পদ্মা নদী আগ্রাসী রূপ নেয়ায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত দ্বীপচর জনবিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল চরজানাজাত ইউনিয়নের অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে পড়েছে। এক সপ্তাহের ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে তিনটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং অন্তত সাড়ে তিনশ ঘরবাড়ি। এতে করে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ভাঙন কবলিতরা যে জমিগুলোতে কোনোমতে আশ্রয় নিয়েছেন সেখানে হানা দিয়েছে বন্যার পানি। অসহায় কয়েক হাজার মানুষের মাঝে ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে।এলাকাবাসী জানান, পদ্মা নদীর জন-বিচ্ছিন্ন দ্বীপচর চরজানাজাতে নদী ভাঙনের খেলা অনেক পুরনো। সর্বশেষ প্রায় ৪০ বছর আগে জেগে উঠা বৃহৎ এ চর নদী ভাঙনে আক্রান্ত হয় গত তিন বছর ধরে। গত দুই বছরে এ চরে অন্তত ১৫টি গ্রাম পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে প্রায় দেড় সহস্রাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়।চলতি বছর গত এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন ধরে পদ্মা নদী আগ্রাসি রূপ নেয়। এতে ২৪নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতল ভবন, ২৭নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন ও সংলগ্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ২৫নং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় তলা ভবনটি নদী থেকে মাত্র ২০ মিটার দূরত্বে অবস্থান করায় নিলাম দিয়ে অপসারণ শুরু হয়েছে। নদী ভাঙন এতটাই প্রকট যে স্কুল ভবন সরিয়েও নেয়া যাচ্ছে না। একদিকে ভাঙন অপরদিকে বন্যার পানির কারণে শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। এদিকে জনবসতিপূর্ণ এলাকার পরিণতি আরো ভয়াবহ।এক সপ্তাহে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অন্তত সাড়ে তিনশ ঘরবাড়ি ও কয়েকশ একর জমি। নদী ভাঙন আক্রান্তরা কোনোমতে চরের যে সকল স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন সেখানেও বন্যার পানি ঢুকে গেছে। খাবার, বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে চরজুড়ে।নদী ভাঙন ও বন্যায় আক্রান্তরা তুলে ধরেন তাদের নিদারূণ দুর্ভোগের চিত্র। শিক্ষার্থীরা জানান, লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। তবে অসহায় মানুষগুলোর দুর্ভোগ লাঘবে ত্রাণ তৎপরতা জরুরি ভিত্তিতে শুরুর তাগাদা দিয়েছেন অসহায় মানুষগুলো। বন্যার পানিতে ঘরবাড়িসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেছে। স্কুল ভেঙে নদীগর্ভে চলে গেছে। ঘরে খাবার নেই। নেই কোনো সরকারি সাহায্য। আশ্রয় জুটেছে রাস্তার উপর।চরজানাজাত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বজলুর রহমান সরকারের কাছে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণের আবেদন জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান আহমেদ জাগো নিউজকে জানান, বন্যা কবলিত ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বন্যার শুরুতেই চাল, ডাল নগদ টাকাসহ সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। আরো সাহায্য দেয়ার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরি আবেদন জানিয়েছি।মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কামাল উদ্দিন বিশ্বাস জাগো নিউজকে জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ দেয়া হয়েছে। আরো ত্রাণ দেয়া হবে।এ কে এম নাসিরুল হক/এমজেড/বিএ
Advertisement