জাতীয়

ক্যাসিনোর খবর নিতে গিয়েছিলাম, পুলিশ বলল, ‘দৌড়ে পালা’

সম্ভবত আড়াই বছর আগের কথা। মতিঝিলের ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে সবে ক্যাসিনোর আসর বসেছে। তার কিছু দিন আগে পাশেই ভিক্টোরিয়া ক্লাবে শুরু হয়েছে ক্যাসিনোর রমরমা ব্যবসা। শুরু হলো অন্যান্য ক্লাবেও।

Advertisement

ওয়ান্ডারার্স ক্লাব আর মতিঝিল থানা প্রায় পাশাপাশি। থানা গেটের লাইট এসে আলোকিত করে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের গেটও। গেটের সামনেই রাস্তার ওপর একটি দরগা। লালসালু কাপড়ে মোড়ানো। তার পাশেই বেঞ্চ পাতা। চেয়ারও গুটিকয়েক। তাতে পুলিশ আর ক্লাবের লোকেরা ভাগাভাগি করে বসা। সন্ধ্যা থেকে শেষ রাত পর্যন্ত রোজ এভাবেই বসেন তারা।

ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের এক জুয়াড়ির সঙ্গে সখ্যতা বাউলগানের আসর থেকে। তার পরিচয় ধরেই মাঝে মাঝে ক্লাবে যাওয়া। ক্যাসিনো বসার আগে নানা পদের জুয়াড় আসর বসত সেখানে। বিশেষ করে ওয়ানটেন খেলা নিয়েই বেশি আগ্রহ সবার। অথচ সেই জায়গায়ই ক্যাসিনোর ডেক্স বসানো হলো।

তখনও নেপালি মেয়েরা আসেনি ক্যাসিনোতে। শুরুটা করে নেপালি পুরুষ জুয়াড়িরা। তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষিত হচ্ছেন বাঙালিরা। ক্যাসিনো বসার পর থেকেই বদলে গেল ক্লাবের চেহারা। সব দেয়ালে নতুন রঙ। বাড়তি দেয়াল ভেঙে পরিসর বাড়ানো হলো। সংকুচিত হতে থাকল জুয়াড় অন্য আসরগুলো। মিলতে থাকল দেশি-বিদেশি মদও।

Advertisement

বলছিলাম আড়াই বছর আগে এক মধ্যরাতের কথা। বাংলাদেশে জুয়ার এই নতুন আসর ‘ক্যাসিনো’ নিয়ে নিউজ করব বলে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে যাওয়া। ক্লাব গেটের পাশেই মোটরসাইকেল গ্যারেজ। গেটে বসে থাকা অনেকেই পরিচিত। কুশল জানিয়েই সোজা ক্যাসিনো বোর্ডে চলে গেলাম। মোবাইল ক্যামেরায় গোপনে কয়েকটি ছবিও নেয়া হলো। এর মধ্যে মোবাইলের ফ্লাশ লাইটের বাটনে চাপ পড়ে গেলে বিপত্তি দেখা দেয়। দৌড়ে এসে একজন মোবাইল কেড়ে নিলেন। সাংবাদিক পরিচয় জেনেই চিৎকার শুরু করলেন। বাইরে থেকে আরও আট-দশ জন যুবক এসে ঘিরে ফেললেন। সবাই উদ্ধত। কেউ কেউ মারমুখী। এর মধ্যে মোবাইলে তোলা ছবি মুছে ফেললেন একজন।

ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনাকারী শহিদুল ইসলামের সহযোগী রেজাউল করিম এলেন বাইরে থেকে পুলিশ নিয়ে। পুলিশ আর যুবকরা মিলে আমাকে গেটের বাইরে নিয়ে এলেন। একজন বললেন, ‘তুই তো ছাও সাংবাদিক। পিটিয়ে পা ভেঙে দেব। কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না। জানিস! অনেক সম্পাদক এখান থেকে মাসোয়ারা পায়।’পাশের দেয়ালে সাঁটানো স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওসারের ছবি দেখিয়ে আরেকজন বললেন, ‘চিনিস তাকে? একদম শেষ করে দেবে’। পাশেই সাঁটানো ছিল যুবলীগ নেতা ইসলামই হোসেন সম্রাটের ছবিও। কয়েক মিনিটেই পরিস্থিতি বেসামাল। পুলিশ সাংবাদিকতার আইডি কার্ড চেক করতে চাইল। দেখালাম। বলল, ‘বাঁচার ইচ্ছা থাকলে দৌড়ে পালা।’ বললাম, ‘বাইক নিতে হবে।’ পুলিশ বলল, ‘সমস্যা নাই। আমরা পাহারা দেব। আগামীকাল অন্য কেউ এসে নিয়ে যেতে পারবে।’

পুলিশের আদেশ শিরোধার্য মনে করে চলে এলাম। পরে জানতে পাই, পাশের ঘরে থাকা পরিচিত বন্ধুর (জুয়াড়ি) ওপর হামলে পড়েছে শহিদুলের সহযোগীরা। মেরে রক্তাক্ত করল। অপরাধ ছিল সাংবাদিকদের সঙ্গে সখ্যতা থাকা।

এএসএস/এসআর/জেআইএম

Advertisement