৪০০ গজ ভেতরে ঢুকে ওই গ্রামে হামলা চালায়। তাদের এলোপাতারি গুলিতে পাঁচজন নিরীহ গ্রামবাসী আহত হন। আহতদের জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে সায়েম আলী নামে এক ব্যক্তিকে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থান্তান্তর করা হলে সেখানে তিনি মারা যান।পশ্চিম রামকৃষ্ণপুর গ্রামে নিহত হত দরিদ্র সায়েম আলীর বাড়িতে এখন চলছে হাহাকার। সায়েমের বিধবা মা হাসিনা খাতুন ও স্ত্রী রাশিদা বেগমের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে ওই গ্রামের আকাশ-বাতাস। অষ্টম শ্রেণির ছেলে ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ের বুক ফাটা আর্তনাদে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি উপস্থিত দশ গ্রামের মানুষ। ছেলে-মেয়ে দু’টির লেখাপড়াসহ অসহায় পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তা দিতে সরকার ও বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।এ ঘটনার পর থেকে ওই সীমান্ত এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতঙ্কিত গ্রামবাসীদের অনেকেই গ্রাম ছেড়ে গেলেও শনিবার সকাল থেকে তারা গ্রামে ফিরতে শুরু করেন। এই গ্রামের বাসিন্দা তাহেরা বেগম, হাজেরা খাতুন, একরামুলসহ এলাকাবাসীরা জানান, বিএসএফের হামলা শুধু শনিবারেই নয়, এর আগেও দফায় দফায় তারা হামলা চালিয়েছে।এই সীমান্তের বেশ কিছু এলাকায় এখনো কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় ও স্থায়ী বিজিবি ক্যাম্প না হওয়ায় যখন-তখন বিএসএফ বাংলাদেশ সীমানায় ঢুকে নিরীহ গ্রামবাসীদের মারধর করে। স্থানীয় ধলাহার ইউপি সদস্য ও পশ্চিম রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বিএসএফের তাণ্ডবের বর্ণনা দিয়ে বলেন, বিএসএফ দু’দিক থেকে গ্রামে ঢুকে এলোপাতারি গুলি করা ছাড়াও নিরীহ গ্রামবাসীদের বেধড়ক পেটাতে থাকে। তাদের গুলি বর্ষণে হতাহত ছাড়াও সেই নারকীয় অত্যাচারে গ্রামবাসীদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে।নিহতের পাবিরারিক সূত্র ও স্থানীয় ধলাহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, জয়পুরহাট সদর উপজেলাধীন আমার ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামসহ এই সীমান্তের বেশ কিছু এলাকায় এখনো কাঁটাতার না থাকায় এলাকার গ্রামবাসীরা নিরাপত্তাহীনতায় থাকেন। এছাড়া এই এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো নয়। বর্ষা মৌসুমে কাঁচা রাস্তা-ঘাট কর্দমাক্ত থাকে। ফলে বিজিবির যানবাহন টহল দিতে হিমশিম খায়।এই অবস্থায় পশ্চিম রামকৃষ্ণপুর সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদার করা ছাড়াও স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন, বিজিবির উত্তর-পশ্চিম রিজিওন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার মাহফুজুর রহমান, সেক্টর কমান্ডার কর্নেল খালেকুজ্জামান, বিজিবি গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক লে. কর্নেল জায়গীরদার, জয়পুরহাট-৩ বিজিবি অধিনায়ক আব্দুর রাজ্জাক তরফদার, অফস অফিসার মেজর ইমাম রুমীসহ বিভিন্ন স্তরের বিজিবি সদস্যরা।এ ছাড়া শনিবার দুপুরে বিজিবির আয়োজনে আক্রান্ত গ্রামে সচেতনতামূলক সভাও করা হয়। আলোচনা সভায় বিজিবি কর্মকর্তাগণ এলাকাবাসীদের নিরাপত্তার জন্য আশ্বস্ত করেন। এছাড়া ভারতীয় সীমান্তে টহলরত বিএসএফ সদস্যদের উত্যক্ত না করার পাশপাশি সীমান্ত অতিক্রম না করতে স্থানীয় জনসাধারণকে পরামর্শ দেন।জয়পুরহাট-৩ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুর রাজ্জাক তরফদার জানান, ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় সীমান্তজুড়ে বিজিবি টহল বৃদ্ধি করাসহ বিজিবি সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।রাশেদুজ্জামান/বিএ

Advertisement