ছাত্রলীগকে কমিশন দেয়ার অভিযোগ ওঠা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা ৪১ মিনিটে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কক্ষে প্রবেশ করেন উপাচার্য। প্রবেশ করার সময় এই সাক্ষাৎ পূর্বনির্ধারিত কি না, সাংবাদিকরা জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘এটা পূর্বনির্ধারিত।’
সাক্ষাৎ শেষে বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন ফারজানা ইসলাম। এ সময় অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি তিনি। সাংবাদিকরা জানতে চান, ‘ম্যাডাম, আপনার পদত্যাগের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা করেছেন?’ কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি।
উপাচার্যের সঙ্গে কী নিয়ে কথা হলো জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা একটা বিচ্ছিন্ন জিনিস। উনি আসছেন আমার কাছে, উনি মাঝে মাঝেই আসেন, আলাপ-আলোচনা হয়। সেজন্যই আসছেন উনি।’
Advertisement
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘উনি প্রায়শই আসেন, ফোন করেন। স্পেশাল ও নির্দিষ্ট কোনো বিষয় ছিল না।’
উনি পদত্যাগ করতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না, আমরা কিছু শুনিওনি।’
জাহাঙ্গীরনগরের অর্থ কেলেঙ্কারির বিষয়ে যা শোনা গেছে, সে বিষয়ে কোনো কথা হলো কি না-জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে আলাপ হবে কেন? অর্থ তো এখনো ডেসপাস হয়নি, এখনো কন্ট্রাক্ট শুরু হয়নি। এখনো কিছুই হয়নি। এখন অর্থ নিয়ে যে কাহিনি আমরা শুনতেছি, এগুলো আমার কাছে পদ্মা সেতুর মতো মনে হচ্ছে। কী হবে সেটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা। এগুলো নিয়ে উনিই (ভিসি) ভালো বলতে পারবেন। এগুলো নিয়ে আমার সঙ্গে আলাপ হয়নি।’
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ফারজানা ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম ধাপের ৪৫০ কোটি টাকার মধ্যে ২ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেয়া হয়- এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের এ অভিযোগ তদন্তসহ তিন দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু হয়।
Advertisement
ইতোমধ্যে কমিশন বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে পদত্যাগ করতে হয়েছে।
উপাচার্যের দাবি, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকে কোনো টাকা দেননি, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তার কাছে কমিশন চেয়েছেন।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের পক্ষ থেকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) দায়িত্ব দেয়া হবে। এজন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে ছাত্রলীগের পদ হারানো সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের ফাঁস হওয়া ফোনালাপে জানা যায়, আলোচিত এক কোটি টাকা শাখা ছাত্রলীগকে ‘ঈদ সালামি’ হিসেবে দিয়েছেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম।
অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলে জাবি ভিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আরএমএম/এসআর/এমকেএইচ